২০১৪ বিশ্বকাপেও ফাইনাল খেলছিলেন মেসি। জিতেছিলেন বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের গোল্ডেন বল পুরস্কারও। কিন্তু অধরা বিশ্বকাপ শিরোপার কাছে সেই গোল্ডেন বলও ছিল তুচ্ছ। আবারও ফাইনালের মঞ্চে ক্ষুদে জাদুকর। বিশ্বকাপ ট্রফি ক্ষুদে জাদুকরের হাতে উঠবে কিনা সেটা নির্ধারণ হবে ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে। অনুমিত ভাবেই মেসি নিশ্চিত করলেন, ফাইনাল ম্যাচই আর্জেন্টিনার জার্সিতে তার শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের ইতি ঘটবে লিওনেল আন্দ্রেস মেসির।
স্থানীয় সময় রাত তখন দুইটা বিশ মিনিট। মিক্সড জোনে মেসির জন্য তখনও অপেক্ষায় আর্জেন্টিনা আর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণ মাধ্যমের সাংবাদিকরা। প্রায় পাঁচ মিনিট সাংবাদিকদের সময় দিলেন মেসি। সেখানেই জানালেন, ফাইনাল ম্যাচই বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে তার শেষ ম্যাচ।
সেমিফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালনিকেও এটিই মেসির শেষ বিশ্বকাপ কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তিনি। কিন্তু সব প্রশ্নের অবসান ঘটিয়ে অনুমিত ভাবেই মেসি ঘোষণা দিলেন ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন না তিনি।
মেসি বলেন, ‘ফাইনাল দিয়ে বিশ্বকাপ ক্যারিয়ার শেষ করতে পারব ভেবে গর্ব লাগছে। নিশ্চিতভাবেই রোববার হবে বিশ্বকাপে আমার শেষ ম্যাচ। পরের বিশ্বকাপ অনেক দূরের যাত্রা। ততদিন পর্যন্ত আমি খেলব বলে মনে হয় না। তাই সবচেয়ে ভালোভাবে শেষ করার আশা রাখি।’
এবারের বিশ্বকাপে চতুর্থ বারের মত ম্যাচ সেরা পুরষ্কার জেতার পর মেসি অনেক কথাই বললেন। প্রথম ম্যাচটা সৌদির বিপক্ষে হারের পর কঠিন সময়ের স্মৃতিচারণাও করলেন। বললেন, ‘সত্যিটা হল এখন মাথার ভেতর অনেক কিছুই কাজ করছে। বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটা খেলব, যেটা আমরা চেয়েছি। জানি না এটা আমার সেরা বিশ্বকাপ কি না। আমরা এখানে আসার পর থেকেই উপভোগ করছি। হার দিয়ে শুরু করলেও জানতাম এই দলটা কী করতে পারে। আর্জেন্টিনা আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে এবং ফাইনালে আমরা নিজেদের সর্বস্বই নিঙরে দেব। জয়ের জন্য যা যা করা দরকার, তাই করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনালে ১২০ মিনিট খেলা সহজ ছিল না আমাদের জন্য। আমরা ক্লান্ত ছিলাম কিন্তু দলটি সব সময় সেরাটা দেবার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। আমরা জানতাম আমাদের জন্য কঠিন ম্যাচ অপেক্ষা করছে এবং সেই কঠিন চ্যালেঞ্জও আমরা জিতেছি।’
পুরো দলকে নিয়েই উচ্ছ্বসিত মেসি। বললেন, ‘এই দলটির দলীয় শক্তি অসাধারণ। পাশাপাশি খুব কৌশলী তারা। আমরা জানি কিভাবে কঠিন মুহুর্ত গুলো মোকাবেলা করতে হয়। যেমনটা কোচ বলেছেন, এই দলটি খুবই কৌশলী একটি দল। তারা যখন কষ্ট করে কিভাবে বিরুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। কখন বলের নিয়ন্ত্রন পেতে হবে, কখন প্রেস করতে হবে এসব খুব ভাল বুঝতে পারে দলটি। সর্বোপরি খেলা খুব দ্রুতই পড়তে পারে তারা।’
ফাইনালে ওঠার পর কোচিং স্টাফদেরও ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি মেসি, ‘আমাদের অসাধারণ কোচিং স্টাফ রয়েছে। ম্যাচের প্রতিটা মুহুর্তে প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস তারা আমাদের ধরিয়ে দেয়। আমরা কখনোই খেলার মাঝে হতবুদ্ধি হয়ে থাকি না কারণ আমরা জানি আমাদের কি করতে হবে। আমরা জানতাম সেমিফাইনাল আমাদের জন্য কঠিন হবে। বল পজিশনে ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে থাকে সব সময়। কিন্তু আমরা জানতাম বল রিকোভার করা আমাদের শক্তির জায়গা। তারা মাঝে মাঝেই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল এবং আমরা প্রচুর জায়গা পাচ্ছিলাম।’
১৮ ডিসেম্বর লুসাইলে নিজের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলতে নামা মেসি নিশ্চয় শিরোপা হাতেই বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে বিদায় নিতে চাইবেন। বৈশ্বিক আসরে টানা ৩ বার ফাইনালে হারা দুঃখ ঘুচিয়েছিলেন কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতে। এবার সেই অধরা বিশ্বকাপ জিতে নিজের ক্যারিয়ারের পূর্ণতা দিয়েই নিশ্চয়ই আর্জেন্টিনার জার্সিটি তুলে রাখতে চাইবেন মেসি। অনেকের কাছেই হয়তো তখন সর্বকালের সেরা হিসেবে মেসির নাম উচ্চারণ নিয়ে কোনো দ্বিধা থাকবে না।