কোহলি যেখানে শচীনের চেয়ে এগিয়ে

রান কিংবা সেঞ্চুরি, যেটাই বলুন না কেন, বিরাট কোহলি এখনো শচীন টেন্ডুলকারের চেয়ে ঢের পিছিয়ে। কিন্তু শচীনকে ছাপিয়ে যেতে পারেন, এমন সম্ভাব্যতায় সবার আগে এই বিরাট কোহলির নামই আগে আসে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শচীনকে এরই মধ্যে ছাপিয়ে গিয়েছেন বিরাট কোহলি। সেই সব কীর্তি নিয়েই খেলা-৭১ এর আজকের আয়োজন। 

  • সফল রান চেজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে সেঞ্চুরি

শচীন টেন্ডুলকার তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে শতক হাঁকিয়েছেন ৪৯ টি। আর বিরাট কোহলির ক্ষেত্রে সে সংখ্যাটা ৪৩। তবে শচীনকে বিরাট কোহলি বেশ ভাল ব্যবধানেই পেছনে ফেলেছেন অন্য একটি জায়গায়। সফল রান চেজের ক্ষেত্রে শচীন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরি যেখানে ১৪ টি, সেখানে বিরাট কোহলির সেঞ্চুরি ২২ টি!

যা শুধু ভারতের মধ্যেই সর্বোচ্চ নয়, পুরো ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের মধ্যেই সফল রানচেজে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড। বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে বিরাট কোহলির পর সফল রানচেজে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করেছেন রোহিত শর্মা (১১ টি) 

  • এক টেস্টে সবচেয়ে বেশিবার ২০০+ রান

টেস্ট ক্যারিয়ারে শচীনের রান বিরাট কোহলির প্রায় দ্বিগুণ। এমনকি সেঞ্চুরি সংখ্যার দিক দিয়েও বেশ বড় ব্যবধানেই তিনি এগিয়ে আছেন। তবে একটি জায়গায় তিনি আবার পিছিয়ে আছেন। শচীনের চেয়ে এখন পর্যন্ত ৯৮ টি টেস্ট কম খেললেও টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার ২০০+ রান করেছেন বিরাট কোহলি।

ভারতের হয়ে মোট ১৩ বার তিনি এক টেস্টে দুইশোর বেশি রান করেছেন। শচীন টেন্ডুলকারের ক্ষেত্রে যে সংখ্যাটা ১০। শচীনের মত ভারতের কিংবদন্তী ব্যাটার রাহুল দ্রাবিড়ও এক টেস্টে দুইশোর বেশি রান করেছেন ১০ বার। 

  • টেস্টে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি

ক্যারিয়ারে খেলা ২০০ টেস্টের ৩২৯ ইনিংসে শচীন টেন্ডুলকারের ডাবল সেঞ্চুরি মোট ৬ টি। কিন্তু শচীনের এই ডাবল সেঞ্চুরির সংখ্যাকে বিরাট ছাপিয়ে গিয়েছিলেন নিজের ১৩৮ তম ইনিংসে।

২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৫৪ রানের ইনিংস খেলে নিজের সপ্তম ডাবলের দেখা পেয়েছিলেন কোহলি। অবশ্য বছর তিন পেরিয়ে গেলেও, ডাবল সেঞ্চুরির সংখ্যায় বিরাট কোহলি সেই সাতেই আটকে আছেন। 

  • সেনা কান্ট্রিতে জেতা ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ফিফটি

অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড- এই চার দেশকে বলা হয় ‘সেনা’ কান্ট্রি। তো সেখানে জয়ী ম্যাচগুলোতে শচীন টেন্ডুলকারের ফিফটি ২৭ টি। আর বিরাট কোহলি সেখানে ফিফটি করেছেন ৩১ টি। আর সেই সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ এখনও রয়েছে কোহলির।

  • সবচেয়ে বেশি অপরাজিত ইনিংস

শচীন, বিরাট-দুজনই টপ অর্ডার ব্যাটার। শচীন তাঁর দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে ৭৮২ টি ইনিংস খেলেছেন। আর বিরাট কোহলি এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৫৩১ টি ইনিংস। তবে সবচেয়ে বেশিবার অপরাজিত ইনিংস খেলায় এগিয়ে বিরাট কোহলি।

ভারতের হয়ে মোট ৮০ বার তিনি অপরাজিত থেকে ইনিংস শেষ করেছেন। আর শচীন টেন্ডুলকার অপরাজিত থেকেছেন ৭৪ বার। ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি ইনিংস অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা আবার মহেন্দ্র সিং ধোনির। তিনি মোট ১৪১ বার অপরাজিত থেকে ইনিংস শেষ করেছেন। 

  •  পাকিস্তানের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশিবার ম্যাচ সেরা 

ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথে এ দুই দেশের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বরাবরই বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।  আর এখানেই শচীনকে ছাপিয়ে গিয়েছেন বিরাট কোহলি। পাকিস্তানের বিপক্ষে শচীন যেখানে ৩ বার ম্যাচ সেরা হয়েছেন সেখানে বিরাট ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ৪ বার। 

এখন পর্যন্ত বিরাট কোহলির কিছু ক্ষেত্রে শচীনকে ছাপিয়ে যাওয়ার গল্প আপাতত এতটুকুই। তবে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা যায় আরও কিছু মাইলফলকে। টেস্টে বিরাট কোহলি এখন পর্যন্ত পেরিয়েছেন ৮ হাজার রান, আর ওয়ানডেতে করেছেন ১২ হাজারের বেশি রান। 

বিরাটের এই মাইলফলক বিবেচনায়, শচীন টেন্ডুলকার তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে আট হাজার রান পূরণ করেছিলেন ১৫৪ তম ইনিংসে। আর কোহলির ৮ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে লেগেছিল শচীনের চেয়ে ১৫ ইনিংস বেশি, ১৬৯ ইনিংস। তবে ওয়ানডে ফরম্যাট বিবেচনায় আবার এগিয়ে যান বিরাট কোহলি। শচীন যেখানে ৩০০ তম ইনিংসে ১২০০০ রান পূরণ করেছিলেন সেখানে বিরাট কোহলি ১২০০০ রান করতে লেগেছিল ২৪২ ইনিংস।

শচীন টেন্ডুলকার আর বিরাট কোহলি, দুইজন দুই প্রজন্মের ক্রিকেটার। ক্রিকেট এখন অনেক বদলেছে। আগেকার সময়ের দলের আড়াইশো রানের সংগ্রহ এখন তিনশো পেরিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সাড়ে তিনশো রানও চেজ হয়ে যাচ্ছে অনায়াসেই।

তার উপর সে সময়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্তসূচি এখন পরিবর্তিত হয়ে রূপ নিয়েছে ফ্রাঞ্চাইজি লিগের ব্যস্ততায়। তাই, শচীন, বিরাটের তুলনাটা ঠিক যায় না। এটি মূলত বিভিন্ন ডেটার ভিত্তিতে, বিরাট কোহলি কি শচীনকে ছাপিয়ে যেতে পারবেন- সেই প্রশ্নের উত্তরের দিকে ধাবিত হওয়ার চেষ্টা মাত্র। 

গত ২/৩ বছর আগেও বিরাট কোহলির জন্য এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা সহজ মনে হচ্ছিল। ২০১৯ সালে্র মধ্যেই পেয়ে গেলেন ক্যারিয়ারে ৭০ টা সেঞ্চুরি। কিন্তু এরপরই ছন্দপতন। কোভিডসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় গত তিন বছরে কোহলি পেলেন মাত্র ১ টি শতক। তাই শচীনের শততম শতক স্পর্শ কিংবা অতিক্রম করা কোহলির জন্য এখনও অনেক দূরের পথ। তাছাড়া সামগ্রিকভাবে শচীনের ৩৪ হাজার রানকে টপকানোও বেশ কঠিন কোহলির জন্য। 

তবে ব্যাটিংয়ে যে একচ্ছত্র আধিপত্য শচীন বিস্তার করেছিলেন সেই সাম্রাজ্যের একাংশ কোহলির হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। এরই মধ্যে বেশ কটি রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন। সামনে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডেরও হাতছানি রয়েছে।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫০ টি সেঞ্চুরি করা হয়নি শচীনের। তবে বিরাট কোহলি আর ৭ টি সেঞ্চুরি করলেই, শচীনের রেকর্ড তো ভাঙবেনই, এর সাথে ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির হাফ সেঞ্চুরি করবেন তিনি। বয়স, ফর্ম, সময়, সক্ষমতা- সব কিছু মিলিয়ে বিরাট কোহলির জন্য সেটা অর্জন করা সময়ের ব্যাপারই মাত্র।

বিরাট কোহলি, নামটাই আগ্রাসনের একটা সংজ্ঞা। বাইশ গজের ক্রিকেটে বোলারদের জন্য নিষ্ঠুর এক শাসক। তবে সেই নিষ্ঠুরতা উপভোগ করে কোটি কোটি সমর্থক। আর তাঁর এমন শাসন ক্রিকেটে চলতে থাকুক দিন, মাস পেরিয়ে আরও বেশ কয়েকটা বছর।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link