দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের হয়ে তাঁর প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। তাও প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের মত শক্তিশালী দল। ফলে হেড কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে খানিকটা চাপেই থাকার কথা। যদিও সংবাদ সম্মেলনে সেই চাপ ফুটে ওঠেনি। বরং অল্প সময়ে যতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছেন সেটাই যথেষ্ট মনে করছেন এই কোচ।
আগামীকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। আজ ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন হেড কোচ হাতুরু। দলের প্রস্তুতি নিয়ে আশাবাদী হাতুরু বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা ভালো প্রস্তুতিই নিয়েছি। খুবই ভালো ম্যাচ সিনারিও অনুশীলন করেছি আমরা। সব মিলিয়ে ক্রিকেটাররা ভালো ভাবেই প্রস্তুত আছে।’
পুরো দল ম্যাচ সিনারিও অনুশীলন করলেন সেসব করতে পারেননি সাকিব আল হাসান। দলের গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য ছুটি কাটিয়ে দলের সাথে যোগ দিয়েছেন গতকালই। ফলে দুই দিন অনুশীলন করেই মাঠে নামতে হচ্ছে এই ক্রিকেটারকে। ওদিকে লম্বা ভ্রমণের ক্লান্তিও নিশ্চয়ই জেঁকে বসবে তাঁর উপর।
হেড হোচ হাতুরু অবশ্য এটাকে বড় কোন সমস্যা বলে মনে করছেন না। তিনি মনে করেন এই সময়ে এটাই বাস্তবতা। সাকিব প্রসঙ্গে হাতুরু বলেন, ‘দেখুন, এখনকার দিনে এমনই কিন্তু হচ্ছে। তাঁর জরুরী ছিল পরিবারের কাছে যাওয়া। তবুও আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল কেমন বোধ করছে। সে বলেছে ভালো আছে। গতকাল ও আজকে অনুশীলনও করেছে। সে তাঁর শরীর সম্পর্কে ভালো করেই জানে। আর আমাদেরও উচিৎ তাঁকে ব্যাক করা।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটা সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য। সাদা বলের ক্রিকেটে প্রতিটা ডিপার্টমেন্টেই ভীষণ শক্তিশালী তাঁরা। তবুও ভালো খেলাটাই ক্রিকেটারদের দায়িত্ব বলে মনে করেন হাতুরু। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় দলের হয়ে খেলি। আমাদের সব সময়ই লক্ষ্য থাকে ভালো ক্রিকেট খেলা। এটা ঠিক ইংল্যান্ড দলের ডেপথ অনেক। ফলে আমাদের জন্যও ভালো পরীক্ষা হবে এটি।’
আর কঠিন এই পরীক্ষায় দলের দিকে ভালো নজরই রাখবেন এই কোচ। সংবাদ সম্মেলনে সরাসরি জানিয়েছেন প্রথম দুই ম্যাচে দেখবেন ক্রিকেটারদের। দলকে বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এসেছি সাত দিনের মত হবে। ছেলেরা দারুণ ক্রিকেট খেলছে। তবে আমি প্রথম দুই ম্যাচ নজর রাখব। তাঁরা যেভাবে খেলছে সেভাবে যদি সাফল্য আসে তাহলে আমি কোন পরিবর্তন করতে চাইব না। তবে যদি না আসে তাহলে আমি আমার ইনপুট দিব।’
ওদিকে ইংল্যান্ড দলের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট সামলানোই বড় চ্যালেঞ্জ হবে বাংলাদেশের জন্য। কেননা বাংলাদেশের ব্যাটাররা খুব বেশি আক্রমণাত্মক নন। মিরপুরের উইকেটে খেলা হলেও এই আক্রমণাত্মক মানসিকতাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। যদিও হাতুরু মনে করেন বাংলাদেশও যথেষ্ট আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে।
হাতুরু বলেন, ‘আমরাও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলি। বিভিন্নভাবেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা যায়। ফিল্ডিং সেটের মাধ্যমেও হতে পারে। শুধু হার্ড হিটিংটাই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট নয়। আমরাও সেটাই বের করে আনার চেষ্টা করছি।’
ভারতের বিপক্ষে সিরিজটা প্রায় একা হাতেই জিতিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। নিজের ব্যাটিং স্বত্বাটাকেও দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলছেন তিনি। মিরাজ মন কেড়েছে হাতুরুরও। তিনি মনে করেন বাংলাদেশের মূল ক্রিকেটার হতে চলেছেন এই অলরাউন্ডার।
মিরাজের উঠে আসা নিয়ে হাতুরু বলছিলেন, ‘আমার সব সময় মনে হয়েছে তাঁর মধ্যে সেরা হবার ক্ষুধাটা আছে। তাঁর অভিষেক ম্যাচেও আমাদে বারবার বিভিন্ন প্রশ্ন করছিল। তখনই আমার মনে হয়েছিল সে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে।’
হাতুরু আসায় একাদশ পাল্টে যাবে এমন ভাবনা ছিল অনেকেরই। তবে সেসব আভাষ একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন এই কোচ। জানিয়েছেন প্রথম দুই ম্যাচে তেমন কোন পরিবর্তনই তিনি করতে চান না।
হেড কোচ হিসেবে এসেই বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন হাতুরু। সিনিয়র ক্রিকেটারদের আর বেশিদিন পাওয়া যাবে না সেটা তিনি বোঝেন। ফলে বাংলাদেশের জন্য নতুন নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন এই কোচ।
সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে হাতুরু বলেন, ‘এটা তো আমার দায়িত্ব নতুন লিডার তৈরি করা। সিনিয়র ক্রিকেটাররা আরো দশ বছর খেলবে না। আমাদের নতুন ক্রিকেটার বের করে আনতে হবে যারা বাংলাদেশকে লিড দিবে। দলে এমন ক্রিকেটার আছেও। যেমন আমি সেদিন শান্ত, মিরাজ, লিটনদের সাথে কথা বলেছি। তাসকিনও আছে।’
ফলে নিজের পছন্দের ভবিষ্যত ক্রিকেটারদের ইতোমধ্যেই পেয়ে গিয়েছেন এই কোচ। এখন মিরাজ, লিটনদের নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইবেন হাতুরু।