পাতা গুলো হলুদ হয়ে আসে প্রথমে। এরপর শুকিয়ে একেবারে কাগজের মত হয়ে যাওয়া পাতা গুলো যেন বেঁচে থাকার সব রশদ হারিয়ে ফেলে। তখন কেবলই ঝড়ে যাওয়ার অপেক্ষা। একটা সময় দাঁড়িয়ে থাকা শুধু শুকনো কিছু ডাল-পালা। যে ডালে সবুজ নেই, ফুল নেই, পাখি নেই, ছায়াও নেই। তবুও গাছটা বেঁচে থাকে শুধুই নিজের জন্য, সে জানে আসছে বসন্তে সে আবার রঙিন হয়ে উঠবে, উঠতেই হবে।
ঝড়ে যাওয়ার জন্য তাঁর জন্ম হয়নি। কারণ শেকড়টা ছিল গভীরে, অনেক শক্ত, দৃঢ়। যেটা কেউ দেখতে পায় না, কেউ বুঝতে চায় না, একান্ত নিজের সেই রশদটাই তাঁকে আবার বাঁচিয়ে তোলে। মানুষের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। একটা সময় আসে যখন পুরো দুনিয়া ভাববে আপনি ফুরিয়ে গিয়েছেন, আপনাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না তখনই মানুষ ফিরে আসার গল্প লেখে।
কিছু কিছু মানুষ থাকেন যারা পৃথিবীর এই নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত দেখেন। মানসিকভাবে যারা চলে যান লাইফ সাপোর্টে কিংবা কোমায়। মনে হয় ফিরে আসার সব পথই বন্ধ হয়ে এসেছে। হাল ছেড়ে দেয়াটাই বুঝি নিয়তি। পরের মুহূর্তেই আবার মনে হয়, ঝড়ে যাওয়ার জন্য তো জন্ম হয়নি। জন্ম হয়েছে রঙিন হয়ে ওঠার জন্য, পৃথিবীর বুকে দাগ রেখে যাবার জন্য।
এই মানুষগুলোরই একজন নাজমুল হোসেন শান্ত। ক্রিকেট খেলেন, খেলেছেন একটা দেশের হয়েও। অথচ সেই খেলার কারণেই দেখেছেন নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত রূপ। তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা, শুরু থেকেই। তবে ফুল হয়ে উঠতে তিনি দেরি করেছেন। দিনের পর দিন ব্যর্থ হয়েছেন। তবুও বাংলাদেশ দল শান্তকে ধরে রাখতে চেয়েছে। হয়তো কেউ কেউ তাঁর ভিতরটা দেখতে পেরেছিল।
শান্ত কী করতে পারেন, সেটা নতুন করে বলা শব্দের অপচয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে, জাতীয় দলের নেটে অসংখ্যবার, অসংখ্য কোচ তাঁকে দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছে। দেশের ক্রিকেট বোদ্ধারা মানেন শান্তর টেকনিক, স্কীল বিশ্ব সেরাদের মত। ব্যাট হাতে ক্রিকেট দুনিয়ায় রাজত্ব করার মত সবকিছু তাঁর মাঝে আছে।
তবে কথা আর কাজের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনভাবেই মিলছিল না সাফল্য। রান যেন এক অধরা রহস্য। নিখুঁত টেকনিকের শান্ততে যেন খুতের সীমা নেই। শান্ত তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখা গুটিকয়েক লোককে দিয়ে গিয়েছেন কেবলই হতাশা।
তাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছে কেবলই ঘৃণার বৃত্ত। সেই বৃত্ত থেকে বের হওয়ার কোন রাস্তাই তাঁর জানা নেই। একটা দেশের ক্রিকেট সর্মথক গোষ্ঠী কতটা নিচে নামতে পারেন সেটা সবচেয়ে ভালো করে দেখেছেন তিনি। তাইতো নিজের ফিরে আসার দিনে সবাইকে জানালেন সালাম। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা দেখা শান্ত গাইতে চাইলেন শান্তির গান।
অনেকের কাছেই এই শান্ত নতুন। তবে যারা কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁর ব্যাটিং দেখার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে তাঁদের কাছে এসব যেন কিছুই না। সেই কোচরা, সেই ক্রিকেটবোদ্ধারা জানেন শান্ত হাঁটবেন আরো অনেকদূর। শান্ত হয়ে উঠবেন বিশ্বসেরাদের একজন। শান্ত গাইবেন কেবলই শান্তির গান।
শান্ত ফিরে এসেছে বললে ভুল হবে। কেননা শান্ত যখন পুরোপুরি ফিরে আসবেন তখন আরো বড় কিছু হবে। তবে তাঁর ফিরে আসার যাত্রাটা শুরু হয়েছে। এত বছর ধরে তাঁকে ব্যাক করে যাওয়া মানুষগুলো জানে এই ছেলে ফুল ফোটাবেই।