পাকিস্তানি ক্রিকেটারে সরগরম বিপিএল

মৃদু বালুঝড়। তবুও উৎসবের একটা আবহাওয়া চারিদিকে। বালুর সেই ঝড় চিড়ে নেমে এল একটি হেলিকপ্টার। সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু সেই আকাশ যান। সাংবাদিক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্তা-ব্যক্তিরা ব্যতিব্যস্ত। আকাশযানের দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। পাকিস্তান ক্রিকেটের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তিনি তো সুপারস্টার।

সেই সুপারস্টার এখন বাংলাদেশের মাটিতে। তিনি খেলতে এসেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের নবম আসর। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন তিনি। বিপিএলে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের আধিপত্য একটা ধ্রুব ঘটনা। প্রতিবারই বিপিএলের দলগুলোতে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা প্রাধান্য পেয়ে থাকে। সে ধারা বদলায়নি এবারও।

এই আসরের শুরুতেও পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের আধিক্য ছিল চোখে পড়ার মত। তাদের অবশ্য চোখের আড়াল করবার সুযোগ নেই। কেননা তাঁরা পারফর্ম করে প্রতিনিয়ত থাকেন আলোচনায়। সকলের নজর কেড়ে নেওয়ার জন্য সচেষ্ট তাঁরা। আজম খান ও উসমান খান এই দুই ব্যাটার তো একই দিনে করেছেন শতক। খুলনা আর রংপুরের সেই ম্যাচটি জমে উঠেছিল প্রতিপক্ষ দুই পাকিস্তানি খেলোয়াড়ের কল্যাণে।

তাদের মত করে এখনও আলোচনায় খুব একটা আসতে না পারলেও নিজের কাজটা ভালভাবেই করে যাচ্ছেন মোহাম্মদ আমির। বাঁ-হাতি এই বোলার তাঁর দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের বোলিং আক্রমণের অন্যতম আস্থাভাজন একজন সেনানি। একই কথা খাটে খুলনা টাইগার্সের ওয়াহাব রিয়াজের ক্ষেত্রে। এদের ছাড়াও রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ  হয়ে উঠেছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার শোয়েব মালিক।

পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের এই মিছিলে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান থেকে শুরু করে, হাসান আলি, আবরার আহমেদের মত ক্রিকেটাররা। মূলত জাতীয় দলের সাথে যুক্ত থাকা এই খেলোয়াড়রা নিউজিল্যান্ডের সাথে সিরিজ খেলতে ছিলেন ব্যস্ত। সিরিজ শেষ হওয়া মাত্রই তাঁরা ছুটে এসেছেন বিপিএলে অংশগ্রহণ করতে।

তাদেরকে উড়িয়ে নিয়ে আসার প্রবণতাই প্রমাণ করে ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন তাঁরা। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে তো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স হেলিকপ্টারে করে উড়িয়ে ম্যাচের আগে হাজির করেছে চট্টগ্রামের মাটিতে। তিনি এরপরই নেমে যান ম্যাচ খেলতে। টেস্ট খেলে আসা রিজওয়ান শুরুটা ছক্কা দিয়ে শুরু করলেও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। এমন দৃশ্যের সাথে অবশ্য বিপিএলের দর্শকরা পূর্ব পরিচিত।

এর আগে উমর আকমালকেও তড়িঘড়ি করে বিপিএল খেলতে নিয়ে আসা হয়েছিল। ফলাফল খুব একটা সুখকর হয়নি। তবে রিজওয়ান টি-টোয়েন্টির বর্তমান সেরাদের একজন। তিনি হয়ত তিক্ত অভিজ্ঞতার সাক্ষী করবেন না তাঁর দলকে। তাঁর মতই নতুন যুক্ত হওয়া পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা নিজেদের সেরাটাই দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাবে নিশ্চয়ই।

মূলত পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলতে পারেন না। তাইতো তাদের দেশীয় পাকিস্তান সুপার লিগের পর সেই দেশের খেলোয়াড়রা বিপিএলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এবার বেশ দ্বিধান্বিত একটা ঘোরের মধ্য থেকে বেড়িয়ে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা খেলতে এসেছেন বিপিএল। দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হওয়া এসএ ২০-তে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের খেলা নিয়ে একটা ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছিল। যেহেতু সেই টুর্নামেন্টের সব ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর শেকড় ভারতে।

অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লিগ। সেই লিগের অর্থের ঝনঝনানি উপেক্ষা করে খেলোয়াড়রা বিপিএলকে বেছে নিয়েছেন। যদিও বিপিএলের মাঝপথে বহু খেলোয়াড় চলে গেছেন আইএলটি২০ খেলতে। তবে সেদিক বিবেচনায় পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ভিন্ন।

বিপিএলে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা প্রাধান্য পায় কিন্তু পাকিস্তান সুপার লিগে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের আধিপত্য খুব একটা চোখে পড়ে না। গুটিকতক খেলোয়াড় দল পেলেও, বড় সংখ্যক খেলোয়াড়ই দল বঞ্চিত থাকেন। তবুও বিপিএল যেন পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ছাড়া অচল। এমন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া প্রয়োজন। পাকিস্তান বাদেও বিদেশি খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্ত করবার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন দেশি ফ্রাঞ্চাইজিগুলো থেকে শুরু করে বিপিএল গভর্নিং বডির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link