বদলার শুভ্রতায় আচ্ছন্ন অ্যানফিল্ড

একটা বদলা নেওয়ার তাড়না নিশ্চয়ই ছিল। বহুদিনের পুষে রাখা একটা বদলা। যদিও লিভারপুলের সাথে ম্যাচ জয়ের স্মৃতি খুব একটা পুরনো নয়। এই তো গেল মৌসুমেই তো রিয়াল মাদ্রিদ তাদের ১৪ তম উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শিরোপা জিতেছিল লিভারপুলকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে। তবুও প্রতিশোধের একটা আগুন জ্বলছিল।

অ্যানফিল্ডকে রীতিমত দূর্গ বলা হয়। এখানটায় খাবি খাওয়া যেন অবধারিত। বিশ্বের বাঘা-বাঘা সব দল লিভারপুলের ঘরের মাঠে যেন কেবল ছেলেখেলা করবার বস্তু। সেই ছেলেখেলার স্বীকারটা এক দফা হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদও। ইতিহাসের অন্যতম সমৃদ্ধশালী ক্লাবটির কপালেও খানিকটা কালিমা জুটেছিল ২০০৮/০৯ মৌসুমে।

সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাউন্ড অব সিক্সটিনের ম্যাচে অ্যানফিল্ডে নিমন্ত্রণ পেয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। লিভারপুল অবশ্য মাদ্রিদের ঘরে গিয়ে ১-০ গোলের একটা জয় নিয়ে ফিরেছিল। খানিকটা স্বস্তি তখন বিরাজমান স্টিভেন জেরার্ডের দলে। আর সে স্বস্তি রিয়াল মাদ্রিদের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গুণে গুণে চার খানা গোল সেবার হজম করেছিল লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।

এর আগে পরে এত বড় ব্যবধানে এই দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে হারেনি কোন দল। হেড-টু-হেড লড়াইয়ে খানিকটা ব্যাকফুটে থাকার মত একটা ফলাফলই ছিল সেবার মাদ্রিদের জন্য। সেই রেকর্ডের বিপক্ষে পাল্টা এক রেকর্ড তো করা চাই। আর সে রেকর্ড করবার সুযোগটা এবার পেয়েই গেল রিয়াল মাদ্রিদ। আরও একবার যেন কালিমা মোচনের মঞ্চ তৈরি হয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদের জন্য।

রাউন্ড অব সিক্সটিনে মুখোমুখি লিভারপুল ও মাদ্রিদ। এবার প্রথম লেগের ম্যাচ অ্যানফিল্ডে। উগ্র সমর্থকদের সামনে বুনো উল্লাস করবার একটা সুযোগ। তবে যেহেতু অ্যানফিল্ড, সেহেতু জয়টাও এক মরীচিকা। ম্যাচের শুরুতে বড়অ ব্যবধানের জয় কেবলই এক ভ্রম মনে হতে থাকে। চার মিনিটের মাথায় এগিয়ে স্বাগতিকরা। দুর্দান্ত এক ব্যাকহিল শটে রিয়ালের জালে বল জড়ান ডারউইন নুনেজ।

উল্লাসে ফেটে পরে অলরেডদের আস্তানা। এর ঠিক মিনিট দশেক বাদেই থিবো কর্তোয়ার মারাত্বক ভুল। আর সে ভুল থেকে গোল হজম। এবার স্কোরার মোহাম্মদ সালাহ। ম্যাচের একেবারে প্রারাম্ভেই ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে গেল মৌসুমের রিয়াল মাদ্রিদ সম্পর্কে যাদের বিন্দুমাত্র ধারণা রয়েছে তাঁরা নিশ্চয়ই তখনই হাল ছেড়ে দেয়নি। পরাশক্তিদের বিপক্ষে চোখ ধাঁধানো সব ক্যামব্যাক দিয়েই শিরোপা উৎসবে মেতেছিল লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।

ডাগ আউটে থাকা ইয়ুর্গেন ক্লপ অবশ্য জয় উদযাপনের সকল প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিলেন। কিন্তু সব আয়োজনে এক পসলা বৃষ্টি হয়ে হাজির মাদ্রিদের তরুণ তুর্কি ভিনিসিয়াস জুনিয়র। অসাধারণ দক্ষতায়, লক্ষ্যভেদ। আর সেখান থেকে বাকি গল্পটা শুধু রিয়াল মাদ্রিদই লিখেছে। ম্যাচের ২১ মিনিটে ব্যবধান কমানোর পর, ৩৬ মিনিটে সমতা ফেরান ভিনিসিয়াস।

তবে এক্ষেত্রে তিনি তাঁর স্বদেশী অ্যালিসন বেকারকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন। কেননা তাঁর একটি ভুল লিভারপুলের স্বপ্নজয়ের সকল আশা ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। দুই দলই দারুণ খেলতে থাকে। প্রথমার্ধের শেষটা হয় ২-২ সমতায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবারও কার্লো আনচেলত্তির মাস্টার মাইন্ডের প্রতিফলন।

ডি-বক্সের বা দিকে প্রায় গোললাইনের কাছাকাছি জায়গায় ফ্রি-কিক পায় রিয়াল। লুকা মদ্রিচের আলতো টোকার বল খুঁজে নেয় এডার মিলিতাওয়ের মাথা। ব্যাস ৩-২। তবে ফ্রি-কিকের পূর্বে একেবারেই যেন অদৃশ্য ছিলেন মিলিতাও। দাঁড়িয়ে ছিলেন খানিকটা আড়ালে। হুট করে আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলেন, চমকে দিলেন গোটা অ্যানফিল্ডকে।

আরও এক রোমাঞ্চকর ক্যামব্যাকের অপেক্ষা। অপেক্ষাটা শেষ হয়েছে ৯০ মিনিটে। তবে মাঝে অবশ্য ব্যবধান বাড়িয়েছেন করিম বেনজেমা। দুইবার তিনি খুঁজে পেয়েছেন জালের ঠিকানা। একবার তাঁকে সহযোগিতা করেছেন রদ্রিগো তো আরেকবার ভিনিসিয়াস। এই দুই তরুণের সহয়তায় বেনজেমা ব্যবধান বাড়িয়ে করেন ৫-২। বেশ বড় জয় বলা চলে। ২০০৮/০৯ মৌসুমের ছোট একটা বদলা নিয়ে নেওয়া গেল। এই দিনটির অপেক্ষাই যেন করছিল লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link