একটা সময় তাঁর ব্যাটিং দেখলে মনে হত রান করা ব্যাপারটা বেশ মামুলি। ব্যাটিং করাটা যেন ডাল-ভাত। যার পুল মুগ্ধতা ছড়িয়েছে, যার পেরিস্কোপ শট আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল গোটা ক্রিকেট দুনিয়ায়। অথচ এখন যেন তিনি ব্যাটিংয়ের ব্যাসিকটাই ভুলে গিয়েছেন। রান করা যেন সৌম্য সরকারের জন্য আজন্ম সাধনা।
বিপিএলের প্রথম চার ম্যাচে সৌম্য সর্বসাকুল্যে করেছেন ২৬ রান। দুই অংকের স্কোর গড়াই যেন এখন সৌম্যের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। এমন না যে তিনি শুধু এই বিপিএলেই অফ ফর্মে আছেন। সৌম্য রানের দেখা পাচ্ছেন না লম্বা সময় ধরেই। শুধু রান করা নয়, নিজের সহজাত ব্যাটিংটাও করতে পারছেন না তিনি।
জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করে আবার ফিরে আসবেন সৌম্য। এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সবার। তবে গত কয়েক বছরেও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের চেনা রূপে ফিরে যেতে পারেননি সৌম্য। ব্যাটিং করাটা যেন তাঁর জন্য পাহাড় ঠেলার মতই।
কোন ফরম্যাটে, কোন জায়গাতেই রানের দেখা পাচ্ছেন না। এমনকি তাঁর ব্যাটিং করার ধরণটাও পাল্টে গিয়েছে। খুব সহজ কাজগুলোও বাইশ গজে গিয়ে করতে পারছেন না। সৌম্য রান করতে পারবেন না এটাই এখন বরং স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
অথচ একটা সময় রান করেছেন হেসেখেলেই। ২০১৫ সালে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলগুলোর সাথে দারুণ সব ইনিংস খেলেছিলেন। তাঁর শট সিলেকশন, টাইমিং, ফুটওয়ার্ক সবকিছুই বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। সেই সৌম্যই এখন বাইশ গজে ব্যাট-বল এক করতে পারেন না।
প্রতিটা ব্যাটারই বাজে সময় পার করেন। নিজের স্বাভাবিক ক্রিকেটটা খেলতে পারেন না। তাঁরা আবার সেখান থেকে ফিরেও আসেন। তবে লম্বা সময় পেড়িয়ে গেলেও আর ফিরে আসতে পারছেন না সৌম্য।
রান না করেও অবশ্য গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডাক পেয়েছিলেন এই ওপেনার। খুব স্বাভাবিকভাবে সেখানেও রানের দেখা পাননি। আর ঢাকা ডমিনেটর্সের হয়ে খেলা চার ম্যাচে তাঁর স্কোর গুলো যথাক্রমে ১৬, ৬, ৪ ও ০।
সবচেয়ে বেশি অবাক করে তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরণ। একটা সময় এত সুন্দর ব্যাটিং করা সৌম্য এখন যেন সবই ভুলে গিয়েছেন। পায়ের কাজ ঠিক নেই, বল ঠিক করে টাইমিং করতে পারছেন না, আর আগের সেই পুর কিংবা পেরিস্কোপের তো প্রশ্নই আসে না।
এত কিছুর পর আসলে প্রশ্ন আসেই। সৌম্য কী অফ ফর্মে নাকি ব্যাটিংটাই ভুলে গেলেন। তিনি কী আদৌ আগের সেই রূপে ফিরতে পারবেন? নাকি সৌম্য থেকে যাবেন ২০১৫ সালে আসা এক ধূমকেতু হয়েই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সৌম্য সরকারের আর কোন চিহ্নই খুঁজে পাওয়া যাবে না।