কিংবদন্তি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার পেলে হৃদরোগজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কাতার বিশ্বকাপের ডামাডোলের মাঝেই পেলের অসুস্থতার খবর আসে।
৮২ বছর বয়সী পেলে আগে থেকেই মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। আজকে হঠাৎ কোনো রুটিন চেকাপ ছাড়াই সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে পেলেকে নিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী মার্কিয়া অকি এবং একজন সহকারী।
হাসপাতাল কতৃপক্ষের বরাতে জানা যায়, পেলে অতিরিক্ত ঘামছিলেন এবং হৃদযন্ত্রের জটিলতার সব ধরনের লক্ষণ তাঁর মাঝে দেখা যাচ্ছিলো। সে কারণেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও জানা যায় পেলের উপর কেমোথেরাপি কাজ করছে না।
শুরুতে ব্রাজিল সংবাদমাধ্যম পেলের অবস্থা আশংকাজনক এবং ক্রমেই অবনতি হচ্ছে এমন সংবাদ প্রকাশ করে। যদিও ব্রাজিলের বাইরে থাকা পেলের মেয়ে কেলি নসিমেন্তো তাঁর অবস্থা অবনতির কথা উড়িয়ে দেন।
সবাইকে দুশ্চিন্তামুখ থাকার পরামর্শ দিয়ে ইনস্টাগ্রামে নিজের আইডিতে কেলি লিখেন, ‘আমার বাবা আপাতত সুস্থ আছেন। কোনো চমক নেই, ক্যান্সারের নিয়মিত চিকিৎসার জন্যেই হাসপাতালে আসতে হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই আমি বাবার সাথে থাকবো এবং কথা দিচ্ছি ছবি আপলোড করবো।’ কেলির এমন পোস্টে যেন স্বস্তি ফিরে আসে বিশ্বজুড়ে শতকোটি ফুটবল ভক্তের।
তবে দেহের অবস্থা আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে এবং ক্যান্সারের পরিধি বুঝতে ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন আগামী কয়েকদিন জুড়ে। সহসা তাই বাড়ি ফেরা হচ্ছে না কালো মানিকখ্যাত পেলের। তাছাড়া গত কয়েকদিন নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।
খেতে কষ্ট হচ্ছিল, সবকিছু ভুলে যাচ্ছিলেন, নার্ভাস সিস্টেম ব্রেক করছিল পেলের। এরবাইরেও বছরখানেক ধরেই লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সুতরাং পেলে কবে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি ডাক্তাররা।
পেলের সাথে থাকা তাঁর স্ত্রী অবশ্য এখনো কিছু জানায়নি। অন্যদিকে তাঁর এজেন্ট জোসে ফ্রাগা জানান পেলের হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে এখনো কিছু জানেন না তিনি। বয়স বাড়ার সাথে সাথেই ফুটবল জাদুকরের দেহে বাসা বেঁধেছে নানা রোগব্যাধি।
গত বছরও ছয়দিন তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। সে সময়ে তাঁর কোলন টিউমার অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। সে সময়ে তাঁর ডাক্তার এবং শুভাকাঙ্ক্ষী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেছিলেন পেলে।
তিনি লিখেন, ‘আমি এখন ভালো আছি, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ডাক্তার মিগুয়েল এবং ডাক্তার ফ্যাবিওকে আমার চিকিৎসায় পাঠানোর জন্য। আমি সবার সাথে মিলে হাসিমুখে উপভোগ করতে চাই সবকিছু।’
যদিও এর আগে পেলের ছেলে জানান পেলে নিজের অসুস্থতার জন্য বিষণ্ণতায় ভুগছেন। এছাড়া সহকারী ছাড়া একা একা হাঁটতে না পারার দুঃখবোধ পেলেকে কুঁকড়ে দিয়েছে। যদিও পেলে পরবর্তীতে এসব দাবি উড়িয়ে দেন।
তিনি বলেন, ‘বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমি আমার শারীরিক সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েছি। আমার জীবনে ভালো এবং খারাপ দুটো সময়ই এসেছে। আমার বয়সী মানুষের জন্য এটাই স্বাভাবিক। আমি তাই ভীত নই, বরং সেই পুরনো পেলের মতো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
ফুটবল ইতিহাসের সেরা ফুটবলার হিসেবে পেলের নামটাই প্রথমে উচ্চারিত হয়। তিনবার বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি ব্রাজিলের হয়ে ৯২ ম্যাচে ৭৭ গোল করেন তিনি। ব্রাজিল সমর্থকদের কাছে আজো তিনি ঈশ্বরের আসনে অধিষ্ঠিত। কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিল তাই শেষ ষোল নিশ্চিত করলেও পেলের জন্য দুশ্চিন্তায় থাকবেন সমর্থকরা।