বিশ্বকাপ ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতাকে দেওয়া হয় গোল্ডেন বুট। ১৯৩০ সালে গিলের্মো স্টাবিল থেকে শুরু করে শেষবার রাশিয়া বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন-প্রত্যেক বিশ্বকাপেই সর্বোচ্চ গোলদাতাকে আলাদা মর্যাদায় দেখা হয়। তবে গোল্ডেন বুট আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া শুরু হয় ১৯৮২ সাল থেকে। তখন অবশ্য গোল্ডেন বুটের নাম ছিল গোল্ডেন শ্যু। ২০১০ সাল থেকে সেই নাম পরিবর্তিত হয়ে এখন বলা গোল্ডেন শ্যুকে বলা হয় গোল্ডেন বুট।
কাতারের মাটিতে ফুটবল মহাযজ্ঞ বসতে বাকি আর মাত্র দিন কয়েক। এরই মধ্যে বিশ্বকাপের দলগুলো কাতারে আসতে শুরু করেছে। আর এর সাথে, সমর্থকদের মাঝে নিজের পছন্দের দলকে নিয়ে জল্পনা, কল্পনা তো আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। নিজের সমর্থন করা দলকে কে না চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে চায়! তবে এসব ছাড়াও এবারের বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত অ্যাওয়ার্ড নিয়েও রয়েছে অনেকের আগ্রহ।
কে জিতবেন গোল্ডেন বল, কেই বা হবেন টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা- এসব নিয়ে বিশ্ব ফুটবলের আগ্রহ রয়েছে তুঙ্গে। তো আগ্রহের রেশে খেলা ৭১ ও খোঁজার চেষ্টা করেছে কে হতে পারেন এবারের গোল্ডেন বুটজয়ী ফুটবলার। চলুন সম্ভাব্য গোল্ডেন বুট বিজয়ীদের দেখে নেওয়া যাক।
- কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স)
আগের বার রাশিয়া বিশ্বকাপে যখন ফ্রান্স শিরোপা জিতল তখন এমবাপ্পে সবে কৈশোর পেরোনো এক কিশোর। আর তাতেই সে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করে পেলের পর দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে হয়েছিলেন বিশ্বকাপ ফাইনালের গোলদাতা। আর একই সাথে, রাশিয়া বিশ্বকাপে পেয়েছিল সেরা যুব ফুটবলারের পুরস্কার।
সেই এমবাপ্পে এবার ফ্রান্সের আক্রমণভাগের প্রধান সেনাপতি। চার বছর বাদে যথেষ্ট পরিণত হয়ে, এবারের বিশ্বকাপে খেলতে নামবেন তিনি। এর মধ্যে নিজেকে বিশ্বসেরাদের কাতারে নিয়ে যেতেও শুরু করেছেন। ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৩ গোল করেছেন। যা টপ ফাইভ ইউরো লিগ খেলা ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া এ মৌসুমে ২০ ম্যাচে এখন পর্যন্ত করেছেন ১৯ গোল।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ৮৮ মিনিটে এ মৌসুমে তাঁর পা থেকে গোল এসেছে। পুরো মৌসুম জুড়ে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা এমবাপ্পে তাই এ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুটের অন্যতম দাবিদার। বর্তমান ফুটবলে ফ্রান্সের আগ্রাসনে এবারের বিশ্বকাপে নিশ্চিতভাবেই ফেবারিট দল তারা। আর ফ্রান্সের এমন পথযাত্রা অব্যাহত থাকলে গোল সংখ্যায় নিজেকে শীর্ষে নিয়ে যেতেই পারেন এমবাপ্পে।
- করিম বেনজেমা (ফ্রান্স)
ফ্রান্সের আগের বারের বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন না বেনজেমা। তবে সেই বেনজেমা এখন নিজেকে একদম ভেঙ্গে গড়েছেন। গতবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৫ গোল করে বলতে গেলে প্রায় একাই রিয়াল মাদ্রিদকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন।
সেই পারফরম্যান্সের ফলস্বরূপ জিতেছেন ব্যালন ডি অরের পুরস্কার। আর আগের মৌসুমের ছন্দ এ মৌসুমে ধরে রেখেছেন বেনজেমা। আগের বারে দেশমের ফ্রান্স স্কোয়াডে না থাকলেও এবারের কাতার বিশ্বকাপে দলে আছেন বেনজেমা। তাই এমবাপ্পের মত গোল্ডেন বুট পাওয়ার দৌড়ে ভালভাবেই আছেন ফ্রেঞ্চ এ স্ট্রাইকার।
- লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
কাতার বিশ্বকাপই হতে যাচ্ছে মেসির শেষ বিশ্বকাপ। তাই শেষটা একদম উজাড় করেই দিতে চাইবেন মেসি। কিন্তু পিএসজির জার্সি গায়ে চাপানোর পর থেকে গোল স্কোরারের ভূমিকায় মেসিকে কমই দেখা গিয়েছে। ক্যারিয়ারের সবচাইতে বাজে মৌসুম কাটিয়েছেন গত মৌসুমে। তবে এ মৌসুমের শুরু থেকেই মেসি দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছেন।
এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ১২ গোল। এখন গোল্ডেন বুটের জন্য মেসি কতটা ডিজার্ভিং তার একটা আভাস মেলে আর্জেন্টিনার হয়ে তাঁর এ বছরের গোল বন্যা দেখলে। আর্জেন্টিনার শেষ তিন ম্যাচে করেছেন ৮ গোল। আর গত বছরের কোপা আমেরিকার সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনিই ছিলেন। তাই, বিশ্বকাপ আসরটা যখন দেশকে কেন্দ্র করে, তখন কাতার বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুটের দৌড়ে নিশ্চিতভাবেই থাকবে মেসির নাম।
- নেইমার (ব্রাজিল)
২০১৪ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই নেইমার জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ বুটের পুরস্কার। ৪ গোল নিয়ে হয়েছিলেন সেবারের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। বিশ্ব আসরে চিরায়ত ফেবারিট ব্রাজিল। তাই ব্রাজিলের এবারের বিশ্বকাপে পথযাত্রা লম্বা হলে নেইমারের গোলসংখ্যাও বড় হবে বলে ধরে নেওয়াই যায়।
তার উপর, শেষ কয়েক বছরের মধ্যে এ মৌসুমেই তিনি ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে রয়েছেন। এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ১৫ গোল। তাই কাতার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকার পথে নেইমারের উপর চোখ রাখতেই হচ্ছে।
- হ্যারি কেইন (ইংল্যান্ড)
আগের বারের বিশ্বকাপে এই হ্যারি কেইনই গোল্ডেন বুটের পুরস্কার জিতেছিলেন। ইংল্যান্ডের হয়ে সেবার করেছিলেন ৬ টি গোল। টানা দুই বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জেতার কীর্তি এখন পর্যন্ত কারও নেই। হ্যারি কেইন এখন সেই কীর্তি সামনে দাঁড়িয়ে। তবে তা পূরণ করতে তাঁকে পাড়ি দিতে হবে অনেক কঠিন পথ।
- ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল)
সময়টা বাজে যাচ্ছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। নিজের ক্লাব ম্যান ইউকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে ফুটবল পাড়ায় নিন্দিত হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। তার উপর এ মৌসুমে নিজেকে ঠিক খুঁজে পাচ্ছেন না রোনালদো।
তবে, ফিনিক্স পাখির মত প্রত্যাবর্তনের সক্ষমতা রয়েছে তাঁর। মেসির মত তাঁরও এটা শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। তাই নিজের শেষটা নিশ্চিতভাবেই রাঙাতে চাইবেন তিনি। আর সেই স্বপ্নিল যাত্রায় পর্তুগাল হাঁটলে রোনালদোর হাতে গোল্ডেন বুট আসতেই পারে।
- রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি (পোল্যান্ড)
এই মুহূর্তের সেরা নাম্বার নাইন বললে হয়ত তেমন ভুল বলা হবে না।বায়ার্ন ছেড়ে বার্সায় এসেছেন। তাতেও তাঁর গোলবন্যা থামেনি। তবে বিশ্বকাপে এসে সেটির দেখা মিলবে কিনা, সেই সম্ভাব্যতায় কিছুটা আশঙ্কা আছে। কারণ ফুটবল বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত গোলের খাতায় খুলতে পারেননি এ গোলমেশিন।
তার উপর পোল্যান্ড বিশ্ব ফুটবলে বড় কোনো নাম না। গত বছরে হওয়া ইউরোতে গ্রুপ পর্বের বাঁধাই পেরোতে পারেনি পোল্যান্ড। তাই ফুটবল বিশ্বকাপে এসে পোল্যান্ডের হয়ে লেভানডভস্কি কতটুকু সফল হবেন, তা নিয়ে দ্বিধা থাকছেই। তবে সাম্প্রতিক ফর্ম কিংবা গোল স্কোরিং এবিলিটির বিবেচনায় লেওয়ানডস্কি এবারের বিশ্বকাপে নিশ্চিতভাবেই গোল্ডেন বুটের দৌড়ে থাকছেন।