একটা সময় ইউরোপ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। তাঁর নামে রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়ে যেত প্রতিপক্ষ শিবিরে। বিপরীত দলের ইউরোপ মাতিয়ে বেড়ানো ডিফেন্ডার থেকে শুরু করে গোলরক্ষক সবাই ততষ্ঠ থাকতেন তাঁকে ঘিরে। তবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সে দিন হয়েছে গত। ইউরোপের পাট তিনি চুকিয়ে ফেলেছেন। পারি জমিয়েছেন সৌদি আরবে।
সে যাত্রাও অবশ্য কম আলোড়ন সৃষ্টি করেনি। জলঘোলার চূড়ান্ত ফলাফলে সৌদি ক্লাব আল নাসেরের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সবাই হয়ত ভেবে কোন কূল কিনারা পেল না। ঠিক কি কারণে রোনালদো চলে এলেন সৌদির মত অপেক্ষাকৃত কম আলোকিত ঘরোয়া লিগে! একটু চোখ বুলিয়ে দেখলেই হিসেবটা স্পষ্ট। রোনালদোর সৌদি গমনের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ অর্থ।
পাঁচটি ব্যালন ডি’অর, পাঁচটি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন রোনালদো। ইউরোপের বড় বড় ক্লাবের সাথে জড়িয়ে রয়েছে তাঁর নাম। স্পোর্টিং লিসবন থেকে যাত্রা শুরু, এরপর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তির খেতাব তিনি অর্জন করেছেন। এরপর ইতালির ক্লাব জুভেন্টাসেও দারুণ সময় পার করেছেন তিনি।
ক্লাব পর্যায়ের দুরন্ত এই খেলোয়াড়কে তাই দলে ভেড়াতে কার্পণ্য করেনি সৌদির ক্লাব আল নাসের। বার্ষিক ২০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে তাঁকে দলে নিয়েছে ক্লাবটি। একটি বারও কি মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, প্রতি মিনিটে ঠিক কতটা টাকা কামাই করেন ক্রিশ্চিয়ানো? হয়ত জেগেছে। তবে সে অংকটা বিস্ময়কর। অবশ্য পর্তুগালের হয়ে আন্তর্জাতিক টূর্নামেন্ট গুলোতে বিস্ময় ছড়ানো রোনালদোর বাকি সবকিছুই হবে বিমোহিত করবার মত।
তাঁর বেতনাদির ক্ষেত্রেও তাই। বয়সটা বেশ হয়েছে। এখন আর আগের মত সেই ধার নেই। তবুও রোনালদোর জন্যে প্রতি মাসের আল নাসের খরচ করছে ১৬.৬ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচের সুফলটাও ভোগ করতে শুরু করেছে আল নাসের। নয় বার সৌদি প্রো লিগ জেতা ক্লাবটির হয়ে আলো ছড়াতে শুরু করেছেন। ক্লাবটির হয়ে এখন অবধি খেলা ছয় ম্যাচে আট গোল করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
তাছাড়া সতীর্থদের দুইটি গোলেও রেখেছেন অবদান। রোনালদোর এই যে আর্থিক উপার্জন, এটাকে যদি আরও একটু ভেঙ্গে দেখা যায় তবে খানিকটা বিষাদ ভর করতে পারে এই বাংলার মানুষদের মনে। রোনালদো প্রতি মিনিটে ৩৮০ ডলার উপার্জন করেন। বর্তমানে বাংলা টাকায় যা দাঁড়ায়, ৪০৬৭০ টাকা।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির দিনে এই দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীরও মাস শেষে এত অর্থের সাথে মোলাকাত হয় না। ক্যারিয়ারের একেবারে ক্রান্তিলগ্নেও এত বিপুল অর্থের হাতছানিকে উপেক্ষা করতে পারেননি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তাইতো তিনি ইউরোপ ছাপিয়ে চলে এসেছেন সৌদির মরুভূমিতে।