ছয় মাস বাদে ইনজুরি থেকে ফিরেই রূপকথার এক প্রত্যাবর্তন রবীন্দ্র জাদেজার। অশ্বিন – আক্সারকে সাথে নিয়ে গড়া স্পিন ত্রিফলার জবাব ছিল না অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের কাছে। ব্যাট হাতেও ছিলেন আস্থার প্রতীক হয়ে, টার্নিং পিচেও লড়াকু এক ইনিংস খেলে দলের লিডটাকে নিয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এক জাদেজাতেই কাবু হল অজিরা, অসহায় আত্নসমর্পণে হারের ব্যবধান ক্রমশই বেড়েছে।
তবে ইনজুরি থেকে ফিরেই এমন ম্যাচে জেতানো পারফরম্যান্স রাতারাতি আসেনি জাদেজার জীবনে। এর পেছনে রয়েছে বহু ত্যাগের গল্প। সেরা ছন্দে ফিরতে পুর্নবাসনের সময়টাতে ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে ঘাম ঝরিয়েছেন। প্রতিদিন প্রায় ১০ – ১২ ঘন্টা বল করে নিজেকে তৈরি করেছেন এই তারকা। সেই পরিশ্রমের সম্মিলিত রূপই নাগপুরের এমন পারফরম্যান্স।
ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বসিত জাদেজা বলেন, ‘অসাধারণ এক অনুভূতি। পাঁচ মাস পর ফিরেই ব্যাট এবং বল হাতে পারফর্ম করতে পারাটা সত্যিই দারুণ। আমি ন্যাশনাল একাডেমিতে কঠোর পরিশ্রম করেছি। সেখানকার কোচ এবং স্টাফরা সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। আমার পরিকল্পনা ছিল সাধারণ, আমি স্ট্যাম্প বরাবর টানা বল করে যেতে চেয়েছি। আমি বিশ্বাস করি যদি আমি ভালো জায়গায় টানা বল করি, তবে প্রতিপক্ষ ভুল করতে বাধ্য।’
তাছাড়া এই টেস্টের পিচকে প্রথাগত র্যাংক টার্নার মানতে নারাজ জাদেজা। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘এটা কোনোভাবেই র্যাংক টার্নার না। উইকেট কিছুটা ধীরগতির আর নিচু বাউন্স ছিল। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে উইকেটে ব্যাটিং করা কঠিন হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটের ধরণটাই এমন।’
বোর্ডার – গাভাস্কার ট্রফির প্রথম ম্যাচ বড় ব্যবধানে জিতে তাই চালকের আসনে স্বাগতিকরা। আর এই জয়ের পেছনের আসল রূপকার রবীন্দ্র জাদেজা। প্রথম ইনিংসেই পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন সফরকারীদের।
ইনিংসের দশম ওভারে বল করতে এসে আহামরি কিছু করার চেষ্টা করেননি এই বাঁ-হাতি স্পিনার। অফস্ট্যাম্পের বাইরে ভালো জায়গায় একটানা বল করে গেছেন। তবে চমক দেখিয়েছেন স্টিফেন স্মিথকে আউট করা বলটাতে, তাঁর আর্মারের কোনো জবাবই ছিল না অজি এই ব্যাটারের কাছে।
মার্নাস লাবুশেনের সাথে ৮২ রানের জুটি গড়ে তখন অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করছেন স্মিথ। দুজনেই তখন ক্রিজে জমে গেছেন। সেই সময়েই জাদেজার আবির্ভাব, দুজনকেই আউট করেছেন দারুণ দক্ষতায়। এরপর ম্যাট র্যানশ, পিটার হ্যান্ডসকম্ব এবং অ্যালেক্স ক্যারিকে ফিরিয়ে পূর্ণ করেছেন পাঁচ উইকেটের কোটা।
ব্যাট হাতেও এগিয়েছেন দারুণভাবে। অভিষিক্ত স্পিনার টড মারফির স্পিনের সামনে স্বাছন্দ্যে খেলতে পারছিলেন না রোহিত শর্মা বাদে ভারতীয় কোনো ব্যাটারই। তবে রোহিতের গড়ে দেয়ার ভিতের উপর দাঁড়িয়ে ভারতের লিডটাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার কাজটা করেছেন জাদেজাই। আক্সার প্যাটেলের সাথে তাঁর ৮৮ রানের জুটিই জয়ের পথটা সহজ করেছে ভারতের। দ্বিতীয় ইনিংসেও লাবুশেন আর কামিন্সের উইকেটটা ঝুলিতে পুরেছেন এই অলরাউন্ডার।
ভারতের ইনিংস এবং ১৩২ রানের দাপুটে জয়ের পর অনুমিতভাবেই ম্যান অব দ্য ম্যাচের বরমাল্য জুটেছে রবীন্দ্র জাদেজার গলায়। প্রথম ম্যাচেই যেভাবে ফেরার গল্প লিখলেন, তাতে করে সিরিজের সামনের ম্যাচগুলোতে দু:স্বপ্নই অপেক্ষা করছে অজিদের জন্য।