শুভমান ‘রানমেশিন’ গিল

দুর্দান্ত কিংবা অতিমানবীয়। শুভমান গিলের ইনিংসটিকে ঠিক কোন বিশেষণে আটকে ফেলা যায় সেটা হয়ত বলা বেশ মুশকিল। কি দারুণ সব শট! একেবারে বহমান পানির মতই সাবলীল। এমন ইনিংসই তো আত্মবিশ্বাস বাড়ায় কয়েক গুণ।

গেল বেশ কয়েক দিন ধরেই অসাধারণ এক সময় পার করছেন ভারতের তরুণ এই ক্রিকেটার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়েই শুরু। অদম্য গতিতে ক্রমশ ছুটে চলেছেন তিনি। কোথাও যেন থামা-থামি নেই। দুর্নিবার এক রানমেশিনে পরিণত হয়েছেন তিনি। ক্রমাগত রানের ফোয়ারা ফুটিয়ে যাচ্ছেন তরুণ এই ক্রিকেটার।

এই তো সেদিন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ড গড়লেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি করে ফেললেন দ্বিশতক। হায়দ্রাবাদের সেই দূর্দান্ত ইনিংসটি দিয়েই যেন তিনি ভারত জাতীয় দলের নিজের জায়গাটি খানিকটা পাকা করে ফেলেন। ২০৮ রানে সেদিন থেমেছিলেন তিনি। ওয়ানডেতে দ্বিশতক করা এলিটদের তালিকায় ঢুকে যেতে তাই কোন বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়নি শুভমন গিলকে।

সবাই হয়ত সেখানেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ফেলতেন। তবে শুভমান ঠিক পারলেন না। তিনি তাঁর সেই বিধ্বংসী ফর্মটাকে রীতিমত ধারাবাহিক বানিয়ে ফেললেন। সেই ওয়ানডে সিরিজে তিনি তুলে নেন আরও একটি সেঞ্চুরি। ফর্মের তুঙ্গে থাকা বলতে যায় বোঝায়, ঠিক সে সময়টাই যেন পার করছেন শুভমান গিল।

নিউজিল্যান্ডকে তিনি রীতিমত নিজের প্রিয় প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেললেন তিনি। এবার ব্ল্যাকক্যাপদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে দুরন্ত এক সেঞ্চুরি হাকান তিনি। সিরিজে ১-১ এর সমতা। শেষ ম্যাচটা তাই সিরিজ নির্ধারণি। টি-টোয়েন্টি সিরিজে ব্যাট হাতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি গিল। আগের দুই ম্যাচে দুই সংখ্যা ছোঁয়ার খানিক বাদেই তিনি প্যাভিলনের পথে হাঁটা শুরু করে দিয়েছেন।

কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই তিনি আবার জ্বলে উঠলেন। যে আগুনের তীব্রতায় রীতিমত ভষ্ম ব্ল্যাকক্যাপসরা। বরাবর ২০০ স্ট্রাইকরেটে গিল এদিন ব্যাটিং করেছেন। বাইশ গজে টিকে ছিলেন পূর্ণ বিশ ওভার। একজন ওপেনার যখন এতগুলো ওভার বাইশ গজে টিকে যাবেন, তখন ধরেই নিতে হবে দিনটা বেশ বাজে কেটেছে প্রতিপক্ষ বোলারদের। তেমনটাই হয়েছে।

ব্লেয়ার টিকনার সহ অভিজ্ঞ লকি ফার্গুসন রান খরচে অর্ধশতক পার করেছেন। বাকিদের অবস্থাও বেগতিক। সাতটি বিশাল ছক্কা হাকানোর পাশাপাশি, ১২টি চার এসেছে গিলের ব্যাট থেকে। এমন বিধ্বংসী ইনিংসের শেষটায় নিজের নামের পাশে ১২৬ রানের বিশাল একটি অংক দেখতে পাচ্ছেন গিল। নিশ্চয়ই ভ্রহ্মান্ডের সবচেয়ে সুখী মানুষটি তিনি!

হবারই কথা। ঘরের মাঠে, ঘরের দর্শকদের সামনে এমন দৃষ্টিনন্দন আগ্রাসনের মঞ্চায়ন তো আর সবাই করতে পারে না। তাছাড়া এই ইনিংসটি তাঁর ক্যারিয়ারের জন্যেও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্প দৈর্ঘ্য়ের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটিই ছিল তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি। ক্ষুদ্রতম সংস্করণে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার দেখাটাই বাড়তি আনন্দ দেয়। সেটা নিশ্চয়ই দ্বিগুণ হয়, প্রথম হলে।

তবে এই ইনিংসের মাধ্যমে একটা খোলা বার্তা দিয়ে রাখলেন গিল। তাঁর এই ফর্ম অতি দ্রুতই হারিয়ে যাবার নয়। ঘরের মাঠে তিনি অপ্রতিরোধ্য। আর ঠিক এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে আরও এক ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর বসতে চলেছে ভারতের মাটিতে। সেখানে নিশ্চয়ই তিনি টিম ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিত্ব করতে চাইবেন। তাঁকে অবশ্য আটকাবার উপায় নেই। তিনি তিনি অদম্য!

আর গিলের ভেলায় ভারতও সুখী। বোর্ডে ভারত চার উইকেটে ২৩৪ রান জমা করার পর প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড অল আউট হয় মাত ৬৬ রানে। এমন বিধ্বংসী ভারতের দেখা তো মিলল অনেকদিন পর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link