অ্যাডিলেডে ঝুম বৃষ্টি। অনুশীলন হয়নি, মাঠকে যাচাই করার সুযোগটাও মেলেনি। অথচ আজ বাদে কাল এই মাঠেই ভারতের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের আগে সংবাদ মাধ্যমের সামনে এসেছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
পরবর্তী ম্যাচের জন্য ভারতকেই দিয়েছেন ফেবারিটের তকমা। তবে কণ্ঠে ভেসেছে একটা আপসেট ঘটানোর সুর। সব মিলিয়ে মিনিট ২৫ এর সেই সংবাদ সম্মেলনে ভারত বধের নানা ছকের প্রসঙ্গ টেনেছেন সাকিব।
২০১৫ সালে এই অ্যাডিলেডেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সুখস্মৃতি কি এবার টেনে আনতে পারবে বাংলাদেশ? এমন প্রশ্নের উত্তরে সাকিব বলেন, ‘ঐ টিম থেকে বোধহয় আমি আর তাসকিন আছি। অবশ্যই সেটা ভাল মেমোরিজ। ভাল মেমোরি অনুপ্রেরণা জোগায়। আশা করি ঐ মেমোরিজ যেন আমাদের মেন্টালি একটু হেল্প করে।’
বেশ ক’বছর বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই উত্তপ্ত একটা পরিস্থিতি। ২০১৬ এশিয়া কাপ ফাইনাল, সেই একই বছরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রায় জেতা ম্যাচে বাংলাদেশের হার, অনুরূপ পরিস্থিতিরই আরেকটা ম্যাচ- নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল- সব মিলিয়ে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে বিগত বছরগুলোতে সব সময়ই প্রবল প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ছিল।
সেই ধারাবাহিকতা কিংবা লড়াইয়ের আভাস কি এবারও থাকবে? স্বল্পভাসী সাকিব অবশ্য এমন প্রশ্নের উত্তর দুই বাক্যেই শেষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এমন ম্যাচ হলে তো দর্শকদের জন্যও ভালো। শেষ ম্যাচটা দর্শকদের জন্য খুবই ভাল ম্যাচ ছিল। তাই আমরাও আশা করছি, তেমন একটা ম্যাচই উপহার দিতে পারব।’
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ আসলেই সারা বাংলাদেশেই এমন একটা আবহ সৃষ্টি হয় যে, বাংলাদেশ লড়াই করবে এবং দিনশেষে জিতবেও। বিশেষত, এই চিত্রটা গত ৫/৭ বছর ধরেই হয়ে আসছে। তো সমর্থকদের মধ্যে তৈরি হওয়া সেই হাইপটা সাকিবদের মধ্যেও কি তৈরি হয়? এমন প্রশ্নে সাকিব একদম অকপট। সোজা জানিয়ে দেন, নির্দিষ্ট কোনো দলকে টার্গেট করে তাঁর খেলতে নামে না। যেহেতু এটা বিশ্বকাপ, তাই ম্যাচ বাই ম্যাচ তারা একই এপ্রোচ নিয়ে খেলতে নামে।
শেষ ৩ ম্যাচে বাংলাদেশ ৬ ব্যাটারের নীতিই অনুসরণ করেছে। অথচ অন্য দেশের একাদশ গুলোতে দেখা যায়, তারা ৫ ব্যাটার নিয়েই খেলে। বরং তারা বোলিং অপশন বেশি রাখার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একাদশে দেখা গিয়েছে উল্টো। প্রায় সব ম্যাচেই ৫ম বোলারের অনুপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে। তো টিম ম্যানেজমেন্টের দলের কম্বিনেশন নিয়ে ভাবা উচিত কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে সাকিব বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আসলে এখনো চিন্তা করা হয়নি। চাইলেই কম্বিনেশনে পরিবর্তন আনা যায়। অনেক রকমই বানানো সম্ভব। তবে আমাদের যেমন রিসোর্স আছে তার মধ্যে থেকে বেস্টটা বের করার চেষ্টা করতে হবে।’
বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগে সাকিব বলেছিলেন, তাঁর দল এবারে বেস্ট ওয়ার্ল্ড কাপটা খেলতে চায়। এখন পর্যন্ত পাওয়া ২ ম্যাচ জয়ে আপাতত বিগত আসরের তুলনা এবারেরটাকে বেস্ট ওয়ার্ল্ডকাপ বলা যায়। তবে সাকিবরা কি এতটুকুতেই তৃপ্ত? সেমির স্বপ্নে কতটা আত্মবিশ্বাসী টিম টাইগার্স? এ নিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘আমরা দুই ম্যাচ জিতেছি। পরবর্তী দুই ম্যাচ যদি জিততে পারি তাহলে সেটা আপসেট হিসেবেই গণ্য হবে। আর আমরা সেই আপসেট টা ঘটাতে পারলেই খুশি।’
ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ চিরায়ত ভাবেই শক্তিশালী। তাদের বিপক্ষে কি সেই আগের এপ্রোচেই যাবে বাংলাদেশ? সাকিব সেটি খোলাসা করেননি। তবে বোলিং ঘাটতির অভিযোগ তিনি মানতে নারাজ। কারণ তাঁর মতে, মোসাদ্দেক ৪ ওভার বল করার মতোই বলার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ম্যাচে সে ৫ উইকেটও নিয়েছিল। আর ঘরোয়া ক্রিকেটেও মোসাদ্দেক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪ ওভারই বল করে।
এডিলেডের এ ম্যাচ দিয়েই এবারের আসরে প্রথম ডে নাইট ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। অথচ ভারত তাদের আগের তিনটি ম্যাচই খেলেছে এমন পরিস্থিতিতে। এতে তাদের আরেকটু সবিধা হলো কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তর সাকিব বলেন, ওরা এর আগেও অস্ট্রেলিয়াই খেলেছে। তাই এটি নিয়ে তেমন বলার কিছু নেই। মাঠে অবশ্যই আমাদের চেষ্টার কমতি থাকবে। আমরা শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করব।
হোবার্টের ঠান্ডা, ব্রিসবেনের গরম, এরপর আবার এডিলেডের ঠান্ডা। স্বল্প সময়ের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে খেলছে বাংলাদেশ। এটা কতটা কঠিন বাংলাদেশের জন্য? সাকিব নিজেও সেটা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশেষত সাব কন্টিনেন্টদের জন্য এ ধরনের আবহাওয়া পরিবর্তন বেশ খানিকটা কঠিন। তবে আমাদের অবশ্যই মানিয়ে নিতে হবে।’
বিগত বছরগুলোতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যাথার নাম ছিল বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মা। এবার সেই তালিকায় যোগ হতে পারেন সুরিয়াকুমার যাদব। বছরজুড়ে দুর্দান্ত ফর্ম রয়েছেন। সেই ফর্ম টেনে এনেছেন বিশ্বকাপেও। শেষ দুই ম্যাচে করেছেন দুই ফিফটি। তবে সুরিয়া এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মুখোমুখি হচ্ছেন। তাঁকে আটকানো কতটা কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্য। এ নিয়ে সাকিব বলেন, ‘শেষ এক বছরে সুরিয়া কুমারই সম্ভবত ওদের নাম্বার ওয়ান ব্যাটার। আর ওদের ফেনোমেনাল ব্যাটিং লাইনআপ। সব মিলিয়ে ম্যাচটা আমাদের জন্য কঠিন। তবে অসাধ্য নয়।’
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ে বাংলাদেশ একবারই মাত্র জয়ের স্বাদ পেয়েছে। সেই হিসেবে ভারতকে হারানো কতটা কঠিন বাংলাদেশের জন্য? সাকিব বলেন, তারা এই বিশ্বকাপের হট ফেবারিট দল। এখানে ওরা বিশ্বকাপ জিততে এসেছে। আমরা এখানে বিশ্বকাপ জিততে আসিনি। আমরা এই পরিস্থিতিটা বুঝি। আমরা যদি তাদের বিপক্ষ জিতি তাহলে এটা একটা আপসেট বলেই গণ্য হবে। আর আমরা সেই আপসেটটা ঘটানোর চেষ্টা করবো।
ভারতের এই দলটাই বেশিরভাগই ডানহাতি ব্যাটার। তো সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একাদশে বাঁহাতি কোনো স্পিনার ঢুকতে পারে কিনা? এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নে সাকিব বলেন, হ্যা অবশ্যই ভাল অপশন হতে পারে। তবে এখনো আমরা টিম প্ল্যানিং করিনি। তাই সেটা এই মুহূর্তে বলে দেওয়াটা কঠিন।
বেলা দুইটায় কাল অ্যাডিলেডে ভারতের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। দুই দলই তাদের খেলা তিন ম্যাচে সমান দুটিতে জিতেছে। তবে নেট রান রেটে ভারত এগিয়ে থাকায় ভারত আছে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে আর বাংলাদেশের অবস্থান এখন তিনে।