বিদেশি নয়, রংপুরের লড়াকু দেশিরাই

বিপিএলের শুরু থেকেই শিরোপা জেতাকেই পাখির চোখ করেছিল রংপুর রাইডার্স। সেই লক্ষ্যে দলে তারকার কমতি হয়নি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই একাদশে এসেছে বিদেশির পরিবর্তন, একের পর এক তারকা ক্রিকেটার যোগ দিয়েছেন রাইডার্স শিবিরে। অথচ বিদেশিদের ভীড়ে আদতে রংপুরকে টেনেছেন দেশি ক্রিকেটাররাই। কিন্তু শেষরক্ষা হল না, ফাইনালের আগেই বিদায় নিলেন নুরুল হাসান সোহানরা। 

এবারে বিপিএলের সাথে একই সময়ে আরো তিনটি ফ্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট চালু থাকায় তারকা সংকটে পড়েছিল দলগুলো। বড় সময়ের জন্য কোনো বিদেশিকেই পায়নি কোনো দলই। তবে রংপুরের তাতে থোড়াই কেয়ার, অর্থের ঝনঝনানিতে প্রতি ম্যাচেই তাঁদের হয়ে মাঠে নেমেছেন বড় বড় সব তারকা। 

কিন্তু শেষপর্যন্ত তারকাবহুল দল গড়াটা ব্যর্থতার জন্ম দিল রংপুরকে। মূলত বিদেশিদের প্রতি অতিভক্তিই যেন কাল হয়ে দাঁড়ালো দলটির জন্য। বিভিন্ন সময়ে আজমতউল্লাহ ওমরজাই, হারিস রউফ, মোহাম্মদ নওয়াজ, মুজিব উর রহমান, সিকান্দার রাজা, শোয়েব মালিক, নিকোলাস পুরান, স্যাম বিলিংস, দাসুন শানাকা, ডোয়াইন ব্রাভোর মত ক্রিকেটাররা বিভিন্ন সময়ে খেলেছেন তাঁদের হয়ে। এ যেন রীতিমত এক তারকা মেলা। 

অথচ এক ওমরজাই ছাড়া রংপুরের হয়ে আলো ছড়াতে পারেননি কেউই। দেশের হয়ে খেলার জন্য টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বের আগে ওমরজাই দল ছাড়তেই যেন দলটির কংকাল বেরিয়ে পড়ে। কুমিল্লার বিপক্ষে তাই যেন বোলিংয়ে ছন্নছাড়া এক রূপই ফুটে উঠে রংপুরের। নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি কোনো বিদেশিই। উপরন্তু বারবার বিদেশির পরিবর্তনে দলটির খেলোয়াড়দের মাঝে গড়ে ওঠেনি কোনো সমন্বয়। মাঠের খেলাতে নানা সিদ্ধান্তহীনতায় ফুটে উঠেছে সেসব সমস্যাও। 

অথচ ভরসা না রাখা দেশিরাই ম্যাচ জেতানো সব পারফরম্যান্স করে রংপুরকে তুলে এনেছিলেন কোয়ালিফায়ারে। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ তিন রানসংগ্রাহকের মাঝে দুইজনই বাংলাদেশি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই ঝড়ো সূচনা এনে দেয়া রনি তালুকদারের ৪২৫ রানের পাশাপাশি মোহাম্মদ নাইম করেছেন ২১৭ রান।

এমনকি কোয়ালিফায়ারে সিলেটের বিপক্ষে ম্যাচেও রনির ৬৬ রানের ইনিংসই দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান। তিনি আউট হওয়ার পরেই মুলত জয়ের আশা মিলিয়ে যায় রংপুরের। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দলের পক্ষে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান, শামিম পাটোয়ারি এবং অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান।

বল হাতেও ছিল দেশিদের দাপট। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট শিকার করেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ। ডেথ ওভারগুলোতে মূলত তাঁর উপরেই নির্ভরশীল দলটি। এছাড়া স্পিনার রাকিবুল হাসান শিকার করেন ১১ উইকেট।

হারিস রউফ, মুজিব উর রহমানরা টুর্নামেন্টের মাঝপথে এসে অতিথি পাখি হয়ে কয়েক ম্যাচ খেললেও টুর্নামেন্টের সবচেয়ে জরুরি সময়েই তাঁদের পায়নি দলটি। ফলে কার্যত তাঁদের উপস্থিতি কোনো কাজেই লাগেনি রাইডার্স শিবিরের। 

এবারের আসরের ব্যর্থতা মূলত রংপুরকে শিক্ষা দেবে পরবর্তী আসরের জন্য। বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে দেশিদের উপর ভরসা করলেই হয়তো ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরোতে পারবে দলটি। দলটির ম্যানেজমেন্ট যত দ্রুত এই সত্যটা বুঝতে পারবেন, রংপুরের জন্য ততই মঙ্গল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link