দেখতে দেখতে কেটেছে দিন; ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাতে উল্টাতে এখন সময় এসেছে ক্যালেন্ডার বদলানোর। অনেক কিছুর মত বাংলাদেশের ক্রিকেট দলও কাটিয়েছে ব্যস্ত একটি বছর। গত বারো মাস দেশে-বিদেশে কতবারই নেমেছে ক্রিকেটীয় দ্বৈরথে। এসব দ্বৈরথে কখনো হেরেছে টিম টাইগার্স, কখনো আবার মাঠ ছেড়েছে মনে রাখার মত জয়কে সঙ্গী করে।
বাংলাদেশ দলের ২০২২ সালের শুরুটা হয়েছিল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে লাল বলের খেলায় হারানোর মধ্য দিয়ে। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে আফিফ-মিরাজের মহাকাব্যিক জুটিতে জয় এসেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয় আর উইন্ডিজকে তাঁদের মাটিতেই ধবলধোলাই করা হয়েছে। এছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মত ম্যাচ জিতেছে এবারই। সর্বশেষ ভারতকে রোমাঞ্চকর ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
অন্যদিকে, পরাজয়ের গ্লানিও কম নয়। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অসহায় আত্মসমর্পণ, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ হার, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বড় কোন দলকে না হারানো, ভারতের বিপক্ষে সাদা পোশাকে ইতিবাচক ফলাফল না আনতে পারা ২০২২ সালে বাংলাদেশ দলের বড় ব্যর্থতা।
এবার দলের জয়-পরাজয়ের হিসেব বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে নজর দেয়া যেতে পারে। এমন কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছেন যারা তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের হয়ে দুর্দান্ত ছিলেন এই বছর।
এক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হয় লিটন দাসের কথা। ২০২১ সালেও যেই নামটা ছিল নেহায়েত ট্রোলের বিষয় সেটিই ২০২২ সালে পরিণত হয়েছে ব্যাটিং লাইন আপের আস্থার জায়গায়। তিন ফরম্যাটেই এই বছর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন। শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তজার্তিক পর্যায়েও বছরের সেরা ব্যাটারদের একজন তিনি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ১৯২১ রান করেছেন লিটন। দেশে কিংবা দেশের বাইরে, লাল কিংবা সাদা বলে সব অবস্থাতেই তাঁর ব্যাট হেসেছে।
লিটন দাসের মত বছর জুড়েই পারফর্ম করেছেন আরেক অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। বিশেষ করে টেস্ট এবং ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের সেরা তারকাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। ওয়ানডে ফরম্যাটে ব্যাট হাতে ৬৬ গড়ে ৩৩০ রান করেছেন তিনি; আর বল হাতে নিয়েছেন ২৪ উইকেট।
ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের নায়ক ছিলেন এই ডান-হাতি। দুইটি ম্যান অব দ্য ম্যাচ এবং সিরিজ সেরার পুরস্কার নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে, টেস্টে রান তেমন করতে না পারলেও ৩১ উইকেট তুলে নিয়েছেন। ক্রিকেটের দীর্ঘতম দুই সংস্করণেই বাংলাদেশের এই বছরের সেরা বোলার মেহেদি মিরাজ।
বাংলাদেশের সেরা পারফর্মারের তালিকায় সাকিব আল হাসানের নাম থাকবে না সেটি বোধহয় কল্পনাও করা যায় না। অভিষেকের পর থেকে বাইশ গজে রাজত্ব করে যাওয়া সাকিব ২০২২ সালেও ছিলেন দারুণ। নিজের সেরা ছন্দে না থাকলেও অন্য অনেকের চেয়েই ভাল করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৩০টি আন্তজার্তিক ম্যাচ খেলা সাকিব ৯২২ রান করেছেন আর তুলে নিয়েছেন ৪৪ উইকেট।
লিটন দাসের মত দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটেছে পেসার এবাদত হোসেনের। ২০২২ সালে যেন নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন তিনি। জানুয়ারিতে কিউই-বধ এর ম্যাচে নায়ক ছিলেন এই ডানহাতি। এরপর থেকেই সাদা পোশাকে টানা পারফর্ম করেছেন তিনি। এক বছরে আট টেস্ট খেলা এবাদত মোট ২১ বার ব্যাটারদের প্যাভিলিয়নে ফিরিয়েছেন।
ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি দলেও সুযোগ পেয়েছেন এই পেসার। টি-টোয়েন্টিতে গড়পড়তা হলেও পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন তার সবটাই কাজে লাগিয়েছেন তিনি। ৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৯ গড়ে শিকার করেছেন ১১ উইকেট।
প্রচুর ব্যঙ্গ বিদ্রুপের শিকার হলেও ২০২২ সাল ভালোভাবেই কাটিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টেস্টে এই বছর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে চতুর্থ সর্বোচ্চ। বিশ ওভারের ম্যাচে স্ট্রাইক রেটে পিছিয়ে থাকলেও রান করেছেন ৩০ গড়ে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয়ের ম্যাচে সামনে থেকে অবদান রেখেছিলেন তিনি।
তাসকিন আহমেদও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই দলের পেস আক্রমণের নেতা তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যে দুই ম্যাচ জিতেছে টিম টাইগার্স দুটিতেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ‘ঢাকা এক্সপ্রেস’। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৩৩ উইকেট নিজের ঝুলিতে পুরেছেন তিনি।
সর্বশেষ মিরপুর টেস্টে লড়াই করেও হেরেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের পরে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন আসছে বছর আরো ভাল করবে বাংলাদেশ। দেশের সবচেয়ে বড় পোস্টার বয়ের এই বাসনাকে বাস্তবে রূপান্তর করতে এগিয়ে আসতে হবে দলের বাকিদের। আরো ভাল করতে লিটন, মিরাজদের; অফ ফর্মে থাকা বাকিদেরও ফিরতে হবে এবাদতের মত করে।