স্রেফ ১৪৫ রান, মিরপুরে স্বাগতিক বাংলাদেশকে হারাতে মাত্র ১৪৫ রানই যথেষ্ট ছিল ভারতের জন্য। বিরাট কোহলি, চেতেশ্বর পুজারাদের মত তারকাসমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইন আপের জন্য এটি মামুলি ব্যাপারই বটে। তবে এমন ভাবনার পরিবর্তন ঘটতে শুরু হয় ভারতীয়দের ইনিংস শুরু হতেই। মিরপুরের বোলিং স্বর্গে রীতিমতো খাবি খেতে থাকে দলটির ব্যাটাররা।
একটা সময় ৭৪ রানে সাত উইকেট হারানো ভারত পৌঁছে যায় খাদের কিনারায়। ১৪৫ রানের টার্গেটকেই মনে হচ্ছিল পাহাড়। তবে এক পর্বতারোহীর কাঁধে ভর করে ঠিকই সেই পাহাড় ডিঙিয়ে গিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। সেই পর্বতারোহীর নাম রবিচন্দ্রন অশ্বিন, আর এই জয়ে পার্শ্বনায়কের ভূমিকায় ছিলেন আরেক ব্যাটার শ্রেয়াস আইয়ার।
৩৬ বছর বয়সী অলরাউন্ডার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৮৮ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে আছে পাঁচটি সেঞ্চুরি। তবে ব্যাটার অশ্বিনের সামর্থ্য এসব সেঞ্চুরিতে যতটা ফুটে ওঠে সেটির চেয়ে বেশি বোঝা যায় মিরপুরের পিচে তাঁর ৪২ রানের ইনিংসের দিকে তাকালে। জীবনের ছুঁড়ে দেয়া কঠিন সময়গুলো পুল কিংবা ফ্লিকে যেভাবে বাউন্ডারি ছাড়া করতে হয়, সেটাই শিক্ষা দেয় অশ্বিনের এই অপরাজিত ৪২।
৭৪ রানের মাথায় যখন সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে অ্যাক্সার প্যাটেল আউট হয়েছিলেন জয় থেকে তখনও ৭১ রান দূরে ভারত। ইন ফর্ম শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে তখন নতুন করে শুরু করেন নয় নাম্বারে ব্যাট করতে আসা রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এই দুইজনের ৭১ রানের জুটিতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের স্বাদ পায় দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
২০২১ সালের জানুয়ারির সেই সিডনির কথা মনে আছে? ইনজুরি নিয়েই রবিচন্দ্রন অশ্বিন সামলেছিলেন অজি পেসারদের গোলার ন্যায় ছুঁড়ে দেয়া বলগুলো। সেদিন নিশ্চিত পরাজয়ের হাত থেকে দলকে রক্ষা করেছিলেন তিনি। আবার চলতি বছরের এশিয়া কাপে যখন ১ বলে ২ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের তখন নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে স্ট্রাইক প্রান্তে ছিলেন অশ্বিন। স্নায়ুচাপে ভেঙে না পড়ে ঠিকই সেই সমীকরণ মিলিয়ে ফেলেছিলেন এই অলরাউন্ডার।
সর্বশেষ মিরপুরে আবারও দেখা মিলেছে অশ্বিনের ব্যাটিং বীরত্ব। কোহলি, পুজারার মত ক্ল্যাসিক্যাল আর পান্তের মত ইনফর্ম ক্রিকেটার যখন ব্যর্থ হয়েছিলেন তখনই ত্রাতা হয়ে এসেছেন তিনি; শ্রেয়াস আইয়ারের সাথে তাঁর গড়া ৭১ রানের জুটি চতুর্থ ইনিংসে সফল রান চেজের ক্ষেত্রে অষ্টম উইকেটে সবচেয়ে সেরা। শুধু ব্যাট হাতে বললে ভুল হবে, দুর্দান্ত অফ স্পিন বোলিংয়ের নিজের বোলার পরিচয়কে মহিমান্বিত করেছেন অশ্বিন।
ভারতের ক্রিকেট ইতিহাস নেহায়েৎ ছোট নয়। তাই স্মরণীয় জয়ের সংখ্যাও অনেক বেশি। ওভাল ১৯৭১, পোর্ট অব স্পেন ১৯৭৬, ক্যান্ডি ২০০১, ব্রিসবেন ২০২১ ইত্যাদি ভারতের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর টেস্ট জয়ের মধ্যে উপরের দিকেই থাকবে। তবে এসব থেকে মিরপুরের এমন জয়কে পিছিয়ে রাখার উপায় নেই। এই জয় শুধু সামান্য জয় নয়, বরং প্রতিপক্ষের গ্রাস থেকে ছিনিয়ে আনা অর্জন। হারের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যই বছরের শেষ ম্যাচকে অনেক দিন মনে রাখবে টিম ইন্ডিয়া।
এমন শ্বাসরূদ্ধকর জয়ের ফলে এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন টিকে আছে ভারতের। তবে সেজন্য আসন্ন সিরিজে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ভাল ফলাফল চাই তাঁদের। আর এটি যে মোটেও সহজ কাজ নয়, সেটি জানা আছে সবারই।
বিশেষ করে লোকেশ রাহুল, পুজারা, কোহলিদের অফ ফর্ম আর নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মার ইনজুরি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের টিম ম্যানেজম্যান্টের জন্য। ঘরের মাঠে ক্যাঙ্গারুদের আতিথেয়তা দেয়ার আগে এসব দুশ্চিন্তা কাটিয়ে ওঠাই দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।