ফুটবলেও আসছে কনকাশন বদলি

ক্রিকেটে ইতিমধ্যে ব্যাপারটা পাকা একটা জায়গা করে নিয়েছে।

মূলত মাথায় বল লেগে ফিলিপ হিউজের মৃত্যুর পর থেকেই ক্রিকেট এই ব্যাপারটার সমাধাণ খুজছিলো। শেষ পর্যন্ত আইসিসি একমত হয়েছে যে, কারো মাথায় বল লাগার পর সামান্য কোনো লক্ষন দেখা গেলে তার বদলী পাবে দলগুলো। এই আইন শুরুর পর থেকে ক্রিকেটে অনেকেরই এরকম বদল হয়েছে।

ক্রিকেটের পর এবার ফুটবলেও প্রচলন হতে যাচ্ছে কনকাশন বদলির। জানুয়ারিতেই করা হবে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ । ফুটবলের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি) কনকাশন বদলির নিয়ম যাচাই বাছাইয়ের জন্য দুটি ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে।

যেসব প্রতিযোগিতায় প্রতিদলে পাঁচজনের কম বদলি নামানোর নিয়ম রয়েছে সেখানে পাঁচজন এবং অতিরিক্ত সময়ে আরো একজন নামানোর ফিফার যে প্রস্তাব ছিল, এইদিন তারও অনুমোদন দিয়েছে আইএফএবি।

ফুটবলেও মাথায় আঘাত লাগাটা একটা বড় সমস্যা। মাথায় আঘাত লেগে খেলা চালিয়ে গিয়ে পরে মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে নিয়মিত বদলির কোটা শেষ হয়ে গেলে খেলা না চালিয়ে গিয়ে উপায় থাকে না। খুব গুরুতর ক্ষেত্রে ওই আঘাত পাওয়া খেলোয়াড়কে বাইরে রেখে দশ জন নিয়ে খেলার নজিরও আছে।

আবার অনেক কোচ নিয়মিত বদলিতে প্রভাব পড়বে বলে শুরুতেও কোনো খেলোয়াড় মাথায় আঘাত পেলে তাকে বদলে ফেলেন না। বরং কিছু চিকিৎসা দিয়ে এই খেলোয়াড়কে আবার মাঠে পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর মতো ভয়াবহ ঘটনা ছাড়াও স্মৃতিভ্রষ্টতা, মস্তিষ্কের অন্যান্য সমস্যা, পক্ষাঘাতের মতো সমস্যা হতে পারে।

এবার আইএফবি বললো যে, এরকম মাথায় আঘাত লাগার ক্ষেত্রে দলকে বাড়তি বদলি দেওয়া হবে। তবে ক বার দলগুলো এই বদলি পাবে, সেটা ট্রায়ালের ভেতর দিয়ে ঠিক হবে।

প্রথম ট্রায়াল পদ্ধতিতে  প্রতিটি খেলায় প্রতি দলের দুইজন কনকাশন সাবস্টিটিউট অনুমোদন করা হবে। কোন দল যদি কনকাশন বদলি নেয় তাহলে বিপক্ষ দল চাইলে পরিপূরক বদলি নামাতে পারবে। সে ক্ষেত্রে, যদিও সম্ভাবনা খুবই কম; কাকতালীয়ভাবে কোনো দল ১০ জন বদলিও পেয়ে যেতে পারে হয়তো। ১০ জন বদলি হতে পারে যদি খেলাটি ড্র হয় এবং অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়।

হিসাবটা এরকম: স্বাভাবিকভাবে ৫ জন, অতিরিক্ত সময়ে ১ জন, কনকাশন বদলি ২ জন, আরো ২ জন পাওয়া যাবে যদি বিপক্ষদল ২ জন কনকাশন বদলি নেয়। এক্ষেত্রে এত অতিরিক্ত খেলোয়াড় থাকাটাও একটা বিবেচ্য বিষয়। ধারণা করা হচ্ছে এই বিষয় নিয়ে আরও পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হবে। সামনের বছর ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য এফএ কাপ-এর তৃতীয় রাউন্ডে পরীক্ষামূলক ভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ  করা হবে।

দ্বিতীয় ট্রায়াল পদ্ধতিতে প্রতিটি খেলায় প্রতি দল একজন কনকাশন বদলির আনুমতি পাবে। সেক্ষেত্রে বিপক্ষ দল কোন পরিপূরক বদলি নিতে পারবে না। দুটি ট্রায়ালেই স্থায়ী বদলি হবে। আইএফএবি ক্ষণস্থায়ী বদলির ধারণাকে ইতোমধ্যে বাতিল করেছে।

ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এই ‘অতিরিক্ত স্থায়ী বদলির’ নিয়মকে স্বাগতম জানিয়েছে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই নিয়মের বাস্তব প্রয়োগ এর ঘোষণা দিয়েছে।  ইতোমধ্যে নারী এফএ কাপ, নারী সুপার লিগ, নারী চ্যাম্পিয়নশিপ  এবং এফএ কাপে এই নিয়মের ব্যবহার হবে করবে বলে জানিয়েছে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ)।

এই প্রসঙ্গে ডিমেনশিয়ায় (স্মৃতিভ্রংশ)  আক্রান্ত বিশ্বকাপজয়ী নোবী স্টিলেজের ছেলে ফুটবলার জন স্টিলেজ, এমিরেটস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রিমিয়ার লিগের ২৯ নভেম্বরের খেলার উদাহরণ তুলে ধরেন। এই খেলায় আর্সেনাল ডিফেন্ডার ডেভিড লুইজ এর সাথে উলভস স্ট্রাইকার রাউল জিমেনেজের সংঘর্ষে জিমেনেজের মাথার খুলিতে ফাটল ধরা পড়ে। হাফ টাইম পর্যন্ত ডেভিড লুইজকে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে হয়। নোবী স্টিলেজ গত অক্টোবরে মারা যান।

এই ট্রায়ালের ব্যাপারে স্টিলেজ বলেছেন, ‘সবাই অনেক দিন ধরে এটার জন্য অপেক্ষা করে আছে। আমার মনে হয় স্বাভাবিকভাবেই সবাই প্রথমে কিছুটা আপত্তি তুলবে, যদিও আমার মনে হয় আমরা যথেষ্ট দেরি করে ফেলেছি এই সিদ্ধান্তটি নিতে।’

এর আগে করোনার কারণে স্থগিতকৃত টোকিও অলিম্পিকে এই কনকাশন বদলির প্রয়োগের কথা ছিল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link