মরুভূমির বালুতে এক ধরণের সাপ গা ঢাকা দিয়ে থাকে। সবাই তাঁকে র্যাটল সাপ নামেই চেনে। খালি চোখে দেখা যায় না তবে একটু সতর্ক হয়েই চলতে হয়। না তেমন গুরুতর বিষাক্ত কিছু নয়। তবুও বিষিয়ে তোলা এক খবরের উত্থান হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপনের এক বক্তব্যে। তিনি বলেছিলেন দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মাঝে রয়েছে দ্বন্দ্ব।
সেই দু’জন সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবাল। বেশ গাঢ় এক বন্ধুত্বের খবরই জানা সবার। তবুও মরুভূমির সেই সাপের মতই একটা দ্বন্দ্ব আছে, এমন খবর চাওড় হয়েছিল সব দিকে। আর সেই সাপটাকে দৃশ্যপটে হাজির করেন নাজমুল হোসেন পাপন। তবে পাপনের বের করে নিয়ে আসা সাপের দংশনে কারো প্রাণ নাশের শঙ্কা না থাকলেও দলের আবহাওয়ার উপর একটা প্রভাব পড়ার কথা।
সবাই অন্তত সেটাই ধরে নিয়েছিল। কিন্তু না, গেল প্রায় বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি চলছে। শেষ অবধি খেলা গড়িয়েছে মাঠে। কোথাও কিন্তু এক ছটাকও মনে হয়নি তাদের মধ্যে রেষারেষিটা বেশ প্রবল। খানিকটা অভিমান হয়ত থাকতে পারে। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে সেই অভিমানকে দূরে রেখেই খেলতে নেমেছিলেন সাকিব ও তামিম।
আতশ কাঁচ দিয়েও যেন মনোমালিন্য খুঁজে পাওয়া দায়। প্রথমত বাংলাদেশ দল সম্মুখীন একটা ব্যাটিং বিপর্যয়ের। সেখানেও দুইজনের পুরনো বন্ধুত্ব মেনেই কেউ নিজেদের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। কাকতালীয় এক ঘটনার মঞ্চায়ন ঘটিয়ে, দুই সাবেক বন্ধু ফিরেছেন বোল্ড আউট হয়ে। তবে সেখানটায় অবশ্য কোন সমস্যা নেই, কথাটা বলা যাচ্ছে না।
এরপরই বাংলাদেশ দল বোলিংয়ে নামে। ২০৯ রানে স্বল্প পুঁজি। আস্থার জায়গা বলতে মিরপুরের উইকেট। সেখানেই স্পিন ভেল্কি। আর অধিনায়ক তামিম ভরসা রাখলেন সাকিবের উপর। প্রথম ওভারেই বল তুলে দিলেন তাঁর হাতে। ইংল্যান্ডের ইনিংসের প্রথম আঘাতটা হেনেছেনও সাকিব। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের বলে ক্যাচ তোলেন জেসন রয়।
সে ওভারে মিড অফ অঞ্চলে ফিল্ডিং করছিলেন অধিনায়ক। হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো বল, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে নিম্নগামী হয়। সেই বল খুঁজে নেয় তামিমের বিশ্বস্ত হাত। মনোমালিন্য থাকলে ক্যাচটা ছেড়ে দেওয়ার কথা না! নিন্দুকের অণুবীক্ষণ যন্ত্র তেমন কিছুই হয়ত খুঁজছিল। তবে দিন শেষে সাকিব, তামিম দু’জনই পেশাদার।
তাঁরা জানেন ব্যক্তিগত আক্রোশের কোন জায়গা নেই। লাল-সবুজ জার্সিকে ছাপিয়ে যাওয়ার মত কোন শক্তি যে নেই। তাইতো হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিমায় হাতে হাত মিলিয়ে হয়েছে শিকার উদযাপন। নিন্দুকেরা অবশ্য নিজেদের কাজ করা থামিয়ে দেবে না। তা তাঁরা চালিয়ে যাক। তবে না থামুক সাকিব-তামিমের ক্রিকেটীয় নৈপুণ্য।