অ্যাডিলেড ওভাল জুড়ে ‘ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া’ চিৎকার। কিন্তু সেই সুর একসময় নিরবতায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। ঠিক যেন অস্তমিত সূর্যের মত ভারতের বিশ্বকাপ স্বপ্ন আঁধারে ডুবে গেল। আর ভারতকে সেই হতাশায় ভাসানোর কাজটা করলেন দু’জন, একটা জুটি, বাটলার-হেলস জুটি। ভারতের দেওয়া ১৬৯ রানের টার্গেটে সেই যে দুজন ইংলিশ ক্রিকেটের আধিপত্য দেখানোর লড়াইয়ে নামলেন, ফিরলেনও অপরাজেয় হয়ে, প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা দিলেন বীরদর্পে। যত যাই হোক, ভারতকে ১০ উইকেট হারানো টা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।
হার্দিক পান্ডিয়ার শেষের ঝড়ে ভাল একটা সংগ্রহই পেয়েছিল ভারত। অন্তত অ্যাডিলেডের পার স্কোর তারা স্পর্শ করেছিল। ভারতের স্কোরবোর্ডে ১৬৮ রান। অ্যাডিলেড ওভালে এত রান চেজ করে আগে কখনও কোনো দল জেতেনি। একই সাথে এ মাঠে পরে চেজ করে জয়ের হারও কম, মাত্র ৩৬.৩৬%। সবকিছু মিলিয়ে, ব্যাটিংয়ে শেষের মোমেন্টাম আর পরিসংখ্যানের আলোয় টিম ইন্ডিয়ার এ ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনার দিকেই উঁকি দিচ্ছিল।
কিন্তু, ইনিংস শুরু করতে নেমে এসব পরিসংখ্যান, প্রতিকূলতা কোনো কিছুরই যেন তোয়াক্কা করলেন না বাটলার-হেলস জুটি। শুরুর ঝড়টা এসেছিল বাটলারের ব্যাট থেকে। ভূবনেশ্বরের করা প্রথম ওভারেই মারেন তিনটি চার। বাটলারের সেই দারুণ শুরুর রাশটা পরবর্তীতে টেনে ধরতে শুরু করেন আরেক ওপেনার অ্যালেক্স হেলস।
প্রতি ওভারেই চার, ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতীয় বোলারদের রীতিমত দিশেহারা করে ছেড়েছেন। হেলসের এমন তাণ্ডবে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাও যেন দিক হারিয়ে ফেলেন। পেসার, মিডিয়াম পেস, স্লোয়ার, স্পিনার- বোলিং প্রান্তে কোনো বোলারকেই এনে তিনি সুবিধা গড়তে পারছিলেন না। দিন শেষে তাই রাজ্যের সকল হতাশা নিয়েই তাঁকে মাঠ ছাড়তে হয়েছে।
ভারতের জন্য ১০ উইকেটে ম্যাচ হারার দৃশ্যায়ন নতুন নয়। আগের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই তারা পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে হেরেছিল। আর এখানেই একটা বিব্রতকর রেকর্ডের সঙ্গী হয়েছে ভারত। কারণ তারাই ইতিহাসের একমাত্র দল যারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের একের অধিক ম্যাচে ১০ উইকেটের ব্যবধানের পরাজয় বরণ করেছে।
ভারতের এমন বিব্রতকর রেকর্ডের দিনে বাটলার-হেলস জুটিও বেশ কিছু রেকর্ডে নিজেদের যুক্ত করেছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে এর আগে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ডটি ছিল ইয়ন মরগ্যান আর অ্যালেক্স হেলসের। ২০১৪ সালে তারা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গড়েছিল ১৫২ রানের জুটি। ৮ বছর বাদে, সেই রেকর্ডটিই ভাঙলো হেলস-বাটলার জুটি। ভারতের বিপক্ষে তাদের জুটি থেকে রান এসেছে ১৭০।
এ ছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে ইনিংসের প্রথম ১০ ওভার সর্বোচ্চ রান তোলার দিক দিয়েও ইংল্যান্ড এখন শীর্ষে। ভারতের বিপক্ষে অ্যাডিলেডের এ ম্যাচে বাটলার-হেলস মিলে প্রথম ১০ ওভারে তুলেছেন ৯৮ রান। যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে নতুন একটি রেকর্ড।
১৭০ রানের এ জুটিতে অ্যালেক্স হেলস করেছেন ৮৬ আর বাটলার খেলেছেন ৮০ রানের একটি ইনিংস। তবে অদম্য গতিতে রান তোলার দায়িত্বটা প্রথমে নিয়েছিলেন হেলস। নিজের ইনিংসের ২৮ তম বলেই ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন। আর পুরো ইনিংসে মেরেছেন সাত সাতটি ছক্কা।
মূলত তাঁর তাণ্ডবেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ভারত। ইংল্যান্ডকে ফাইনালে তোলার ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও গিয়েছে এই অ্যালেক্স হেলসের হাতে। আর নিজের এমন দুর্দান্ত ইনিংসের দিনে একটি মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পূরণ করেছেন ২০০০ রান।
আরেক ওপেনার জশ বাটলারও কম যাননি। অ্যালেক্স হেলসকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু শেষের দিকে এসে ব্যাট হাতে চড়াও হয়েছেন তিনিও। ৯ চার আর ৩ ছক্কায় খেলেছেন ৮০ রানের একটি ইনিংস। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম আইসিসির টুর্নামেন্ট খেলতে এসেই ফাইনাল! ফাইনালে তোলার ক্ষেত্রেও রাখলেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এখন শেষটা রাঙাতে পারলেই হয়। অবশ্য সেটার জন্য মেলবোর্নের মাটিতে পাকিস্তান বাঁধা টপকাতে হবে তাঁর দলকে।
১৯৯২ বিশ্বকাপে ইমরান খানের কাছে শিরোপা হারিয়েছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক গ্রাহাম গুচ। সেই মেলবোর্নেই এবার ৩০ বছর আগের বিশ্বকাপ ফাইনালের পুনরাবৃত্তি। গ্রাহাম গুচ-ইমরান খান মহারণ এবার রূপ নেবে বাটলার-বাবর যুদ্ধে।
প্রতিশোধ নাকি পুনরাবৃত্তি, এমন ফলাফলের দিকেই চোখ আটকে থাকবে পুরো ক্রিকেট বিশ্বের। ইংলিশদের ক্রিকেট সাম্রাজ্য দখল নাকি আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানের আবারও বিশ্বজয়- তা জানতে আর কিছু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।