কেপলার ওয়েসেলস – এই নামের ওজনটা যেকোনো ক্রিকেট সমঝদার মানুষই বোঝেন! তিনি দু’টো ভিন্ন দেশের হয়ে টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন, ১৪৬ বছর ধরে এই রেকর্ডটা লেখা ছিল তাঁর নামের পাশে। তবে, এতদিনে এসে তিনি নতুন একজন সঙ্গী পেলেন। সেই সঙ্গীটা হলেন গ্যারি ব্যালান্স। ইংল্যান্ডের পর এবার জন্মভূমি জিম্বাবুয়ের হয়ে টেস্টের অভিষেকেই সেঞ্চুরি করলেন তিনি।
ক্রিকেটীয় অর্জনের দিক থেকে ওয়েসেলস অবশ্য এখনও অনেকটাই এগিয়ে। ওয়েসেলসের অভিষেক হতে পারত দক্ষিণ আফ্রিকার হয়েই। কিন্তু, যখন সেটা হতে পারত, তখন খোদ প্রোটিয়ারাই নিষিদ্ধ ক্রিকেটে। প্রথমে অবশ্য তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছিলেন। এরপর প্রায় ১২ বছরের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা দল ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে গেলে ওয়েসেলস অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান।
অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার এই গ্রেট সেঞ্চুরি করেছিলেন টেস্ট অভিষেকেই। সেটা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৮২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রিসবেনে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিন বছরে ২৪ টেস্টে ৬ সেঞ্চুরির পর ক্যারিয়ার থমকে যায় ১৯৮৫ সালে।
এরপর জন্মভূমির হয়ে তাঁর অভিষেক ১৯৯২ সালে। নতুন অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্রিজটাউনে করেন ৫৯ ও ৭৪। এই দফায় দ্বিতীয় টেস্টেই ভারতের বিপক্ষে করেন ১১৮। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৬ টেস্ট খেলে তার সেঞ্চুরি দু’টি। ১৯৯২ এর বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি।
অন্যদিকে, ব্যালান্সের গল্পটা একটু অন্যরকম। তাঁর জন্ম হারারেতে হলেও তিনি জাতিগত ভাবে ব্রিটিশ। পরিবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চলে এসেছিল জিম্বাবুয়েতে। ২০০৬ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেন গ্যারি ব্যালান্স। গায়ে ছিল জিম্বাবুয়ের জার্সি।
হারারেতে জন্ম হলেও ইংল্যান্ডেই স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করেন ব্যালান্স। জাতীয় দলের প্রশ্নে বেছে নেন ইংল্যান্ডকেই। পরে বাঁ-হাতি এই ব্যাটারের টেস্ট অভিষেক হয় ইংল্যান্ডের হয়ে, ২০১৪ সালে। অভিষেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো করতে না পারলেও দ্বিতীয় টেস্টে সেঞ্চুরি করেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
ইংল্যান্ডের হয়ে সাড়ে তিন বছরে ২৩ টেস্ট খেলে তাঁর সেঞ্চুরি চারটি। ১৬ টি ওয়ানডেতেও প্রতিনিধিত্ব করেন থ্রি লায়ন্সদের। মূলত ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মাঝে ইংল্যান্ডের জার্সিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ব্রিটিশদের হয়ে ৩৭ গড়ের পাশাপাশি চারটি সেঞ্চুরিও করেন। তবে সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে মাঠে নামার পর পাঁচ বছর কেটে যাওয়ায় জিম্বাবুয়ের হয়ে মাঠে নামতে কোনো বাঁধা ছিল না ব্যালান্সের। আর সেই সুযোগটা হাতছাড়া করেনি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট (জেডসি)।
এরপর জিম্বাবুয়ের হয়ে অভিষেক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলতি হারারে টেস্টে। জন্মভূমির হয়ে অভিষেক রাঙালেন তিনি ১৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। এর আগেই জিম্বাবুয়ের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়ে গেছে তাঁর।
ওয়েসেলসের সাথে একটা মিল ব্যালান্সের থাকছেই। ওয়েসেলস সেঞ্চুরি করেছিলেন ভিনদেশের হয়ে অভিষেকে, আর ব্যালান্স সেঞ্চুরি করলেন জন্মভূমির হয়ে অভিষেক। আর এই ভিন্নরকম দুই ‘অভিষেক’ সেঞ্চুরি তাঁদের মিলিয়ে দিল একই বিন্দুতে।
এখানে একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন ডেভ হটন, জিম্বাবুয়ের গ্রেট ও এখনকার কোচ। গ্যারি ব্যালান্সের গল্পের আড়ালের নায়ক তো তিনিই। হটনের স্ত্রীর কাজিন ছিলেন ব্যালান্সের বাবা। ব্যালান্স যখন ইংল্যান্ডে ছিলেন, তখন ডার্বিশায়ার কাউন্টি দলের কোচ ছিলেন হটন। তিনি ব্যালান্সকে সুযোগ দেন নিজের দলে। সেই সূত্রে পারফরম করে ব্যালান্স ডাক পান ইংল্যান্ডে।
সেই হটন এখন জিম্বাবুয়ের কোচ। আর হটনের হাত ধরেই তো জিম্বাবুয়েতে ফেরা হল ব্যালান্সের।