ম্যাচ শুরুর আগে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছিলেন। হয়তো শেষের শুরুর কথা ভেবেই এক ধরনের আবেগ তাঁকে আক্রান্ত করেছিল। ২০০৬ থেকে ২০২২, তিন দশকে পাঁচ পাঁচটি বিশ্বকাপ-মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়। আর এখানেই অনন্য এক কীর্তি গড়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
পাঁচ বিশ্বকাপ আর পাঁচ ইউরো খেলেছেন এমন ফুটবলারদের তালিকা করতে গেলে তলিকাটা সেই ‘১’ এই শেষ। সেই এক এবং একমাত্র ফুটবলারটি হলেন পর্তুগিজ সিআরসেভেন।
এখানেই শেষ নয়, ম্যাচের ৬৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে যখন স্কোরশিটে নিজের নাম লেখালেন তখন ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে তিনি ঢুকে গেলেন অনন্য এক রেকর্ডে। ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে হিসেবে পৃথক ৫ বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড গড়লেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
সেই ২০০৬ বিশ্বকাপে ইরানের বিপক্ষে গোল দিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজের গোলের খাতা খুলেছিলেন। এরপর ২০১০, ২০১৪, ২০১৮ এর পর এবার কাতার বিশ্বকাপে এসেও পেয়েছেন গোলের দেখা। আর নিজের এমন কীর্তি গড়ার দিনে পর্তুগালও পেয়েছে জয়ের দেখা। ঘানার বিপক্ষে ৩-২ গোলের জয়ে দারুণ শুরু করলো ২০১৬ এর ইউরো চ্যাম্পিয়নরা।
ক্লাব ফুটবলে মোটেই ভাল সময় যাচ্ছিল না রোনালদোর। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছিলেন কম। সেই সাথে ফর্মহীনতার বেড়াজালে আটকে গিয়েছিলেন নিজেও। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময়, তার উপর কোচ এবং ক্লাবের সাথে ধীরে ধীরে সিআরসেভেনের সম্পর্কের দূরত্বও বাড়ছিল। একটা সময় পরে এসে সেই দূরত্বতা বিস্ফোরক রূপে ধরা দিল।
কোচ থেকে শুরু করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজমেন্ট, এমনকি সাবেক খেলোয়াড়দেরও ধুয়ে দিলেন পিয়ার্স মরগ্যানের এক ইন্টারভিউতে। রোনালদোর সেই সব বিস্ফোরক মন্তব্যকে ঘিরে ফুটবল দুনিয়ায় মুহূর্তের মাঝেই আলোড়ন শুরু হয়ে গেল। স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়ে সমালোচনায় বিধ্বস্ত হলেন রোনালদো।
তবে, বড় খেলোয়াড়রা তো এখানেই নিজেদের ব্যবধান বুঝিয়ে দেন। পুরো বিশ্ব যখন সমালোচনায় জাপটে ধরে ঠিক তখনই তারা খোলস ছাড়াতে শুরু করেন। নিন্দিত থেকে হয়ে যান নন্দিত। ঘানার বিপক্ষে তেমনই একটি আবহ সৃষ্টি করার প্রয়োজন ছিল রোনালদোর। নিজের স্বরূপে হয়তো তিনি ছিলেন না।
কিন্তু, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পরম আরাধ্য যে গোলের প্রয়োজন ছিল তা ঠিকই করেছেন। পর্তুগালকে প্রথমে এগিয়ে দেওয়ার দায়িত্বটা তিনিই নিয়েছিলেন। স্পটকিক থেকে পেনাল্টি নেওয়ার সময় সমস্ত চাপকে জয় করে করলেন গোল।
রোনালদোর সেই গোলের পরেই পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে যায় পর্তুগালও। প্রথমার্ধের শেষ যেখানে গোলশূন্য থেকে শেষ হয়েছিল, সেখানে পরের অর্ধে ঘানার জালে ৩ গোল জড়ায় পর্তুগাল।
যদিও ঘানাও পেয়েছিল দুই গোল। কিন্তু, দিনশেষে অনেক উত্তেজক মুহূর্তের অবতারণা হলেও গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট পেয়েই মাঠ ছাড়ে রোনালদোর দল। যদিও রোনালদোকে কোচ নামিয়ে নেন ম্যাচ শেষের মিনিট দশেক আগেই।
রোনালদোর পরবর্তী চ্যালেঞ্জ উরুগুয়ে। গত বিশ্বকাপে এই উরুগুয়ের কাছে হেরেই রাউন অফ সিক্সটিন থেকে বাদ পড়েছিল পর্তুগাল। রোনালদোর জন্য এবার কি তবে প্রতিশোধের একটা মঞ্চ হতে যাচ্ছে? সম্ভবত না।
কারণ, রোনালদোর চোখ তো ঐ অধরা বিশ্বকাপের দিকে। সেই লক্ষ্যে উরুগুয়ে বড়জোর একটা বাঁধা, কিন্তু প্রতিশোধের কোনো উপলক্ষ হতে পারে না। এমন সব বাঁধা ডিঙ্গিয়েই তো বিশ্বকাপের পথে ছুটতে হবে রোনালদোকে।