‘সোহান হয়তো ওভার কনফিডেন্ট’

শ্রেয়াস আইয়ার ও ঋষাভ পান্ত জুটি তখন মাত্র খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসতে চাইছে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে বাংলাদেশের বোলারদের চাপে ফেলার পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন দুজন মিলে। তবে সাকিব আল হাসানের সাথে মাইন্ড গেমে পেরে উঠলেন না শ্রেয়াস। সাকিবের বলটা সামনে এসে খেলতে গিয়ে মিস করলেন। ক্রিজের অনেকটা বাইরে চলে এসেছেন, বলটা পৌছে গিয়েছে উইকেট রক্ষকের হাতে, সহজ স্ট্যাম্পিং এবং আউট।

এমনটাই হওয়ার কথা ছিল, তবে হয়নি। সাকিব শ্রেয়াসকে পরাস্ত করেছেন ঠিকই, তবে বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান বলটা তালুবন্দীই করতে পারলেন না। বলটা সোহানের গ্লাভসের ভিতরে গিয়েও মাটিতে পড়ে গেল। অথচ তখনো ক্রিজে ঢুকতে পারেননি শ্রেয়াস আইয়ার।

টেস্ট ক্রিকেটে এত সুন্দর বল, এত সুন্দর সুযোগ কমই আসে। তারপর আবার এতটা সময় পাওয়ার পরও যখন একজন উইকেটরক্ষক সেটা কাজে লাগাতে পারেন না তখন প্রশ্ন উঠবেই। সোহান যখন সুযোগটা মিস করেছিলেন তখন আইয়ারের ঝুলিতে মাত্র ২১ রান। জীবন পেয়ে এই ব্যাটার শেষ পর্যন্ত করেছেন ৮৭ রান। ঋষাভ পান্তের সাথে মিলে গড়েছেন ১৫৯ রানের জুটি। যে জুটির কারণেই বাংলাদেশের বিপক্ষে লিড নিতে পেরেছে ভারত।

ফলে সোহান ওই সহজ সুযোগটা হাতছাড়া না করলে আজ বেশ ভালো অবস্থানে থেকে দিন শেষ করতে পারতো বাংলাদেশ। অথচ ক্রিকেট পাড়ায় কমবেশি সবার মতেই দেশের সেরা উইকেটরক্ষক সোহান। ঘরোয়া ক্রিকেটে কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও গ্লাভস হাতে নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। ফলে উইকেটের পিছনে সোহানই বাংলাদেশের প্রথম পছন্দ।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে উইকেটের পিছনে সোহান এমন ভুল করছেন হরহামেশাই। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁর এসব ভুলের কারণে বড় মাশুল দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেও দু’টি ক্যাচ মিস করেছিলেন এই উইকেটরক্ষক। একেবারে হাতের মুঠোয় থাকা চেতেশ্বর পূজারার ক্যাচটাও বিস্ময়কর ভাবে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।

ওদিকে ব্যাট হাতেও খুব একটা ভালো সময় কাটছেনা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই আছেন অফ ফর্মে। সাদা পোশাকেও অব্যাহয় রয়েছে সেই ধারাবাহিকতা। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে করেছেন যথাক্রমে ১৬ ও ৩ রান। আর দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেছেন মাত্র ৬ রান।

তবে সবচেয়ে বেশি বিস্ময় জাগে সোহানের কিপিং নিয়ে। এত ভালো কিপার হবার পরেও কেন এই সহজ সুযোগ গুলো হাতছাড়া করছেন তা বোধগাম্য নয় অনেকেরই। সোহানের মেন্টর ও দেশের নামী কোচ মিজানুর রহমান বাবুলও ধোঁয়াশায় আছেন সোহানকে নিয়ে।

গ্লাভস হাতে সোহান কেন এমন গড়মিল পাকাচ্ছেন এমন প্রশ্ন করা হলে বাবুল বলেন, ‘আমি খুব বেশি খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছিনা, তাই মন্তব্য করা একটু কঠিন। তবে আমার কাছে মনে হয় সে যেহেতু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাটিং ভালো করে নাই বা ছন্দে নাই, তাই হয়তো অতিরিক্ত কোনকিছু করতে চায় কিপিং করার সময়। হয়তো সে ওভার কনফিডেন্ট কিংবা অন্যটাও হতে পারে। তাঁর হয়তো কনফিডেন্টই কমে গিয়েছে রান না পাওয়ায়।’

এছাড়া সোহানের মনোযোগ নিয়েও কোন সমস্যা থাকতে পারে বলে মনে করছেন এই কোচ। তিনি বলেন, ‘আসলে ওর (সোহান) সাথে কথা বললে পরিষ্কার হওয়া যাবে সে আসলে কী ভাবছে। সোহান তো প্রমাণ করেই এসেছে যে, সে সেরা কিপার। তবে এখন তাঁর মনোযোগ সরে যেতে পারে। যেহেতু সে একবার জাতীয় দলে ঢুকেছিল আবার বের হয়েছে, এখন আবার এসেছে। তাঁর জায়গাটা নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে এসব অনেক কিছুই তাঁর ভাবনায় আসতে পারে।’

ফলে নিজের জায়গাটা ধরে রাখতে হইলে ব্যাট হাতে রান করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি সোহানের জন্য। ব্যাট হাতে রান পেলে হয়তো তাঁর জন্য কিপিংটাও আরো সহজ হয়ে উঠবে। নাহলে কিপিংয়ে বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করতে গিয়ে আদৌ কিছুই করা হয়ে উঠবেনা তাঁর।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link