‘একটিমাত্র নকআউট গেম আমি কিংবা আমার দলের কোন খেলোয়াড়কে বর্ণনা করতে সক্ষম নয়’ – এই বানীটি ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মার। ক্রিকেটের একটি সাধারণ বিষয় হল একটা ম্যাচে কেউ ভাল পারফর্ম করলে, আমরা সেই খেলোয়াড়কে মাথায় তুলে নেই। কিন্তু আবার যখন পারফর্ম করতে পারেনা তখনই মাথা থেকে নামিয়ে সমালোচনার তীর ছুঁড়তে থাকি। একজন ক্রিকেটারের জীবনে ভাল ও খারাপ সময় দুইই কাটাতে হয়। বলা যায় এটাও পার্ট অব ক্রিকেট। ভারতীয় অধিনায়ক রোহিতও তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বারংবার এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন।
ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা মনে করেন চলতি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাটারদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যুতে মাঠের আয়তনের সাথে সামঞ্জস্য করাটা। রোহিত নিজেও সুপার টুয়েলভের পাঁচ ম্যাচে মোট ৮৯ রান সংগ্রহ করেছেন এবং চারটি ম্যাচেই পাওয়ারপ্লেতে আউট হয়েছিলেন। যা মোটেও ভাল পারফর্ম্যানন্সের তালিকায় পড়ে না। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে এবারের আসরে পিচের কন্ডিশন এবং মাঠের সীমানার বিশাল পার্থক্য ব্যাটারদের জন্য সহজাত শট খেলা কঠিন করে তুলেছে।
অ্যাডিলেডে আগামীকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালের ম্যাচ খেলতে নামবে ভারত। ম্যাচের আগে রোহিত বলেন, ‘আমাদের স্কোয়াডের সবাই সহজাত খেলোয়াড়। তাঁরা বল দেখে সেই অনুযায়ী খেলতে পছন্দ করে। এবং আপনি যদি টপ অর্ডার থেকে সাত-আট নম্বর পর্যন্ত দেখেন, আমরা তাঁদের থেকে বিভিন্ন ধরনের পারফরম্যান্স পেয়েছি। আমাদের ছেলেরা এখানে বেশ ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে, পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছে এবং সেই অনুযায়ী খেলেছে। যা একটি ভাল লক্ষণ।’
সেমিফাইনালের আগে অনুশীলন নিয়ে চোটের শঙ্কায় পড়েছিলেন রোহিত শর্মা। তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল ডান হাতে আঘাত পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন সব ঠিক আছে বলে মনে হচ্ছে। একটু আঘাত ছিল, কিন্তু এখন তা একেবারে ঠিক আছে।’
বিশ্বকাপের নক–আউটে ভারতের বিগত রেকর্ড বেশ একটা সুবিধাজনক নয়। তারা ২০১৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে সক্ষম হয়েছিল, কিন্তু যেখানে তাঁরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরেছিল। আবার ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তাঁরা নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছিল। সেখানে বেশিরভাগ সমালোচনা রোহিত, বিরাট কোহলি এবং লোকেশ রাহুলের পারফরম্যান্সকে ঘিরে ছিল। নকআউট গেম নিয়ে রোহিত বলেন, ‘আমি মনে করি নকআউট গেমগুলি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই এটা বুঝি। যেখানে আপনি শুধুমাত্র একবারই খেলতে পারবেন এবং সেই খেলায় ভাল করার একটি মাত্র সুযোগ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোন খেলোয়াড় তাঁর পুরো ক্যারিয়ারে যা করেছে, তা শুধুমাত্র একটি নকআউট গেম দ্বারা তাদের সংজ্ঞায়িত করবেন না। তা তিনি যে ফরম্যাটেই খেলুক না কেন সেই ফরম্যাটে ভাল করতে হলে, একটি অবস্থানে পৌঁছাতে হলে তাঁকে সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তাই কেবল একটি নির্দিষ্ট খেলা তাকে ব্যাখ্যা করে না।’
যেমন এই টুর্নামেন্টে অক্ষর প্যাটেলের বোলিং ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় ছিল। বাঁ-হাতি এই স্পিনার পাঁচ ম্যাচে ৯.১ ইকোনমিতে মাত্র তিনটি উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু রোহিত এই স্পিনারকে নিয়ে তেমন চিন্তিত নন। অক্ষর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি সত্যিই চিন্তিত নই। কারণ এই টুর্নামেন্টে সে খুব কমই বোলিং করতে পেরেছিল। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচটি ছাড়া, সে কোনটায়ই তাঁর কোটার পুরোটা বোলিং করেনি। এটা শুধুমাত্র এই কারণে যে স্বল্প ওভারের এই খেলায় সিমাররা তাঁদের পুরো কোটা বল করেছে। যার মানে হল স্পিনারদের জন্য সুযোগ কম ছিল।’
ভারতীয় অধিনায়ক আরও যোগ করেন, ‘কারও জন্য একটি খারাপ টুর্নামেন্ট হতে পারে। এর মানে এই নয় সে ফর্মে নেই বা ভাল বোলিং করতে পারছে না কিংবা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। যখন আমি অক্ষরের সাথে কথা বলেছিলাম আমার মনে হয়েছে সে ভাল জায়গায় আছে।’
যাই হোক আসন্ন সেমির ম্যাচে ইংল্যান্ডের সাথে মোকাবেলায় আত্মবিশ্বাসী ভারত। যেকোনভাবে তাঁরা ফাইনালের টিকেট কাটতে চায়। আর ভারতের আত্মবিশ্বাসের পুঁজি হল বিশ্বকাপের আগে জুলাইয়ে ইংল্যান্ডকে ২–১ ব্যবধানে হারানোর স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা। আপাতত আসছে ম্যাচে আত্মবিশ্বাস ও পরিকল্পনার ফলাফল কি হয়, সেইটাই দেখার পালা। আর পরিকল্পনা সফল হলেই ফাইনালে পাকিস্তানকে পাবে ভারত। পাকিস্তান তো পারল, পারবে কি ভারত?