বর্তমান প্রজন্মের সেরা ব্যাটারের প্রসঙ্গ আসলে নিশ্চিতভাবেই বিরাট কোহলির নামটা প্রথমেই আসবে। কিন্তু অধিনায়ক বিরাট কোহলির অধ্যায়টা অনেকটাই ব্যর্থতায় মোড়ানো। ভারতকে সব আইসিসি টুর্নামেন্টের শিরোপা স্বাদ পাওয়ানো অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনির উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব নেয়া বিরাট ভারতকে কোনো আইসিসি শিরোপা এনে দিতে পারেননি।
কিন্তু একজন অধিনায়ককে শুধু মাঠে জিতলেই চলে না, মাঠের বাইরে দলকে তিনি কতটা অনুপ্রাণিত করতে পারছেন সেটিও দেখবার বিষয়। এই কাজটাতে অনেকটাই সফল কোহলি। শুধু ব্যাট হাতে নয়, ভারতীয় ক্রিকেটে বিরাট কোহলির ইমপ্যাক্টটা তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে সেরাটা বের করে আনার ক্ষেত্রেও।
অধিনায়ক হবার পর দলের খোলনলচেই পাল্টে ফেলেছিলেন বিরাট। ঘরের মাঠে বরাবরই সফল ছিল ভারত। কিন্তু বিদেশের মাটিতে জিততে দলের মানসিক এবং স্কিলের দিক গুলোতে গুরুত্ব দেন তিনি। তবে বিরাটের সর্বোচ্চ গুরুত্বের জায়গা ছিল ফিটনেস।
রবি শাস্ত্রি কোচ থাকাকালীন দুইজনে মিলে সেই মহা আলোচিত ইয়ো ইয়ো টেস্টের প্রচলন করেন জাতীয় দলে। ‘১৪০ কোটি মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে ফিটনেস ধরে রাখতে না পারলে জাতীয় দলে জায়গা হবে না’- এমন ঘোষণাও দিয়ে রেখেছিলেন তারা।
বিরাটের আমলে ভারত কোনো আইসিসি শিরোপা না জিতলেও বিদেশের মাটিতে নিয়মিত টেস্ট জেতে ভারত। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল কিংবা ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল অথবা প্রথম আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠা- এসব কিছুই হয়েছে বিরাটের আমলে। কিন্তু শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপ নিয়েই ২০২১ সালে অধিনায়কত্ব ছাড়েন বিরাট।
বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বে অভিষেক হয়েছে অনেক তরুণের যারা এখন ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম স্তম্ভ। ঋষাভ পান্ত,শুবমান গিল, মোহাম্মদ সিরাজ কিংবা সুরিয়াকুমার যাদবরা ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন বিরাটের অধীনেই।
বাকিদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুটা ভালো হলেও তা মোটেও ভালো হয়নি পেসার মোহাম্মদ সিরাজের ক্ষেত্রে। আইপিএলের দল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর (আরসিবি) হয়ে খেলার সময়ই তরুণ সিরাজকে মনে ধরে বিরাটের। সেখান থেকেই ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ হয় তাঁর।
শুরুটা ভালো হয়নি সিরাজের। টুকটাক উইকেট পেলেও প্রচুর রান দিচ্ছিলেন। তাই ভারতীয় দলে জায়গা হারান সিরাজ। কিন্তু এরপরই আইপিএলে দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটান সিরাজ। এবং এবার ক্রিকেটের বনেদি ফরম্যাট টেস্টে ভারতীয় দলে জায়গা করে নেন।
লাল বলের ক্রিকেটে এরপর থেকে দলের নিয়মিত মুখ সিরাজ। কিন্তু এই ফিরে আসার গল্পটা সহজ ছিলো না সিরাজের জন্য। ভারতের উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান দীনেশ কার্তিক জানালেন, সিরাজের পুরো ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় অন্যতম প্রভাবক ছিলেন বিরাট কোহলি।
ক্রিকবাজের ‘রাইজ অব নিউ ইন্ডিয়া’ শো তে কার্তিক বলেন, ‘২০২০ সালে মহামারীর পরবর্তী আইপিএলে দারুণ পারফর্ম করে সিরাজ। সেই সিজনেই দল থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছিল সে কিন্তু বিরাট তাকে সমর্থন দেয়। বিরাট বলেছিল, “আমি তাকে দলে চাই”। এরপর সে একটা ম্যাচে তিন উইকেট পেল এবং সেখান থেকেই তাঁর টি- টোয়েন্টি ক্যারিয়ার গতি পেল। সে দারুণ করছে এখন। সিরাজ যে জায়গা থেকে উঠে এসেছে সেখান থেকে উঠে এসে কাউকে এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভালো করতে দেখা সত্যিই দারুণ। তাঁর সাফল্যের গল্পটা দারুণ এবং অনেকেই এখান থেকে অনুপ্রেরণা পাবে।’
যার জন্য নিজের ক্যারিয়ারের কঠিন সময় পার করে এখন জাতীয় দলে নিয়মিত খেলছেন সিরাজ সেই বিরাটকে সব সময় কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এসেছেন সিরাজ। বিরাটের অনুপ্রেরণায় নিজের সেরাটা নিংড়ে দিয়ে এখন সাফল্য পাচ্ছেন সিরাজ। টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকের পর বাজে পারফর্ম করে চাপে থাকলেও নিজের কাঁধে পেয়েছিলেন বিরাট কোহলির ভরসার হাত।
কার্তিক আরো বলেন, ‘একজন বড় ভাইয়ের মত সব সময় বিরাটকে আদর্শের জায়গায় দেখে এসছে সিরাজ। খারাপ সময়ে বিরাট যে তাকে সাপোর্ট করেছিল তা সে সব সময় স্মরণ করে। কোহলির অধিনায়কত্বেই দলে ফিরেছিল সে এবং সে কারণে সে বিরাটকে তাঁর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ত্ব হিসেবে দেখে। সিরাজ দুইজনকে লোককে খুব সম্মান করে- ভারত অরুণ আর বিরাট কোহলি। সিরাজ যখন ক্যারিয়ারের ভালো করা শুরু করেছে তখন অরুণ তাকে অনেক সাহায্য করেছে। সেও সিরাজের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’