সাকিব নৈপুন্যে হোয়াইট ওয়াশ এড়ালো বাংলাদেশ

নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশ শেষবার কোনো ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছিল সেই ২০১৪ সালে। নয় বছর আগে হওয়া সেই সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজের সবকটি ম্যাচই হেরেছিল বাংলাদেশ। বহুবছর বাদে আবারো সেই তিক্ত স্মৃতির পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছিল এবারের ইংল্যান্ড সিরিজে।

তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ হেরেই সিরিজ খুইয়েছে টাইগাররা। তাই হোয়াইট ওয়াশের শঙ্কা জেগেছিল তীব্রভাবে। তবে দিনশেষে সেটি আর হয়নি। সাগরিকায় সিরিজের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে এ দিন টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি বাংলাদেশের। শুরুতেই লিটনের উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও  শূন্যরানে ফেরেন এ ওপেনার। লিটনের পথ ধরে অধিনায়ক তামিমও আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান দ্রুতই।

১৭ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান শান্ত আর মুশফিক। দুজনে রয়েশয়ে ব্যাটিং করলেও সাময়িক বিপদ থেকে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের পরে এ ম্যাচেও ফিফটি তুলে নেন শান্ত। তবে রানআউটে কাঁটা পড়ে ফিফটিকে আর বড়ো ইনিংসে রূপ দিতে পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত ৫৩ রানে বিদায় নিতে হয় তাঁকে।

শান্ত’র পরে ব্যক্তিগত অর্ধশতকের দেখা পান মুশফিকও। অনেক দিন ধরে রানখরায় থাকা মুশফিক খেলেন ৭০ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। তবে আদিল রশিদের বল বুঝতে না পেরে ধরা দিয়েছেন সেই সুইপ শটেই। বলের লাইন মিস করে বোল্ড আউট হয়ে ফিরে যান তিনি।

মুশফিক ফিরে যাওয়ার পরে দলকে একা টেনে নিয়ে যান সাকিব আল হাসান। আগের ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও পেয়েছেন ফিফটি। তবে উইকেট কেউই তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি। রিয়াদ, আফিফ- কেউই উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তবে সাকিবের ৭৫ রানের ইনিংসে ভর করে ঠিক লড়াই করার মতো একটা পুঁজি পায় বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৫০ ওভারের ৭ বল বাকি থাকতে ২৪৬ রানে অলআউট হয় টাইগাররা।

২৪৭ রানের লক্ষ্যে শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ভঙ্গিতে খেলতে শুরু করেন দুই ইংলিশ ওপেনার ফিলিপ সল্ট আর জেসন রয়। দুজনে মিলে দ্রুতই স্কোরবোর্ডে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়েন। তবে এরপরই ইংলিশদের ইনিংসে প্রথম আঘাতটা আসে। সাকিবের বলে উঠিয়ে খেলতে গিয়ে রিয়াদের তালুবন্দী হন সল্ট। সল্টের পরে উইকেটে এসে ডেভিড মালানও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ফেরেন শূন্য রানে। আর এরপরের ম্যাচের মোমেন্টার চলে যায় বাংলাদেশের দিকে।

সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জেসন রয়। অবশ্য ইংল্যান্ডের ইনিংসে তৃতীয় উইকেট পতনের পর জেমস ভিন্সের সাথে ৪৯ রানের একটা জুটি গড়েছিলেন স্যাম কারেন। তবে মিরাজের বলে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কারেন। এরপর দারুণ খেলতে থাকা ভিন্সও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। সাকিবের দুর্দান্ত টার্নিং বলে পরাস্ত হন তিনি।

এরপরের গল্পটা শুধুই বাংলাদেশের। যার সিংহভাগ কৃতিত্ব আবার সাকিবের। ব্যাট হাতে ৭৫ রানের ইনিংস খেলার পর কবজি ঘুরিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। একই সাথে প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে গড়েছেন ওয়ানডেতে ৩০০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি।

ইংলিশ অধিনায়ক জশ বাটলার অবশ্য একা হাতে ম্যাচ ঘুরিয়ে নেওয়ার একটা চেষ্টা করেছিলেন। তবে তাঁকে থামিয়ে দেন তাইজুল ইসলাম। বাটলারের বিদায়ের পরই ম্যাচ এক প্রকার ঘুরে যায় বাংলাদেশের দিকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬ রানে অলআউট হয় ইংলিশরা।

অবশেষে জয় এসেছে, তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় এখন পর্যন্ত অধরাই থাকলো। তারপরও সিরিজে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ অন্তত এ ম্যাচ জয়ে কিছুটা তৃপ্তি খুঁজে নিতেই পারে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link