বড় আশা নিয়েই ক্যারিবিয়ান ব্যাটার শাই হোপকে দলে ভিড়িয়েছে খুলনা টাইগার্স। টুর্নামেন্টের মাঝপথে ক্যারিবিয়ান এই তারকা যখন দলের সাথে যোগ দিলেন মাঠে তখন খুলনা কাটাচ্ছে দুঃসময়। টানা হারের বেড়াজালে আবদ্ধ খুলনার যেন সেমিফাইনাল খুব দূরের দ্বপ্নই বটে। দলের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তাঁরাই জায়গা করে নেন দর্শকের মণিকোঠায়।
শাই হোপ আজ সেটাই করলেন, তার ৫৫ বলে অপরাজিত ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে কুমিল্লাকে ২১০ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁড়ে দিয়েছে ইয়াসির রাব্বির দল। ক্যারিবিয়ান ব্যাটার মানেই ধুন্ধুমার চার – ছক্কার মার, ম্যাচের পরিস্থিতি যাইহোক বিধ্বংসী ব্যাটিং করাই তাঁদের ধ্যানজ্ঞান। অন্তই ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের চিত্রটা তাই বলে।
অথচ ক্যারিবিয়ান হলেও হোপ যেন খানিকটা বেমানান। ক্রিজে এসেই মার শুরু করার বদলে খানিকটা রয়েসয়ে শুরু করতেই বেশি আগ্রহী এই টপ অর্ডার ব্যাটার। সেই কারণেই কিনা দর্শকদের মাঝে হোপকে নিয়ে উচ্ছ্বাসটা কম। তাতেই এই ব্যাটারের থোড়াই কেয়ার, নিজের কাজটা তিনি করে যান নীরবে।
এবারের বিপিএলেও বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে হোপের ব্যাটিংয়ের ধরণ। ঢাকার বিপক্ষে লজ্জাজনক হারের ম্যাচে আউট হয়ে গেছেন শুরুতেই। এরপর কুমিল্লার বিপক্ষে তো তাঁর ধীরগতির ব্যাটিংয়ের খেসারত দিতে হয়েছে খুলনাকে। ১৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তাঁর ৩২ বলে ৩৩ রানের ধীরগতির ইনিংসের চড়া মাসুল দিতে হয়েছে পুরো দলকে, শেষদিকে বহু চেষ্টা করেও থামতে হয়েছে জয় থেকে চার রান দূরে। সবমিলিয়ে তাই খুলনার দর্শকরাও নাখোশ ছিলেন হোপের ব্যাটিং নিয়ে।
তবে কুমিল্লার বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচেই ফিরে আসার গল্প লিখলেন হোপ। নিজের পুরনো খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন, জয়ের খুব কাছে এসেও হেরে যাবার আফসোসটা যেন আর বইতে চাইলেন না। ৫৫ বলে পাঁচ চার আর সাত ছক্কায় সাজানো ৯১ রানের ইনিংস দিয়ে দলের লক্ষ্যটা নিয়ে গেলেন একপ্রকার ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অথচ ম্যাচের শুরুটা বেশ বাজে হয়েছিল খুলনার। ম্যাচের তৃতীয় ওভারেই মাহমুদুল হাসান জয় নাসিম শাহের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরলে ক্রিজে আসেন হোপ। প্রথম বলেই নাসিমকে সীমানাছাড়া করে জানান দেন আজকের দিনটা কেবলই তাঁর।
এরপর খানিকটা রয়েসয়ে খেললেও রানের গতি কমতে দেননি একবারের জন্যেও। অহেতুক ঝুঁকি নেননি, ম্যাচের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাটিং করেছেন। নবম ওভারে খুশদিলকে টানা দুই ছয় হাঁকিয়ে বুঝিয়ে দেন নিজের ইন্টেনশন। পরের ওভারেই মাত্র ২৭ বলে তুলে নেন নিজের ফিফটি। মুস্তাফিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত তকমাটা যে এমনি এমনি পাননি সেটাও বুঝিয়ে দিলেন আজ। দ্য ফিজের প্রথম তিন ওভার দেখেশুনে খেললেও শেষ ওভারে তোলেন ১২ রান।
এদিন হোপের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যাট করেছেন তামিম ইকবালও, খেলেছেন ৯৫ রানের চোখধাঁধানো এক ইনিংস। দুজনের ১৮৪ রানের জুটিতেই মূলত ২১০ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ পেয়েছে খুলনা। এখন বোলারদের দায়িত্ব ম্যাচের ফলটা নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা। হোপ শব্দটার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় আশা। দেখা যাক শাই হোপ খুলনা দলটার সেমির আশা জাগিয়ে তুলতে পারেন কিনা।