পিতাপুত্রের একই হন্তারক

১৯৯৬ সালে একবার জিম্বাবুইয়ান পেসার হিথ স্ট্রিক আর তাঁর বাবা ড্যানিশ স্ট্রিক এক সঙ্গে খেলেছিলেন একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। আমাদের দেশের রকিবুল হাসানও তাঁর পুত্রকে নিয়ে সূর্যতরুণের হয়ে ঢাকা লিগে একসাথে ব্যাট করেছিলেন। আবার বাবা লালা অমরনাথের বিপক্ষে একবার একটি ম্যাচ খেলেছিলেন পুত্র মহিন্দর অমরনাথ।

পিতার পদচ্ছাপ অঙ্কন করে ক্রিকেট মাঠে পুত্রের বিচরণ- ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ঘটনা নেহায়েতই কম নয়। অনেক সময় ক্রিকেট মাঠে পিতা-পুত্রের যুগলবন্দীও হয়েছে। ১৯৯৬ সালে একবার জিম্বাবুইয়ান পেসার হিথ স্ট্রিক আর তাঁর বাবা ড্যানিশ স্ট্রিক এক সঙ্গে খেলেছিলেন একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। আমাদের দেশের রকিবুল হাসানও তাঁর পুত্রকে নিয়ে সূর্যতরুণের হয়ে ঢাকা লিগে একসাথে ব্যাট করেছিলেন। আবার বাবা লালা অমরনাথের বিপক্ষে একবার একটি ম্যাচ খেলেছিলেন পুত্র মহিন্দর অমরনাথ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশ্য এই সব যুগলবন্দীর বিরল দৃশ্য মেলে না। তবে উত্তরসূরি হয়ে অনেক পুত্রই বাবার পথ ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন। সবশেষ, শিবনারায়ণ চন্দরপলের ছেলে ত্যাগনারায়ণ চন্দরপলের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট অভিষেক হয়েছে। আর সে ম্যাচে প্রথম ইনিংসেই অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছিলেন ত্যাগনারায়ণ। অবশ্য ফিফটি পূরণ করার কিছুক্ষণ বাদেই মিশেল স্টার্কের বলে বোল্ড হয়ে তিনি প্যাভিলিয়নে ফিরে যান।

আর এখানেই অনন্য এক রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন স্টার্ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর আগে শিবনারায়ণ চন্দরপলকেও একবার আউট করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ পিতা-পুত্র-দুইজনকেই আউট করার একটি চক্র পূরণ করেছেন তিনি। ক্রিকেট ইতিহাসে এর আগে এই ভিন্নধর্মী রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন আরো দুইজন বোলার। সব মিলিয়ে এই ব্যতিক্রমধর্মী কীর্তিতে নাম লেখানো এই তিন জনের সেই ইতিহাসেই একটু ঘুরে আসা যাক।

  • ইয়ান বোথাম (ল্যান্স কেয়ার্নস ও ক্রিস কেয়ার্নস) 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাবা ছেলেকে আউট করার প্রথম নজির গড়েছিলেন ইংলিশ কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম। নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলা ল্যান্স কেয়ার্নসের ছেলেও একসময় কিউইদের হয়ে খেলেছিলেন। আর টেস্ট ক্রিকেটে ইয়ান বোথাম এই বাবা ছেলে দুই জনকেই আউট করেছিলেন। ক্যারিয়ারে ল্যান্স কেয়ার্নসের বিপক্ষে অনেক মুখোমুখি হয়েছেন বোথাম। তারা দুজনই সমসাময়িক ক্রিকেটার ছিলেন।

তবে নব্বই দশকের শুরুর দিকে ইয়ান বোথামের যখন ক্যারিয়ারের ক্রান্তি-লগ্ন চলছে তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ল্যান্স কেয়ার্নসের পুত্র ক্রিস কেয়ার্নসের। আর সে সময়েরই এক ম্যাচে বোথাম ক্রিস কেয়ার্নস কে আউট করেন। আর এতেই বাবা ছেলে দুজনকেই আউট করার কৃতিত্ব গড়েন ইয়ান বোথাম।

  • ওয়াসিম আকরাম (ল্যান্স কেয়ার্নস ও ক্রিস কেয়ার্নস)

ইয়ান বোথামের মতো পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরামও ল্যান্স কেয়ার্ন আর ক্রিস কেয়ার্নসের উইকেট পেয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি ল্যান্স কেয়ার্নসকে আউট করেছিলেন। আর এর ঠিক দশ বছর পর, ল্যান্সের ছেলে ক্রিস কেয়ার্নসে তিনি একটি টেস্ট ম্যাচে আউট করেছিলেন।

যার ফলে ইয়ান বোথামের পর বাবা-ছেলেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আউট করার চক্র পূরণ করে ফেলেন ওয়াসিম আকরামও। ওয়ানডে ক্রিকেটে অবশ্য ক্রিস কেয়ার্নস অনেকবারই ওয়াসিম আকরামের শিকার হয়েছেন।

  • মিশেল স্টার্ক (শিবনারায়ণ চন্দরপল ও তেজনারায়ণ চন্দরপল)

বাবা ছেলেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আউট করা বোলারদের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন মিশেল স্টার্ক। ২০১২ সালে শিবনারায়ণ চন্দরপলকে আউট করেছিলেন স্টার্ক। আর এর ১০ বছর পর ২০২২- এ এসে, এবা সেই শিবনারায়ণ চন্দরপলের ছেলে তেজনারায়ণকে আউট করলেন তিনি। আর এই সুবাদে, ইয়ান বোথাম, ওয়াসিম আকরমদের পাশে নাম লিখিয়ে ফেললেন অজি এ পেসার।

বাবার ব্যাটিংয়ের ছাপটা বেশ ভালভাবেই ফুটে ওঠে ছেলে তেজনারায়ণের ব্যাটে। অস্ট্রেলিয়া সফরের প্রথম ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে করেছিলেন ৯৬ রান। কাকতালীয় ভাবে, বাবা শিবনারায়ণ চন্দরপলও তাঁর ক্যারিয়ারে প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরের প্রথম টেস্টে ৯৬ রান করেছিলেন।

তেজনারায়ণ চন্দরপলের পথচলাটা সবে শুরু। এখন দেখার পালা, ক্রিকেটীয় অর্জনে বাবাকে ঠিক কতটা ছুঁতে পারে তেজনারায়ণ চন্দরপল। অবশ্য ছাপিয়েও যেতে সব অর্জনে, কীর্তি। সেটাতে বরং একটু বেশিই তৃপ্তি পাবেন শিবনারায়ণ চন্দরপল।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link