শেষ দুই ওভারেও করতে হত ১৩ রান। মিরপুরের স্টেডিয়াম ভরা দর্শকের চাপটা তখন নাজমুল হোসেন শান্ত। কেননা তাঁকে সঙ্গ দেয়ার জন্য আর কোন স্বীকৃত ব্যাটার নেই। ছয় উইকেট হারানো বাংলাদেশের হয়ে তখন ব্যাট করতে নেমেছেন তাসকিন আহমেদ। শান্ত, নিজেকে শান্তই রাখলেন। যেমনটা তিনি পুরো ইনিংস জুড়ে রেখেছেন।
মাত্র ১১৮ রানের টার্গেট। তবে মিরপুরের উইকেট সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তাঁরা এই রানটাকে ছোট করে দেখবে না কখনোই। এই টার্গেট নিয়েও এখানে ম্যাচ জেতাটা অসম্ভব কিছু না। বিশেষ করে পরে ব্যাট করা বাংলাদেশের জন্য উইকেট যেন আরো খানিকটা কঠিন হয়ে পড়েছিল।
প্রথম ইনিংসের শেষের দিক থেকেই উইকেটে স্পিন ধরছিল। ফলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের হাতছানি যেমন ছিল, তেমনি আশঙ্কাও ছিল যথেষ্টই। তবে ভাগ্যিস বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে একজন শান্ত ছিলেন। যে শান্ত নিজেকে চেনাচ্ছেন নতুন করে, হয়ে উঠছেন নতুন দিনের তারকা।
ব্যাট হাতে আজও রান পাননি লিটন দাস। আরেক ওপেনার রনি তালুকদারও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ফলে আগের ম্যাচের মত আজ আর ফ্লায়িং স্টার্ট পায়নি বাংলাদেশ। বরং এই ম্যাচ জেতাটাও যে কতটা কঠিন হবে সেই আভাসই পাওয়া যাচ্ছিল শুরু থেকে।
দুই ওপেনার ফিরে গেলেও সেখান থেকে বাংলাদেশকে একটু একটু করে টেনে তোলার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। এই দুজনের জুটিটা বেশ জমে উঠেছে এবারের বিপিএল থেকেই। সেটা এখন তাঁরা টেনে আনছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। লো স্কোরিং ম্যাচে তাঁদের ২৯ রানের জুটিও বাংলাদেশকে পায়ের নিচে মাটি দিয়েছে।
তবে তখনো অনেকটা পথ বাকি। এই উইকেটে প্রতিটা রান করতে সংগ্রাম করতে হচ্ছিল। শান্ত সেই লড়াইটা করে যাচ্ছিলেন এক প্রান্ত থেকে। কখনো পাশে পেয়েছেন হৃদয়কে, কখনো আবারা সঙ্গী হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
বল হাতে চার উইকেট নেয়া মিরাজকে আজ ব্যাটিং অর্ডারেও প্রমোশন দিয়েছিলেন অধিনায়ক। পাঁচে ব্যাট করতে নেমে খেলেছেন ১৬ বলের ২০ রানের ইনিংস। শান্তর সাথে তাঁর জুটিটাই ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। সেই জুটি থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পায় বাংলাদেশ।
জয়টা তখন খুব কাছেই মনে হচ্ছিল। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে গেলেন শান্ত। তবে বাকিরা হঠাতই হোঁচট খেলেন। পরপর আউট হয়ে গেলেন মিরাজ, সাকিব ও আফিফ। আবার যেন একটা করুণ সুর বেজে উঠলো। আবারো কী তবে কাছে এসেও না পাওয়ার আক্ষেপ?
আবারো কী লেখা হবে কোন হৃদয় ভেঙে যাওয়া গল্প? না, সেসবের কোন অবকাশই দিলেন না বাংলাদেশের নতুন দিনের নায়ক। শেষ দুই ওভারে পুরো দায়িত্বটা নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন। উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ সামলে তিনি নোঙর ফেললেন ঘাটে। ৪৭ বলে খেললেন ৪৬ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস।
উনিশতম ওভারে ক্রিস জর্ডানের প্রথম বলটাতেই চার। আর তাতেই যেন মিরপুরের গ্যালারি ভর্তি দর্শক প্রাণ ফিরে পেল। গ্যালারি থেকে ভেসে আসছে শান্ত নামের জয়ধ্বনি। পরের বলে আবার দুই রান নিয়ে নিজের কাছেই স্ট্রাইকটা রাখলেন।
তখন জয়টা একেবারে হাতের নাগালে। তাইতো ভরসা করেই স্ট্রাইকটা দিলেন তাসকিনকে। তাসকিন যেন আরো আগ্রাসী। তাঁর বোধহয় শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচটা নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। জর্ডানকে টানা দুই চার মেরে নিশ্চিত করলেন দলের জয়।
তাসকিন শেষ চারটা মারার পর শান্তর সে কী উল্লাস। তাসকিনও জড়িয়ে ধরলেন জয়ের আসল নায়ক শান্তকে। পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে তখন বাঘের গর্জন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারানোর উল্লাস তখন ঝেঁকে বসেছে শহর জুড়ে। একমাত্র শান্ত জানেন প্রতিটা রানের মূল্য। তিনিই জানেন এই লাফটা দেয়ার জন্য পেছাতে হয়েছিল কতগুলো পা।