সরকারী উদ্যোগে, বিদেশ থেকে সুটবুট পরা বিশেষজ্ঞ এসেছেন। ফলিত বিজ্ঞানে ডক্টরেট, আরো প্রচুর প্রচুর ডিগ্রী। তাঁর থেকে হাতে কলমে শেখার জন্য, নীলবাতি সরকারী গাড়িতে করে, কলকাতা থেকে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গ্রামে ঢুকে বিশেষজ্ঞ হ্যাঁ। খালিগায়ে লুঙ্গি পরে, নিরক্ষর চাষী চাষ করছেন। চাষী বেশ খুশী। চাষীর কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু সরকারী বাবুরা খুব করে চাইছেন, চাষী বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে কিছু শিখুন।
হাজার হোক বিদেশ থেকে এসেছেন। স্যুট পরেন। বিশেষজ্ঞ নিজেও তাই চান। জ্ঞান ছড়িয়ে না দিতে পারলে সেই জ্ঞানের কী দাম? তাই গ্রামে ঢুকে থেকেই, খালি-গা চাষীকে তিনি প্রচুর প্রশ্ন করে চলেছেন। মূল সমস্যায় ঢুকতে হবে। তবে না সমাধান। আচ্ছা, আপনি গাছে প্রতিদিন, মেপে মেপে একশো পঁচাত্তর গ্রাম জল দেন? উত্তর – আজ্ঞে, না স্যার। সকালে পৌনে দুই গ্রাম লাল রঙের সার আর বিকেলে সাড়ে তিন গ্রাম নীল রঙের সার দেন? উত্তর – আজ্ঞে, না স্যার।
এরকম ঘন্টাখানেক চলার পরে, বিশেষজ্ঞ দৃশ্যত বিরক্ত হয়ে পরলেন। তিনি প্রচণ্ড বকাবকি করেই চলেছেন। যাই জিজ্ঞেস করেন, চাষীর সেই এক উত্তর – না স্যার, না। বিশেষজ্ঞ রেগে যাচ্ছেন। কলকাতার সরকারি বাবুদের মাথা হেঁট। এতটা পিছিয়ে আছে গ্রাম বাংলার চাষ-বাস। ভাবা যায়? কলকাতায় বসে টের’ই পাওয়া যায় না। এসব বিন্দুমাত্র পড়াশোনা না করার ফল। ফিল্ড ট্রিপ করা হল বলেই না বোঝা গেল।
বিশেষজ্ঞ শেষমেশ আর বিরক্তি সামলাতে না পেরে, বলেই ফেললেন, দেখুন, আমি খুব হতাশ। আপনার এই গাছে এই মৌসুমে এক কেজি আমড়া ফললেও আমি খুব অবাক হব। হঠাৎ চাষীর মধ্যে প্রাণসঞ্চার হল। গা ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে, লুঙ্গিটা আরেকবার কষে বেঁধে নিয়ে, চাষী একটা লাল সুতোর বিড়ি ধরালেন। আরাম করে একবুক টেনে ধোঁয়া ছাড়লেন। তারপর খুব শান্তভাবে বিশেষজ্ঞের দিকে তাকিয়ে, এই কথোপকথনে বস্তুত প্রথমবার, একটি সম্পূর্ণ বাক্য বললেন – স্যার, এক কেজি আমড়া ফললে, আমিও খুব অবাক হব।
টকটকে ফর্সা বিশেষজ্ঞের মুখ অপমানে লাল। প্রায় লাফাচ্ছেন, মুখ দিয়ে কশ গড়াবে এবার। ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, আপনার লজ্জা করে না? চাষবাস নিয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, আধুনিক সার নিয়ে কোন খবর রাখেন না, এদিকে মুখে মুখে জবাব দিচ্ছেন? বকা খেয়েও চাষীর মধ্যে কোন বিকার দেখা গেল না। নিশ্চিন্তে গরুর শিঙে হাত বোলাতে বোলাতে চাষী বললেন – ছ্যার, এটা তো শ্যাওড়া গাছ। এতে এক কিলো ক্যানো, একটা আমড়া হলেও আমি খুব অবাক হব।
ধারাভাষ্যকার পাশাপাশি এই ছবি দুটি দেখিয়ে বারবার বোঝাতে চাইছিলেন – বাম দিকের ব্যাটার ভুল করছেন এবং ডান দিকের ব্যাটার ঠিক করেছেন। স্পিন খেলার সূক্ষ্ম টেকনিক আলোচনা করছিলেন তাঁরা। আমি যা বুঝলাম তাঁদের কথা থেকে।
- মার্নাস লাবুশেন অনেকটা পা বাড়িয়ে খেলছেন। অর্থাৎ স্পিন হবার আগেই খেলে ফেলছেন। খাজা একটু দেরিতে খেলছেন।
- উসমান স্ট্রাইড কম তাই শেষ মুহূর্তে পেছনের পায়ে এসে খেলার অপশন খোলা থাকছে। লাবুশেন এতটাই স্ট্রেচ করে ফেলছেন যে কমিটেড হয়ে পরছেন, আর কোন কারেকশনের জায়গা থাকছে না।
আচ্ছা, দুজন ব্যাটার আউট হলেন কীভাবে?
লাবুশেন পা বাড়ানো বন্ধ করে, পেছনের পায়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে, হঠাৎ নিচু হয়ে যাওয়া বলে বোল্ড হলেন। পা বাড়িয়ে বলের পিচ বদি গেলে হয়তো বেঁচে যেতেন। আর অন্যদিকে, খাজা তাঁর ওই অতিরিক্ত অপশনের ফলে দুম করে একটা সুইপ মেরে বসলেন যেটা খাজাই মারতে পারতেন, লাবুশেন পারতেন না। বল আচমকা উঠে ডিপে ক্যাচ হয়ে গেল।
ক্রিকেট হাতে গোনা কয়েকটি খেলার মধ্যে একটি যাতে ব্যাটারের টেম্পারামেন্টের পরীক্ষা হয়। সেটা কোন বিশেষজ্ঞের ম্যানুয়ালে লেখা থাকে না।