মেসি-ম্যারাডোনা: মিল/অমিল

কাতারে শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বসেরার স্বাদ পেল আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের অ্যাজটেকা স্টেডিয়াম যেন এদিন ফিরে এসেছিল মধ্যপ্রাচ্যের লুসাইলে। সেদিনের ফাইনালে আর্জেন্টিনার মধ্যমণি ছিলেন ম্যারাডোনা, আর লুসাইলে তাঁদের সারথি ছিলেন লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপ ফাইনালের পর ম্যারাডোনার সতীর্থ এবং ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য হোর্হে ভালদানো কথা বলেছেন দুই প্রজন্মের দুই তারকার মাঝের মিল-অমিল নিয়েই। 

ফাইনালে ২০১৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সাথে আর্জেন্টিনার লড়াইটা হয়েছে সেয়ানে সেয়ানেই। আর্জেন্টিনার যেমন ছিলেন লিওনেল মেসি, তেমনি ফরাসি ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। প্রথমার্ধে মেসিরা ২-০ গোলে এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে বিপুল বিক্রমে ফিরে আসে ফরাসিরা।

মাত্র ৯৭ সেকেন্ডের ব্যবধানে জোড়া গোল করেন এমবাপ্পে। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে, সেখানে মেসি ম্যাজিকে আরও একবার শিরোপার দ্বারপ্রান্তে আলবিসেলেস্তেরা। কিন্তু এমবাপ্পের হ্যাটট্রিক পূরণ করা গোল ম্যাচে আরো একবার সমতায় ফেরে ফ্রান্স।

কিন্তু, টাইব্রেকারে এমি মার্টিনেজের সাথে আর পেরে ওঠা যায়নি, কোম্যান এবং শুয়ামেনি মিস করলে ৪-২ গোলে ম্যাচ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। একদিকে, তখন ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপে শিরোপার স্বাদ পাওয়া মেসি আনন্দে ভাসছেন, অন্যদিকে তরুণ এমবাপ্পে হয়ে রইলেন ট্র্যাজিক হিরো। 

মেসি না ম্যারাডোনা কে সেরা? এক দশক আগে বিশ্ব ফুটবলে মেসির আগমণের পর থেকেই বিশ্ববাসী মেতে ছিল এই বিতর্কে। আন্তর্জাতিক ট্রফি জিততে না পারায় মেসি এতদিন পিছিয়ে ছিলেন ম্যারাডোনার চাইতে। কিন্তু গত দুই বছরে কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপ জিতে সমালোচকদের জবাব দিয়েছেন। এবারের বিশ্বকাপ পুরোটাই ছিল মেসিময়, নক আউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচেই গোল করে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। 

ফাইনালের স্নায়ুক্ষয়ী লড়াই ছুঁয়ে গেছে ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের সদস্য হোর্হে ভালদানোকেও। তিনি বলেন, ‘আমি ৮৬ বিশ্বকাপের ফাইনালের চাইতেও এদিন বেশি দুশ্চিন্তায় ছিলাম। যখন আপনি মাঠে খেলবেন তখন আপনি খানিকটা নির্ভার থাকতে পারবেন বাইরের চাপ থেকে, কিন্তু লুসাইলের ফাইনালটা ছিল অন্যরকম অভিজ্ঞতা। ম্যাচ দেখার সময় যত গড়িয়েছে, চাপ তত বেড়েছে।’

ম্যারাডোনার সাথে নিজে খেলেছেন আর মেসিকে দেখেছেন বিশ্বকাপ জিততে। দুজনের মাঝে কে সেরা? – এই বিতর্কে অবশ্য জড়াননি ভালদানো। কৌশলী জবাবে এড়িয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, ‘মেসি এবং ম্যারাডোনার মাঝে মিল হল তাঁরা দুজনেই অসাধারণ। তবে দুজনের মাঝে মূল পার্থক্যটা হল ৮৬ বিশ্বকাপের সময় ম্যারাডোনার বয়স ছিল ২৬ বছর। সে ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত ফর্মে, বয়স এবং শারীরিক সক্ষমতা সবই ছিল বিশ্বকাপ জেতার অনুকূলে। অন্যদিকে, মেসিকে জিততে হল ৩৫ বছর বয়সে এসে। এ বয়সে এসে নিজের সেরাটা দেয়া খুবই কষ্টসাধ্য, বেশিরভাগ ফুটবলারই অবসরের কথা ভাবে এই বয়সে এসে। মেসির প্রতিভা বুঝাতে কেবল এই তথ্যটাই যথেষ্ট।’

এমনকি মেসির ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি এই আর্জেন্টাইন গ্রেট। বিশ্বকাপ শুরুর আগে পিএসজিতে খেলার সময় মেসির এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন ভালদানো। সে সময় নাকি মেসি তাঁকে জানিয়েছিলেন কাতার বিশ্বকাপ জিততে পারলে পরের বিশ্বকাপ খেলার কথা ভাববেন মেসি।

ভালদানোর দাবি, ‘বিশ্বকাপের আগে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এবার নিয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপ হল তোমার। এখনো পর্যন্ত ছয়টি বিশ্বকাপ খেলতে পারেনি কেউই, তুমি খেলবে কিনা। সে তখন বলেছিল এটা অসম্ভব। তবে জানিয়েছিল যদি সে কাতার বিশ্বকাপ জিততে পারে তবে পরবর্তী বিশ্বকাপের আগে অবসর নেবে না।’ 

ভালদানো আরো বলেন, ‘আমরা দেখতে উন্মুখ মেসি এটা করতে পারে কিনা। ফুটবল ইতোমধ্যে দেখিয়েছে ছয়টি বিশ্বকাপ খেলা রীতিমতো অসম্ভব।’ মেসিকে মাঠে খেলতে দেখাটা সব সময়ই আনন্দের। চার বছর বাদে ৩৯ বছর বয়সী মেসিকে বিশ্বকাপে খেলতে দেখাটা হবে ভিন্ন এক অনুভূতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link