কডি গ্যাকপো, দ্য নেক্সট ডাচ থিং

ইয়োহান ক্রুইফ, এরপরে রবিন ভ্যান পার্সি, ওয়েসলি স্নাইডার, আরিয়ান রোবেন- ফুটবলে ডাচ রূপকথার ধারক বলতে গেলে তাদের নামই ঘুরে ফিরে আসে। মডার্ণ ফুটবলে নেদারল্যান্ডস যতটা এগিয়েছে প্রায় সিংগভাগই হয়েছে তাদের বদৌলতে।

২০১০ বিশ্বকাপের রানার্সআপ, ১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট। এরপর লম্বা একটা বিরতি। ২০১৬ ইউরো আর ২০১৮ বিশ্বকাপে সুযোগ না পেয়ে বড় একটা ধাক্কাই খায় ডাচ ফুটবল। তবে সময়ের পরিক্রমায় আস্তে আস্তে মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করলো নেদারল্যান্ডস। কোচ লুই ফন গাল তারুণ্যের সাথে অভিজ্ঞতার দারুণ মিশেলে এক সুতোয় সবাইকে বাঁধলেন।

তবে কাতার বিশ্বকাপের স্কোয়াডে নেদারল্যান্ডসের রক্ষণভাগ বেশ শক্তিশালী হলেও দুর্বলতা ছিল আক্রমণভাগে। ফিনিশিং দক্ষতা নিয়ে ছিল অনেক প্রশ্ন। মেম্ফিস ডিপাই যদিও বা আছেন, কিন্তু মৌসুম জুড়ে সেভাবে ফর্মে ছিলেন না তিনি। তাই ফরোয়ার্ড লাইনআপ নিয়ে একটা চিন্তার জায়গা প্রবল ভাবেই ছিল ডাচ কোচের জন্য। কিন্তু বিশ্বকাপে এসেই যেন কোচের সে চিন্তাকে নিমেষেই দূর করে দিলেন কডি গ্যাকপো।

পিএসভির হয়ে খেলা এ উইংগার বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচেই পেয়েছিলেন গোলের দেখা। কাতার বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে সেনেগালের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের প্রথম গোলটি তাঁর পা থেকেই এসেছিল। আর ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর ৬ মিনিটেই গোল পান ২৩ বছর বয়সী এ ডাচ ফুটবলার। এবার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে কাতারের বিপক্ষেও পেলেন গোলের দেখা। ম‌্যাচের ২৬ মিনিটে দূরপাল্লার এক শটে গোল করেন গ্যাকপো। ডেভি ক্লাসেনের কাছ থেকে পাওয়া বলে দুর্দান্ত এক শট নেন তিনি। আর এর ফলেই ডানপাশের পোস্ট ঘেঁষে বল চলে যায় কাতারের জালে।

আর এ গোল করার মধ্য দিয়েই গ্রুপ পর্বের সবগুলো ম্যাচেই গোল পেলেন গ্যাকপো। ডাচ ফুটবলার হিসেবে এর আগে এ কীর্তি ছিল তিনজনের। জোহান নীসকিনস(১৯৭৪), ডেনিস বার্গক্যাম্প (১৯৯৪), ওয়েসলি স্নাইডারের(২০১০) পরে চতুর্থ ডাচ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের টানা তিন ম্যাচে গোল করার কীর্তি গড়লেন গ্যাকপো।

এ ছাড়া আরেকটি অনন্য কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন গ্যাকপো। গ্রুপপর্বের প্রত্যেকটি ম্যাচেই নেদারল্যান্ডসের প্রথম গোল এসেছে তাঁর পা থেকে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে এই কীর্তি ছিল মাত্র এক জনেরই। তিনি আলেসান্দ্রো আলতোবেলি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের প্রত্যেকটি ম্যাচেই প্রথম গোল করেছিলেন এই আলতোবেলি।

এমনিতে ক্লাব ফুটবলে দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটাচ্ছিলেন গ্যাকপো। গোলস্কোরিং থেকে শুরু করে প্লে মেকিংয়েও মৌসুম জুড়ে দারুণ সক্ষমতা দেখিয়েছিলেন তিনি। সেটা তাঁর পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই আরেকটু স্পষ্ট হয়। গোল করার চেয়ে করিয়েছেন বেশি। এখন পর্যন্ত এ মৌসুমে খেলা ২৯ ম্যাচে গোল করেছেন ১৭ টি, আর গোলে সহায়তা করেছেন ১৮ টিতে। সব মিলিয়ে পুরো মৌসুমে ৩৫ টি গোলের সরাসরি তাঁর অবদান রয়েছে।

কোডি গ্যাকপো যেভাবে এগোচ্ছেন তাতে বিশ্বকাপের পরে তাঁকে নিয়ে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর একটা হিড়িক লাগতেই পারে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড রোনালদোকে এরই মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সামনের শীতকালীন ট্রান্সফারে তাই একজন উইংগারের প্রতি নিশ্চিতভাবেই তাদের নজর থাকবে। এর মধ্যে ম্যান ইউ এর সাথে গ্যাকপোকে নিয়ে এর মধ্যে বেশ কিছু গুঞ্জনও ছড়িয়েছে। শোনা যাচ্ছে, সামনের শীতকালীন ট্রান্সফারেই নাকি তাঁকে দলে ভেড়াতে পারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তবে সেটা এখন পর্যন্ত গুঞ্জনেই আটকে আছে। আপাতত দেখার পালা, বিশ্বকাপ শেষে এই গুঞ্জন সত্যতে রূপ নেয় কিনা!

তবে বিশ্বকাপের মতো বৈশ্বিক আসরে এখন পর্যন্ত গ্যাকপো যা করেছেন তাতে চোখ আটকাতে বাধ্য। তাই নিশ্চিত ভাবে বলাই যায়, বিশ্বকাপের পর শীতকালীন ট্রান্সফারে হটকেক হতে যাচ্ছেন এই গ্যাকপো।

এখন পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের করা ৫ গোলের ৩ টিই এসেছে তাঁর পা থেকে। আর তাঁর এমন নৈপুণ্যেই এ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোল নিশ্চিত করলো ডাচরা।

ফরোয়ার্ড নিয়ে ডাচদের দুশ্চিন্তা বাইরে ঠেলে দিয়ে নির্ভরতার প্রতীক বনে যাওয়া গাকপো এখন দূর পথের স্বপ্নে পা বাড়াতেই পারেন। ফুটবলে ডাচ রূপকথার স্বপ্নসারথিরা কেউই শেষ পর্যন্ত পূর্ণতা দিতে পারেননি। গাকপো পারবেন কি পারবেন না, তা সময়ই বলে দিবে। তবে তাদের উত্তরসূরি হয়ে অসাধ্য সাধনের পথে এগিয়ে যেতে তো কোনো বাঁধা নেই।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link