জার্সিতে তাঁদের তিনটি স্টার। এবার চাইলে আরেকটা স্টার বাড়াতে পারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। চতুর্থবারের মত তাঁদের হাতে উঠল এই ট্রফি।
অথচ, টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল তাঁরা হ্যাটট্রিক ম্যাচ হেরে। আরেক দল শুরু করেছিল একেবারে ভিন্নভাবে। এই দুই দল যখন ফাইনালের মঞ্চে তখন সে ম্যাচটা নিশ্চয়ই হয়ে রবে স্মরনীয়। ঠিক তেমন একটি ম্যাচ দিয়েই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের নবম আসর পেয়ে গেছে তাঁর চ্যাম্পিয়ন। টানা দ্বিতীয় বারের মত শিরোপা উল্লাসে মেতেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
টসটা জিতে নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বোলিং করবার সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে নামে গেল বারের চ্যাম্পিয়ন দলটি। তবে শুরুতে বেশ নড়বড়ে ঠেকে তাদের। ওভার থ্রো আর মিস ফিল্ডিংয়ের সুবিধা নিতে থাকে সিলেট স্ট্রাইকার্স। আন্দ্রে রাসেলের প্রথম ওভারেই সিলেটের স্কোরবোর্ডে ১৮ রান। চাপে পড়ে যায় কুমিল্লা।
সেই চাপ থেকে দলকে পরিত্রাণ দেন ইনফর্ম তানভীর ইসলাম। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই তিনি বোল্ড আউট করেন তৌহিদ হৃদয়কে। সেখানেই ছন্দপতন ঘটে সিলেটের। পরের ওভারে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ফেরালে চাপটা এসে ভর করে সিলেট স্ট্রাইকার্সের উপর। তবে এদিন যেন শান্ত আবারও ধারণ করেন তাঁর অশান্ত মূর্তি। কোন কিছুতেই তিনি দমে যাবেন না এমন এক ব্রত নিয়েই হাজির।
করলেনও তাই। দূর্দান্ত ব্যাটিং করে গেলেন তিনি। ২৬ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলটাকে তিনি আর মুশফিকুর রহিম মিলে সামলেন নিলেন। আগ্রাসনটা অব্যাহত রেখে শান্ত তুলে নেন অর্ধশতক। মুশফিকুর রহিম তখনও অবধি সাপোর্টিং রোলে থেকে গেলেন। ১০৫ রানের মাথায় ৬৪ করা শান্ত আউট হয়ে যায়। এরপরই রুদ্র অবতারে আগমন ঘটে মুশফিকুর রহিমের।
তিনি শাসন করতে শুরু করেন কুমিল্লার বোলারদের। কর্তৃত্ব নিয়ে তিনি এগিয়ে নিয়ে যান সিলেটের ইনিংস। তিনি একা হাতেই স্ট্রাইকার্সদের ইনিংসটি বড় করতে থাকেন। ৭৪ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলেন মুশফিকুর রহিম। অপরাজিত থেকে দলের সংগ্রহ নিয়ে যান ১৭৫ অবধি। ফাইনালের মঞ্চে টার্গেট লড়াই করবার মত।
সেই লড়াইয়ের শুরুটা দুর্দান্ত করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ওপেনাররা। প্রথম দুই ওভারে ২৬ রান সংগ্রহ করেন লিটন দাস ও সুনীল নারাইন। দ্রুতই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবার একটা তাড়া যেন ছিল কুমিল্লার ব্যাটারদের মধ্যে। তবে এত সহজে শিরোপায় হাত রাখাটা বেমামান। তাইতো কুমিল্লার স্বপ্নে প্রথম আঘাতটা করেন রুবেল হোসেন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তিনি তুলে নেন সুনীল নারাইনের উইকেট।
এরপরের ওভারে ইমরুল কায়েসকে ফেরান জর্জ লিন্ডে। সে ওভারটায় কোন রান নিতে পারেনি কুমিল্লা। ফলশ্রুতিতে ভীষণ চাপে পড়ে যায় কুমিল্লা। বিশাল লক্ষ্য়ের পথে এমন একটি ওভার মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয় কয়েকশগুণ। সে পরিস্থিতি সামাল দেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা লিটন এবং জনসন চার্লসের ব্যাটে ভর করে।
মিস ফিল্ডিংয়ের মহরা দেখিয়েছে দুই দলই। সেখানেই লিটন দাস হাতখুলে খেলার লাইসেন্স পেয়ে যায়। দৃষ্টিনন্দন সব শটের মিশেলে তিনি খেলে ফেলেন ৫৫ রানের দুরন্ত এক ইনিংস। ততক্ষণ অবধি জয়ের স্বপ্ন বেঁচে রয়েছে কুমিল্লার। তবে লিটন রুবেলের শিকারে পরিণত হওয়ার পর খানিকটা শঙ্কা জেগেছিল ভিক্টোরিয়ান্সের শিবিরে।
কিন্তু তখনও জনসন চার্লসের ধ্বংসযজ্ঞ চালানো বাকি। তিনি তখনও নিজের স্বরুপ দেখাননি। ৩৯ বলে ৩৯ রানের ছিলেন চার্লস। এরপরের তিন বলেই অর্ধশতক ছাড়িয়ে যান ক্যারিবিয়ান এই ব্যাটার। তাঁর সাথে যুক্ত হন মঈন আলী। তবে আসল তাণ্ডবটা দেখিয়েছেন জনসন চার্লস। শেষের দিকে ১৩ বলে ৪০ রানের স্টিমরোলার চালালেন তিনি।
৫২ বলে ৭৯ রানের সেই ইনিংসের বদৌলতে চতুর্থবারের মত শিরোপা জয়ের আনন্দ ছড়িয়ে যায় গোটা কুমিল্লার ডাগআউটে। সাত উইকেটের বিশাল জয় দিয়েই বিপিএলের সর্বোচ্চ শিরোপাধারী দল এখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।