নাগপুর থেকে দিল্লি- বর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতে বদলায়নি কোনো চিত্র। নাগপুর টেস্টের মতোই এ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ধরাশয়ী হয়েছে তিন দিনেই। একই ভাবে, ম্যাচ জয়ের নায়ক যথারীতি সেই রবীন্দ্র জাদেজাই। আগের ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। এবার এক ইনিংসেই নিয়েছেন ৭ উইকেট।
শুরুটা করেছিলেন উসমান খাজাকে দিয়ে। শেষ করেছেন ম্যাথু কুনেমানকে দিয়ে। ইনিংসে সাত উইকেট, আর দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট। ক্যারিয়ারে এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ১০ উইকেটের দেখা পেলেন জাদেজা। বোলারদের আধিপত্যে ম্যাচসেরাকেও খুঁজে নিতে তাই বেগ পেতে হয়নি। আগের ম্যাচের মতোই এ ম্যাচেও ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে রবীন্দ্র জাদেজার হাতে।
দিল্লির উইকেট স্পিন সহায়ক। অস্ট্রেলিয়ার টিম ম্যানেজমেন্ট তাই এক প্রকার ভিন্ন এক কৌশলেই এগিয়েছিল। স্পিনারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে প্রায় সব ব্যাটার সুইপ শটের চেষ্টা করলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সেই কৌশল দিনশেষে বুমেরাংই হয়েছে তাদের। দিল্লি টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ছয়জন ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন সুইপ শট খেলতে গিয়ে।
ম্যাচশেষে রবীন্দ্র জাদেজা স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন- এই ধরনের উইকেট তাঁর বিপক্ষে সুইপ শট খেলা মোটেই ভাল কোনো কৌশল নয়। এ নিয়ে তিনি আরো যুক্ত করে বলেন, ‘এই উইকেটের বল খুব নিচু হয়। আমি জানতাম তারা সুইপ শট খেলবে। আর আমার পরিকল্পনা ছিল শুধু উইকেট বরাবর বল করে যাওয়া। কারণ তারা রানের দিকে ছুটছিল। আমি যদি স্ট্যাম্প বরাবর বল করি, তাহলে একটা সময় পর তারা অবশ্যই ভুল করবে। হয়েছেও তাই। এই ধরনের উইকেটে সুইপ শট খেলা মোটেই ভাল সিদ্ধান্ত নয়।’
ম্যাচশেষে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স নিজেও ব্যাটারদের শট সিলেকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াই এগিয়ে ছিল। তাই হারের কষ্টটা আর লুকাতে পারেননি কামিন্স। তিনি বলেন, ‘আমরা খেলায় এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু এগিয়ে থেকেও ম্যাচটা হাত ফসকে গেল। এমন হার সত্যিই কষ্টদায়ক।’
প্যাট কামিন্সের এমন হারের হতাশা প্রকাশ করাটা বেশ স্বাভাবিকই বটে। কারণ দ্বিতীয় দিন শেষেও বেশ ভাল অবস্থানে ছিল অজিরা। ১ উইকেটে ৬১ রান আর ৬২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করে তারা। কিন্তু তৃতীয় তিনের শুরুতেই ছন্দপতন ঘটে।
আগের দিনে ওয়ানডে মেজাজে দারুণ ব্যাটিং তৃতীয় দিনের সকালে ৫২ রান তুলতেই হারিয়েছে ৯ উইকেট। অজিদের জন্য আরো হতাশাজনক ব্যাপার হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া শেষ ৮ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ২৮ রানে। ভারতকে বড় লিডে তাই আর ফেলা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। ভারতের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১৫ রান। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া এ সহজ লক্ষ্য টপকাতে আর বেগ পেতে হয়নি ভারতকে। ৪ উইকেট হারিয়ে দিনের মধ্যেভাগেই লক্ষ্যে পৌঁছে রোহিত শর্মার দল।
এ ম্যাচ জয়ের ফলে সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গেল ভারত। ফলত, ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতার অপেক্ষাটা আবারো বাড়লো অজিদের জন্য। সিরিজের পরবর্তী দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ ড্র করাই এখন অজিদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। আগামী ১ মার্চে ইন্দোরে আবারো সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মুখোমুখি হবে এ দুই দল।