যতদিন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এবং প্রথম ৬ ওভারের পাওয়ারপ্লে টিকে থাকবে, ততদিন ক্রিকেট-রসিকদের গল্প-আড্ডায় এ ভদ্রলোক বারবার ফিরে আসবেন।
ছবি দেখে অনেকে তাঁকে নাও চিনতে পারেন। তবে ক্রিকেটটা মোটামুটি অনুসরণ করে থাকলে তাঁর নাম আপনি কোনো না কোনো সময় নিশ্চয়ই শুনেছেন। ইতোমধ্যে ছবি দেখে এতটুকু অন্তত বুঝতে পেরেছেন যে, তিনি নেদারল্যান্ডসের একজন ক্রিকেটার। হ্যাঁ, তিনি নেদারল্যান্ডসের সাবেক ক্রিকেটার স্টেফান মাইবার্গ।
‘সাবেক’ শব্দটা শুনে এখন অনেকে দ্বিধায় পড়ে যেতে পারেন। কেননা চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে দেখা গিয়েছে। এমনকি নেদারল্যান্ডসের এই বিখ্যাত জয়ে ব্যাট হাতে তিনি অবদানও রেখেছেন।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা সেই অর্থে তেমন ভাল কাটেনি মাইবার্গের। অবশ্য সুযোগও পেয়েছেন খুবই অল্প। নেদারল্যান্ডসের খেলা ৮ ম্যাচের মধ্যে সর্বশেষ তিনটিতে কেবল একাদশে ছিলেন তিনি। এর মধ্যে তিনি শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রান পেয়েছেন। করেছেন ৩৭, ৩০ বল খেলে। আপাতদৃষ্টিতে এই ইনিংসটা খুব একটা তাৎপর্যপূর্ণ মনে না হলেও নেদারল্যান্ডসের প্রেক্ষাপটে এটা ছিল যথেষ্ট কুশলী একটা ইনিংস।
চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের একটা বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায় তাঁদের ওপেনিং জুটি। গুনে গুনে ৬টা ম্যাচেই একটা ভাল শুরু এনে দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন ডাচ ওপেনাররা। অবশেষে সে সমস্যার সমাধান ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচে এসে। সেখানে ৬ ওভার শেষে বিনা উইকেটে তাঁরা সংগ্রহ করেন ৪৮ রান যেখানে ৩৪ (২৪) রানই আসে মাইবার্গের ব্যাট থেকে। মূলত গতকালের ম্যাচে ম্যাক্স ও’ডাউড ও স্টেফান মাইবার্গের ওপেনিং জুটিটাই টোন সেট করে দেয় নেদারল্যান্ডসের যা পরবর্তীতে ক্যাশ ইন করেন টম কুমার ও কলিন অ্যাকারম্যান।
শুরুতে যে টি-টোয়েন্টির পাওয়ারপ্লের সাথে মাইবার্গকে বিশেষভাবে জড়ানো, সেটা অবশ্য এ ম্যাচের কারণে নয়। সে ২০১৪ সালের কথা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পঞ্চম আসরটা বসল আমাদের বাংলাদেশে। সিলেটে প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচটা একদম জমে ক্ষীর। সুপার টেনে জায়গা নিশ্চিত করতে লড়ছিল প্রতিবেশী দুইদেশ আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস।
টস হেরে আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ১৮৯ রান বোর্ডে জমা করে। নেদারল্যান্ডসকে সুপার টেনে উঠতে হলে শুধু জিতলেই হত না, এই রান তাড়া করতে হত মাত্র ১৪.২ ওভারের মধ্যে। অবিশ্বাস্য-ভাবে ডাচরা সে লক্ষ্য তাড়া করে ওইদিন ম্যাচটা জিতে নেয় ১৩.৫ ওভারেই। আর টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই রান তাড়া করা ম্যাচটির নায়ক ছিলেন স্টেফান মাইবার্গ।
সেদিন পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে নেদারল্যান্ডস রান তোলে ৯১। এ সময়টায় বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে ৬ ছয় ও ৪ চারে ২১ বলে ৫৭ রান করেন মাইবার্গ। নেদারল্যান্ডসের এই সংগ্রহটা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েটিতে পাওয়ারপ্লের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা ৬ বছর ধরে দখল করে রেখেছিল। একই সাথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাওয়ারপ্লেতে একমাত্র ব্যাটার হিসেবে অর্ধশতক হাঁকানোর রেকর্ডটা তখন নিজের করে নেন মাইবার্গ। পরবর্তীতে গেল বছর লোকেশ রাহুল এবং কিছুদিন আগে লিটন কুমার দাস সে রেকর্ডে ভাগ বসান।
শেষমেশ নেদারল্যান্ডসের প্রসিদ্ধ সেই জয়ের ম্যাচে ২৩ বলে ৬৩ রান করে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন স্টেফান মাইবার্গ।
আর মাইবার্গকে শুরুতে ‘সাবেক’ বলার কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তিনি ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিবারকে সময় দিতেই তাঁর এ সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন প্রায় একযুগ ধরে নেদারল্যান্ডস ক্রিকেটে অবদান রেখে আসা ৩৮ বছর বয়সী এই বাঁ-হাতি ওপেনার।