ট্র্যাজেডিতে শেষ রনির হিরোইজম

রনি তালুকদার। নামটার পাশে নিভৃতচারী, প্রচারবিমুখ শব্দ দুটো চাইলেই যোগ করা যায়। বিপিএল আসে, রনির ব্যাটে রান ফোয়ারা চলে। দারুণ সব ইনিংস নিয়েও আলোচনা হয়। কিন্তু সেই ইনিংসের আলোচনা যেন তেমন দীর্ঘ হয় না। তাই রনি থেকে যান আড়ালেই। সম্ভবত এই বিপিএলের পরও রনি তালুকাদার সেই আগের পথই ধরবেন। তবে এবার রনি ফিরবেন একজন ট্র্যাজিক হিরো হিসেবে।

রংপুর রাইডার্সের হয়ে এবারের বিপিএল খেললেন। তিন হাফ সেঞ্চুরিতে ৪২৫ রানে দুর্দান্ত এক আসর কাটালেন। কিন্তু দলকে ফাইনালে তুলতে পারলেন না। দেশি ব্যাটাররা ক্রাঞ্চ ম্যাচ জেতানোর সক্ষমতা রাখে না, এমন একটা বদনাম ঘুচানোর সুযোগ এসেছিল রনির সামনে। রনি সেই পথে হাঁটলেন। বীরের মত দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষটা হল, ঐ না পাওয়া আক্ষেপ নিয়ে। একজন ট্র্যাজিক হিরো হয়েই প্রস্থান হল এ ব্যাটারের।

ফাইনালে ওঠার ম্যাচে রংপুরের সামনে ১৮৩ রানের বড় লক্ষ্য। তাই রনি তালুকদারের কাঁধেও বড়সড়ো এক দায়িত্ব। রনি সেই দায়িত্বটা নিলেন। আগের ম্যাচগুলোর মতো হিটিং জোন খুঁজে বের করতে পারছিলেন না ঠিকই। কিন্তু লক্ষ্যের পথে পা বাড়িয়েছিলেন। ব্যাপারটা এমন যে, ছন্দে না থাকার দিনেও রনি বেশ ভয়ংকর।

রনির ভয়ংকর রূপ আঁচ করার গেল ইনিংসের কিছুক্ষণ বাদেই। ব্যাট হাতে প্রথমদিকে অস্বস্তিতে থাকা রনি খোলস ছাড়াতে শুরু করলেন মোক্ষম সময়েই। রায়ান বার্লের ওভারে নিজের অর্ধশতক পূরণ করলেন। এরপরের ওভার থেকেই তেড়েফুঁড়ে এসে আক্রমণাত্বক শট। পরের ওভারে রুবেল যেন বোলিং লেন্থই খুঁজে পাচ্ছিলেন না রনি তালুকদারের সামনে।

রনির আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে একটা সময় লক্ষ্যটা সহজই মনে হচ্ছিল। যেভাবে উইকেট দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল, ম্যাচ উইনিং একটা ইনিংস খেলতে যাচ্ছেন রনি। কিন্তু প্রত্যাশার সাথে বাস্তবতার তো একটা ফারাক আছে। ম্যাচের চিত্রনাট্য লেখা হল অন্যভাবে। তাতে নায়কটি শেষ পর্যন্ত রনি থাকলেন না। হয়ে গেলেন ট্র্যাজিক হিরো।

তানজিম হাসানের এক ওভারেই সব কিছু তছনছ হয়ে গেল। নুরুল হাসান আউট হয়ে প্রথম ধাক্কাটা দিলেন। আর এরপরে স্নায়ুচাপ আর নিতে পারলেন না রনি। ঐ ওভারেই বোকার মত রান আউটে কাটা পড়লেন। আর রনির আউটেই ম্যাচ থেকে ততক্ষণে ছিটকে গিয়েছে রংপুর রাইডার্স। ৫২ বলে ৭ চার আর ২ ছক্কায় ৬৬ রানের দারুণ একটা ইনিংস খেললেন। কিন্তু দলকে জয় এনে দিতে পারলেন না। তাই নিভৃতেই উইকেট থেকে প্রস্থান। এ প্রস্থানে যেন একটা নিরব হতাশার সুর।

‘ইশ! আরেকটু হলেই হয়ে যেত পারতো’ – এমন একটা আক্ষেপেই যেন মাঠ ছাড়া। অথচ এটা হতে পারতো নায়কোচিত এক প্রস্থান। তবে সেটা না হোক, রনি তালুকদার লক্ষ্যের পথে হেটেছেন, প্রতিপক্ষকে চিন্তায় ফেলেছেন, বিদেশি তারাদের ভীড়েও নিজের আগ্রাসন অটুট রেখেছেন।

সেটাই বা কম কী! ইতিহাস ট্র্যাজিক হিরোদের মনে রাখে না ঠিকই, তবে স্বল্প মুহূর্তের একটা রেশ ঠিকই তৈরি করে যায়। রনি তালুকদার এবারের বিপিএলে সেই রেশটা অন্তত ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link