সুন্দর ফুটবল মাই ফুট!

ভাই থামেন! আর্জেন্টিনা ভাল খেলেনি, মন ভরেনি এইসব ডায়লগ দেওয়া বন্ধ করেন। আর্জেন্টিনা সুন্দর ফুটবল খেলতে নামেনিই। নেমেছিল নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। সুন্দর ফুটবল মাই ফুট!

আর্জেন্টিনা ট্যাকটিকাল ফুটবল খেলেছে। গোল খাব না, গোল দেব – এটাই ছিল মোটো।

প্রথম প্রয়োরিটিই ছিল গোল খাব না। ফ্রি কিক থেকে মার্টিনেজ ডানে ঝাঁপিয়ে যে সেভটা করল, ওটা গোল হয়ে গেলে এই ম্যাচের মোমেন্টাম পুরোপুরি মেক্সিকোর দিকে শিফট করত। কালকেই বিদায়ঘণ্টা বেজে যেত আর্জেন্টিনার।

আর এমন ম্যাচে আপনারা চান সুন্দর ফুটবল। বলিহারি!

কালকে আর্জেন্টিনার খেলা দেখে ‘কোথায় গেল বাতিস্তুতা-রিকেলমেদের ফুটবল’ বলে হাপিত্যেশ করে মরছেন যারা; তারা নিজেদের সিজনাল প্রমাণ করছেন। সুন্দর ফুটবল আর্জেন্টিনা ২০০৬ বিশ্বকাপেই সর্বশেষ খেলেছে।

২০১০-এ কিছুটা ছোঁয়া ছিল। কিন্তু আলেহান্দ্রো সাবেয়া ২০১৪ সালে প্রমাণ করে দেন, বিশ্বকাপের মত টুর্নামেন্ট জিততে হলে গোল দেওয়ার চেয়ে গোল না খাওয়া বেশি জরুরি। স্কালোনির আর্জেন্টিনা পুরো সেই ফিলোসফি ফলো করে।

লিওনেল স্ক্যালোনির আর্জেন্টিনা ডিফেন্সিভলি অনেক বেশি ক্লিনিকাল, অনেক বেশি ফিজিকাল। খেয়াল করলে দেখবেন, অপোনেন্টের চেয়ে আর্জেন্টিনা এখন বেশি ফাউল করে। এটা পুরোপুরিই রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড ফুটবল।

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের দিকে তাকান, কিংবা কোপা আমেরিকার ফাইনাল। আর্জেন্টিনা বেশির ভাগ ম্যাচ জিতেছে ১ গোলের ব্যবধানে। গোলের পসরা সাজানো ফুটবল, মাঝমাঠের মায়েস্ত্রো, টানা ২৬ পাসের নান্দনিক গোল – এসব অনেক হইছে ভাই। মন বহু জেতা হইছে, এবার ট্রফি জেতার সময়। এটাই হল স্কালোনির সাফ কথা।

তাহলে কি আর্জেন্টিনার সুন্দর ফুটবল খেলার সামর্থ্য নাই। অবশ্যই আছে। ফিনালিসিমাতেই অবিশ্বাস্য সুন্দর ফুটবল খেলে ইতালিকে স্রেফ হাঁটু গেড়ে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য করেছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু, এর মধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে। ক্লাব সিজনের মধ্যে হচ্ছে এই বিশ্বকাপ, যার চড়া মাশুল গুনছে আর্জেন্টিনা।

আর্জেন্টিনার স্কোয়াডে ব্রাজিলের মতো ডেপথ নেই, যেখানে একটা পজিশনের জন্য তিনটা বিশ্বমানের খেলোয়াড় স্ট্যান্ডবাই। প্রথম একাদশে সাত-আটজনের জায়গা প্রায় ফিক্সড। এর মধ্যে পারেদেস আর ডি পল ক্লাবে বাজে মৌসুম কাটিয়ে এসেছে। ভালো ফর্মে যে ছিল লে চেলসোকে, ইনজুরির কারণে তাকে পাওয়াই গেল না। আর্জেন্টিনার মিডফিল্ড বিশ্বকাপে প্রায় অকার্যকর। মেসিকে আবারও নিচে নেমে এসে, কখনও ডিফেন্স লাইন থেকে বিল্ড আপে সাহায্য করতে হচ্ছে।

এমিলিয়ানো মার্টিনেজ নিজে লিগে মেবি ১১ ম্যাচে ১৭ গোল খেয়ে এসেছে (কালকে এয়ারে একবার রিস্কি ফাম্বলও করেছিল, দুর্দান্ত সেভটা আশা করি কনফিডেন্স দেবে)। রোমেরো সৌদি ম্যাচে মিলি সেকেন্ডের সিদ্ধান্তহীনতায় একটা গোল হজম করিয়েছে।

অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াও ইনজুরি নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছে, ফুল ফিটনেস নেই। ডি মারিয়াকে উইংয়ে অনেক ওয়াইড পজিশনে রাখা হয়েছে, কারণ একটাই যেন তিনি দুজন ডিফেন্ডারকে টেনে নিয়ে মেসিকে স্পেস করে দেন। মারিয়া তো ড্রিবল করতেই পারছে না ঠিকমত। মেসির বয়সও ৩৫, কড়া মার্কিংয়ের মধ্যেই মোমেন্ট অব ব্রিলিয়ান্স তৈরি করছে এটাই তো অবাক লাগে আমার কাছে।

এইসব লুপহোল ফিক্সড করার জন্য কোচ যখন মাথা কুটে মরছে, আপনারা চাচ্ছেন সুন্দর ফুটবল!

খেলব ভাই, সুন্দর ফুটবল খেলব। আপনাদের মন ভরিয়ে দিব। আপাতত প্রত্যেকটা ম্যাচ আর্জেন্টিনার জন্য নকআউট। বাকি যে পাঁচটা নকআউট ম্যাচ, তা পার করতে দেন। তারপর আপনাদের পছন্দের দলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করে আমরাও খেলব সুন্দর ফুটবল!

ততক্ষণে আর্জেন্টিনার ফুটবলটা আর্জেন্টিনাকেই খেলতে দিন না প্লিজ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link