ক্রিকেটই ছাড়তে চেয়েছিলেন মোহাম্মদ শামি!

সফল এই পেসার নাকি একটা সময় পরে এসে ক্রিকেটটাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। হতাশা, বিষণ্নতায় একদম দিক হারা হয়ে পড়েছিলেন। শামির সেই দুঃসময় থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে দিয়েছিলেন সে সময়ের ভারতের বোলিং কোচ ভরত অরুণ।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের এ সময়ের অন্যতম সেরা পেসার হলেন মোহাম্মদ শামি। লাল বলের ক্রিকেট বিবেচনা করলে ভারতের পেস বোলিং ইউনিটকে তিনিই এই মুহূর্তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এরই মধ্যে টেস্ট ক্যারিয়ারে দুই শতাধিক উইকেট নিয়ে নাম লিখিয়েছেন কপিল দেব, জহির খান, ইশান্ত শর্মা, জাভাগাল শ্রীনাথদের পাশে।

তবে অবাক করা বিষয়, সফল এই পেসার নাকি একটা সময় পরে এসে ক্রিকেটটাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। হতাশা, বিষণ্নতায় একদম দিক হারা হয়ে পড়েছিলেন। শামির সেই দু:সময় থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে দিয়েছিলেন সে সময়ের ভারতের বোলিং কোচ ভরত অরুণ। সম্প্রতি সেই গল্পই শুনিয়েছেন ভারতের সাবেক এই বোলিং কোচ।

সময়টা ২০১৮ সালের। ইংল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগে মোহাম্মদ শামি ফিটনেস টেস্টে ব্যর্থ হলেন। আর সে কারণেই তাঁকে দল থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এরপরেই শামি প্রচণ্ড হতাশায় ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

তো সেই সময়ের স্মৃতি টেনে ভরত অরুণ বলেন, ‘ও যখন দল থেকে বাদ পড়ল তখন আমার সাথে কিছু কথা বলার জন্য সময় চাইল। আমি পরে ওকে ডেকে পাঠালাম আমার রুমে। সে রুমে এসে বলে, আমি খুব হতাশ। আমি ক্রিকেট ছাড়তে চাই।’

ভরত অরুণ তখন যান কোচ রবি শাস্ত্রীর কাছে। তিনি বলেন, ‘শামির মুখে এমন কথা শোনার পর আমি তৎক্ষণাৎ কোচ রবি শাস্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করি। এরপর আমরা দুজন শাস্ত্রীর রুমে যাই। তাঁকে বলি, শামি তোমাকে কিছু বলতে চায়। শামি তখনই বলে উঠলো, আমি আর ক্রিকেট খেলতে চাই না।’

এই কথা শুনে আমি আর শাস্ত্রী ওকে বললাম, ‘ক্রিকেট ছাড়া তুমি আর কী জানো? তুমি শুধু জানো কিভাবে বল করতে হয়। এরপর রবি শাস্ত্রী একান্তেই বলল, এটা ভাল যে তোমার নিজের প্রতি হতাশা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তোমার এখনও অনেক কিছু প্রমাণ করার রয়েছে। তোমার ফিটনেস বাজে। তোমার যে রাগটা হচ্ছে, তা শরীরের উপরে খাটাও। আমরা তোমাকে ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে পাঠাচ্ছি। তুমি সেখানে যাবে। কোনো বাড়ি যাওয়া চলবে না।’

ভরত অরুণ আরো যুক্ত করে বলেন, ‘আমার এখনও মনে আছে, শাস্ত্রীর কথা শোনার পর শামি আমাকে বলেছিল, স্যার। আমি বুড়ো হরিণের মতো হয়ে গিয়েছি। আমাকে যত পারেন তত দৌড়ের উপর রাখেন’। তো আমাদের কথা অনুযায়ী পরে সে এনসিএ-তে ৫ সপ্তাহ কাটিয়েছিল। এরপর সে ফিটনেস টেস্টে পাশ করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ পায়। ৪ ম্যাচের সে টেস্ট সিরিজে শামি দুর্দান্ত বল করেছিল।’

মোহাম্মদ শামির আর এরপরে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৮ সালের  সেই সময়ের পর থেকে লাল বলের ক্রিকেটে দলের নিয়মিত মুখ তিনি। শাস্ত্রী আর ভরত অরুণের সাথে সেই এক আলাপচারিতাতেই শামির ক্যারিয়ারে নতুন এক মোড় পেয়েছিল। পাঁচ বছর আগের সেই শামি এখন অনেক পরিণত।

আর ঐ সময়টায় ফিটনেস নিয়ে কাজ করাটা তাঁর জন্য কতটা আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল তা পরের সময়টা ক্যারিয়ার গ্রাফ দেখলেই বুঝা যায়। দল থেকে বাদ পড়ার আগে যেখানে ৩০ টেস্টে তাঁর বোলিং গড় ছিল ২৮.৯০, সেখানে বাদ পড়ার পর ৩১ টেস্টে ২৫.৫২ বোলিং গড়ে বল করেছেন শামি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...