দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। দিয়াগো ম্যারাডোনার পর আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ শিরোপা উপহার দিয়েছেন গ্রহের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন এই ক্ষুদে জাদুকর। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স আর নেতৃত্বগুণে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন মেসিই।
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৪ সালের পর আবারো জিতেছেন গোল্ডেন বল। ফ্রান্সের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরষ্কারও। এমন অতিমানবীয় বিশ্বকাপ কাটানোর পর সর্বকালের সেরা হিসেবে অনেকটাই নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন মেসি।
তবে আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচানোর আরেক নেপথ্য নায়ক কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি। আর্জেন্টিনার কোচ হবার সময় সিভি খুব বেশি ভারি ছিল না স্ক্যালোনির। কিন্তু খাঁদের কিনারায় থাকা দলকে স্কালনি নিয়ে আসলেন সঠিক কক্ষপথে।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স ছিল আর্জেন্টিনার। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র আর ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠাই অনিশ্চিত ছিল আলবিসেলেস্তেদের। গ্রুপ রানার আপ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলেও ফ্রান্সের কাছে হেরে শেষ ষোলোতেই শেষ হয় আর্জেন্টিনার রাশিয়া বিশ্বকাপ যাত্রা।
এমন ভয়াবহ পারফরম্যান্সের পর আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) ২০১৮ সালের ৩ আগস্ট দায়িত্ব তুলে দেয় স্ক্যালোনির হাতে। আর্জেন্টিনার অনুর্ধ্ব-২০ দল ছাড়া তেমন বড় কোনো জায়গায় কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা ছিল না স্ক্যালোনির। দায়িত্ব নিয়ে ধীরে ধীরে দলকে গুছিয়ে উঠতে থাকেন তিনি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব খুব বেশি ভাল যাচ্ছিল না আর্জেন্টিনার।
কিন্তু মেসি এবং স্ক্যালোনির যুগল বন্দিতেই ছন্দ ফিরে পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। রবিবার ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালের পর বাছাই পর্ব থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সেই গল্পই শোনালেন স্ক্যালোনি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ব্রাজিলের সাথে গোলশূন্য ড্র এর পর মেসির সাথে কথা বলেন স্ক্যালোনি, ‘আমি ভাবছিলাম এমন পারফরম্যান্স চলতে থাকলে সামনের দিন গুলো খুবই কঠিন হবে আমাদের জন্য। হতাশা ঘিরে ধরবে আমাদের। আমি মেসির সাথে এটি নিয়ে কথা বলি। মেসি আমাকে বলে, আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাব এবং সম্ভবত সামনের দিন গুলো আমাদের জন্য ভাল হবে, যদি তা নাও হয় অন্তত আমরা সেরা চেষ্টাটা করব।’
স্ক্যালোনি বলেন, ‘মেসির এই কথা আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করে।’সেখান থেকে শুরু করে মেসি আর স্ক্যালোনির যুগলবন্দিতে নিজেদের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা সময় পার করেছে আলবিসেলেস্তেরা। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জেতার পর চলতি বছর ইতালিকে হারিয়ে তারা জিতেছে ফাইনালিসিমা। আর সর্বশেষ বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্ব জিতে নিজেদের ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়েছে মেসি, স্ক্যালোনিরা।
বিশ্বকাপের ফাইনালের আগেই মেসি ঘোষণা দিয়েছিলেন এটিই তার শেষ বিশ্বকাপ। মেসির ভবিষ্যত নিয়ে নিজের ভাবনা জানিয়েছেন স্ক্যালোনিও, ‘পরবর্তী বিশ্বকাপ স্কোয়াডে মেসির জন্য একটি জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে আমাদের। ২০২৬ বিশ্বকাপেও মেসি চাইলে খেলতে পারে।’
তবে সিদ্ধান্ত নেবার ভার আর্জেন্টাইন অধিনায়কের ওপরই ছেড়ে দিতে চান স্ক্যালোনি, ‘আমার মনে হয় নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার সে অর্জন করে নিয়েছে। জাতীয় দলের হয়ে তার আর প্রমাণের কিছু বাকি নেই। এমন কিছু নেই যা সে দলের জন্য করেনি।’
খেলোয়াড় মেসির পাশাপাশি অধিনায়ক মেসির নেতৃত্বগুণে মুগ্ধ স্ক্যালোনি, ‘এমন একজন খেলোয়াড়কে কোচিং করানো অনেক আনন্দের। সে তার সতীর্থদের যেভাবে অনুপ্রাণিত করে এমনটা আমি আর কারো মধ্যে দেখিনি। আমি মেসির মত এমন প্রভাবক আর দেখি নি। এটা দারুণ।’
দুই ‘লিওনেল’ এর এমন দারুণ বোঝাপড়া আর একজন আরেকজনের ওপর ভরসা রাখাই টনিক হিসেবে কাজ করেছে রাশিয়া বিশ্বকাপেও চরম বাজে সময় পার করা আর্জেন্টিনার জন্য।