সান্তোস ড্রেসিংরুমে পেলের একান্ত ক্যাবিনেট

সান্তোসের ঘরের ছেলে পেলে যেদিন ফুটবলকে বিদায় বলেছিলেন, তার পরেরদিন ব্রাজিলের একটি সংবাদ মাধ্যম খবরের শিরোনাম করেছিল, ‘আজ আকাশটাও কাঁদছে।’ এবার ফুটবলের সমার্থক শব্দ হয়ে ওঠা নামটা গতকাল যখন ডিসেম্বরের শীতের রাতে তাঁর পা দিয়ে শাসন করা পৃথিবীকে বিদায় বললেন তখন বোধহয় কান্নাও যথেষ্ট হত না আকাশের জন্য।

এই ‘এডসন আরান্তো দো নসিমেন্তো’ মানুষটাই যে এক আকাশ সমান বিশালত্ব নিয়ে পৃথিবীতে রাজ করতে এসেছিলেন। ফুটবলের জন্য সবচেয়ে শোকের দিন আজ। কিন্তু ব্রাজিল আর সান্তোসের জন্য বোধহয় তা আরো বেশি। তাদের প্রিয় ‘মানিক’ যে আর বেঁচে নেই।

দুনিয়াতে বেঁচে নেই পেলে, কিন্তু তাঁর কাজ আর কীর্তি নিয়ে রহস্য আর বিস্ময়ের তো শেষ হবে না কখনো। এমনই আরেক রহস্য হয়ে আছে তাঁর ক্লাব সান্তোসের একটি ক্যাবিনেট। পেলে সান্তোসের জার্সি তুলে রেখেছেন প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে। কিন্তু সান্তোসের ড্রেসিংরুমে এখনো আছে সেই ক্যাবিনেট। শুধু আছেই না, সান্তোসের ড্রেসিং রুমের একটি আলোকিত জায়গা হয়ে আছে ফুটবলের রাজার এই ক্যাবিনেট।

পেলের অবসরের পর অসংখ্যা খেলোয়াড় খেলেছেন সান্তোসের জার্সি গায়ে। অবিশ্বাস্য সব প্রতিভা আর ব্রাজিলের কিংবদন্তি তুল্য খেলোয়াড় এসেছেন এই ড্রেসিং রুমে। কিন্তু ড্রেসিংরুমে পেলের সেই ক্যাবিনেট আছে যেমনটা পেলে রেখে গিয়েছিলেন।

সাবেক সান্তোস তারকা গুস্তাভো লিয়াল বলছিলেন তেমন কথাই, ‘আমি সান্তোসের ড্রেসিংরুমে ছিলাম তখন পেলে যে জায়গা ব্যবহার করত সেটা কেউই ব্যবহার করেনি।’ সান্তোসের হয়ে সবশেষ ম্যাচ খেলার সময়ই নিজের ব্যবহার করা সেই ক্যাবিনেট শেষ বারের মত ব্যবহার করেন পেলে। এরপর আর খোলা হয়নি সেই ক্যাবিনেট।

গুস্তাভো লিয়াল বলেন, ‘এই ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলার সময় থেকেই তাঁর একটি বন্ধ ক্যাবিনেট আছে। এর মধ্যে তিনি কিছু জিনিস রেখে এটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি যখন তোমাদের মাঝে আর থাকব না তখনই শুধু তোমরা এটি খুলতে পারবে।’

নিজেদের ‘কালো মানিক’কে হারিয়ে শোকে স্বব্ধ হয়ে আছে ব্রাজিল। কিন্তু যদি গুস্তাভো লিয়ালের কথাই সত্যি বলে মেনে নেয়া হয়, পেলের মৃত্যুর পর এখন সেই বিখ্যাত লকারটি খুলতে পারে সান্তোস কর্তৃপক্ষ। ঐতিহাসিক এই লকারে কি রেখেছিলেন পেলে তা নিয়ে নিশ্চয়ই কৌতুহল থাকবে সারা বিশ্বের ফুটবল প্রেমীদের।

পেলের এই ক্যাবিনেটকে স্থায়ীভাবে পেলের জন্য সংরক্ষিত রাখবে সান্তোস কর্তৃপক্ষ এটা অনেকটাই অনুমেয়। তবে কি আছে এই ক্যাবিনেটে তা দেখার অপেক্ষায়ই আছে ফুটবল প্রেমীরা। অনেকেই মনে করছেন, সান্তোসের হয়ে খেলা সবশেষ ম্যাচের বুটজোড়াই সেই ক্যাবিনেটে তুলে রেখেছেন এই কিংবদন্তি। আবার অনেকেরই ধারণা, নিজের ক্যারিয়ারের প্রায় সবটা সময় যে ক্লাবে পেলে কাটিয়েছেন সেই ক্লাবের জন্য কৃতজ্ঞতা বা ধন্যবাদ জানিয়ে কোনো বার্তা রেখে যেতে পারেন ফুটবলের রাজা।

নিজেদের ঘরের ছেলের মৃত্যুর শোকে আচ্ছন্ন সান্তোস। অর্ধ শতাব্দী ধরে বন্ধ থাকা সেই বিখ্যাত ক্যাবিনেট নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি তারা। তবে যেখানে কৈশোর থেকে বেড়ে উঠে ফুটবল বিশ্বে রাজত্ব করেছেন পেলে সেই সান্তোস ক্লাবও নিশ্চয়ই এই ঐতিহাসিক ক্যাবিনেট নিয়ে মনে রাখার মতোই কিছু করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link