বেশ কয়েকবছর ধরেই ভারতের পেস আক্রমণকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। আইপিএল দিয়ে উঠে এলেও শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টি নয়, তিন ফরম্যাটেই ভারতের পেস আক্রমণের নতুন যুগের সূচনার অন্যতম কাণ্ডারি বুমরাহ।
ভারতের স্পিন বান্ধব উইকেটেও বুমরাহর নেতৃত্বে ভারতের পেস আক্রমণও ছিল দারুণ সফল। তিন ফরম্যাটেই এক নাগাড়ে খেলার কারণে। বর্তমানেই ইনজুরি থেকে ফিরে আসার লড়াইয়ে আছেন বুমরাহ।
ভারতের সাবেক ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর তাঁর লেখা বই ‘কোচিং বিয়ন্ড’-এ তুলে এনেছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের ভেতরকার নানান ঘটনা। সেই বইতে শ্রীধর তুলে এনেছেন ২০১৯ সালে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট সিরিজের সময়কার একটি ঘটনা। শ্রীধর জানান, সিডনি টেস্টে ইচ্ছে করেই আস্তে বোলিং করছিলেন বুমরাহ।
মেলবোর্নে এর আগেই টেস্টেও পাঁচ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের জয়ের অন্যতম রূপকার ছিলেন তিনি। ভারতের সামনে তখন সুযোগ সিডনি টেস্ট জিতে সিরিজ নিশ্চিত করার।
ঐতিহাসিক ভাবেই সিডনির উইকেট অস্ট্রেলিয়ার বাকি মাঠ গুলোর মত ততটা পেস বোলাদের জন্য সহায়ক নয়। সেই সিরিজের সিডনিত উইকেটও ছিলো ফ্ল্যাট। পেসারদের সুবিধা পাবার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল না। পরিস্থিতি বোঝার পর ভারতের বোলিং কোচ ভারত অরুণের কাছে যান বুমরাহ।
বুমরাহ আর অরুণের সেই কথোপকথন নিজের বইয়ে তুলে এনেছেন শ্রীধর, ‘বুমরাহ কিছুটা দ্বিধা নিয়ে অরুণের কাছে গিয়ে বলে, উইকেটে পেসারদের জন্য কিছুই নেই। অরুণের অনেক গুণের মধ্যে একটি ছিল সে খুব ভালো শ্রোতা। অরুণ জানতো বুমরাহ তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু সেই ব্যাপারে বুমরাহ নিশ্চিত হতে পারছিল না। তাই তাকে জোর করার চেয়ে বুমরাহকে সময় দিতে চাইলেন অরুণ।’
বুমরাহ কোচকে বললেন, ‘আমি শারীরিক এবং মানসিকভাবে খুবই বাজে অবস্থায় আছি। পিচ যে অবস্থায় আছে তাতে করে এই টেস্টে ড্র ছাড়া অন্য কিছু হচ্ছে না। এখন আমি যা করতে চাই তা হল, আমি কিছুটা আস্তে বোলিং করব। তবে, আমি নিজের মত করে সর্বোচ্চ ভালো করার চেষ্টা করব।’
২০১৯ সালের বিশ্বকাপ তখন মাত্র পাঁচ মাস দূরে। এই সিরিজের পরেই ছিল ভারতের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ। বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে বুমরাহকে সেই সিরিজে আগেই বিশ্রাম দিয়েছিল বিসিসিআই। এমন পরিস্থিতিতে তখনকার বোলিং কোচ ভারত অরুণের জন্য বুমবাহর এমন পরিস্থিতি খুব ভালো ভাবে সামলাতে হত।
ভারত অরুণ তখন বুমরাহর সামনে দুটি বিকল্প উপস্থাপন করেন। অরুণ তখন বুমরাহকে বলেন, ‘প্রথমত তুমি জিনিসটা সহজভাবে নিতে পারো। তুমি কিসুটা আস্তে বোলিং করে এই টেস্ট শেষ করে দেশে গিয়ে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারো। কিন্তু এতে করে যা হবে তা হল, তুমি ব্যাটারদেরকে তোমাকে সহজে খেলতে পারার আত্মবিশ্বাস উপহার দিয়ে দেবে। তুমি কি কারণে আস্তে বোলিং করলে তা ব্যাটাররা জানবে না। শন মার্শ বা মার্নাস লাবুশেইন এর মত ব্যাটাররা তোমাকে সহজে খেলার আত্মবিশ্বাস পাবে যে তারা এমনটা আরো করতে পারবে। তাই ভবিষ্যতে তুমি যদি তাদের বিপক্ষে নিজের সেরাটা দিয়ে সর্বোচ্চ পেসেও বোলিং করো তাতেও তারাই হয়তো সফল হবে কারণ তাদের সেই আত্মবিশ্বাসটা তখনো থাকবে।’
দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে অরুণ বলেন, ‘তোমার সামনে দ্বিতীয় অপশন হচ্ছে তুমি মাঠে নেমে চার-পাঁচ ওভার করে আরো দুই একটি ওভার করবে যেখানে তুমি তোমার সেরাটা দিয়ে বোলিং করবে। এমনটা করে তুমি একটা বার্তাও দিতে পারবে যে টেস্টের তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে পিচের এমন পরিস্থিতিতেও তুমি নিজের সবটুক উজাড় করে দিচ্ছো। ভবিষ্যতে যখন তুমি আবার এই ব্যাটারদের বিপক্ষে বোলিং করবে এবং পিচ থেকে কিছুটা হলেও সাহায্য পাবে তখন তখন তুমি আরো বেশি আত্মবিশ্বাস পাবে। তখন তুমি অনেক এগিয়ে থাকবে।’
দুটি বিকল্প বুমরাহর সামনে উপস্থাপন করে সিদ্ধান্ত নেবার ভার তাঁর ওপর ছেড়ে দেন বোলিং কোচ অরুণ। অরুণের কথা গুলো টনিকের মত কাজ করে বুমরাহর জন্য।
ম্যাচের চতুর্থ দিনে নিজের সেরাটা দিয়ে বোলিং করেন বুমরাহ। যদিও তিনি সেদিন মাত্র একটি উইকেট পান কিন্তু বোলিং করেন দুর্দান্ত। সেদিন তো সব আলো কুলদীপ যাদব কেড়ে নিলেও নতুন বলে বুমরাহর বোলিং উইকেটে টেকার কাজটা কঠিন করে তুলেছিল অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারদের জন্য।
নিজের লেখা বইতে শ্রীধর জানান, সেদিনের চা বিরতিতেই কোচের কাছে যান বুমরাহ। এমন দারুণ বোলিংয়ের পর বোলিং কোচকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি বুমরাহ, ‘আপনি ঠিক, স্যার। আমি সব সময় নিজের সেরাটা দেব। আপনি আমার চিন্তার জগতে একটা বড় পরিবর্তন এনেছেন। আমি এই জিনিসটা শিক্ষণীয় হিসেবে নিচ্ছি এবং সামনের দিনগুলোতে এটি মাথায় রাখব।’