পারফর্মিং আর্টের শিল্পীদের বোধহয় এটাই নিয়তি। পারফর্ম করো তাহলে তুমি রাজা আর কিছুদিন পারফর্ম করতে না পারলেই চারদিক থেকে আসতে থাকে সমালোচনার তীর। প্রজন্মের সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলির ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি।
ক্যারিয়ার জুড়ে ফর্মের তুঙ্গে থাকা বিরাট দেখেছেন মুদ্রার উল্টো পিঠটাও। ১২০৫ দিন বিরতির টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে বিরাট জানালেন নিজের সাথে লড়াইয়ের সেই কঠিন দিন গুলোর কথা। টেস্ট সেঞ্চুরিটা ২৭ এ আটকে ছিল ১২০৫ টা দিন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই খড়া কাটিয়ে টেস্টে নিজের ২৮ তম আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৭৫ তম সেঞ্চুরিটা করে ফেললেন বিরাট। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে পারফর্ম করে কোহলি নিজের ওপর প্রত্যাশার চাপ এতটাই বাড়িয়েছেন যে মাঝারি মানের ইনিংস গুলোও কোহলির জন্য ব্যর্থতা বলে গণ্য হতো।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে কথোপকথন চলাকালে কোহলি জানান, এই প্রত্যাশার চাপ প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল তাকে। কোহলি বলেন, ‘আমি এমন একজন মানুষ যে কখনোই ৪০-৪৫ রানের ইনিংসগুলোতে খুশি থাকতো না। দলের জন্য প্রতিনিয়ত রান করে যেতে পারাটা আমার জন্য গর্বের ছিল। তাই তিন অঙ্কের ফিগারে পৌঁছানোর জন্য যে তাড়া সেটা আমার মধ্যে বেড়ে উঠছিল।’
মানসিক ভাবেই নিজের সাথে লড়াইটা অনেক কঠিন ছিল কোহলির জন্য। কোহলি বলেন, ‘যখন আমি ৪০ রানে ব্যাটিং করতাম তখন আমার মনে হতো আমি এখান থেকে ১৫০ রানও করতে পারব। এই জিনিসটা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল।’
নিজের চাইতে দলের জন্য কিছু করতে না পারাটাই যন্ত্রণা হিসেবে কাজ করতো বলে জানান কোহলি, ‘আমি সব সময় গর্ব করতাম যে যখনই দলের আমাকে দরকার হতো তখনই কঠিন পরিস্থিতিতে আমি রান করে গেছি। এই জিনিসটা যে আমি করতে পারছি না সেটাই আমাকে অনেক পীড়া দিত।’
দর্শক থেকে শুরু করে আশেপাশের প্রতিটা মানুষের প্রত্যাশার ভারটাই মূলত প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়েছে কোহলিকে। রাহুল দ্রাবিড়ের এক প্রশ্নের জবাবে কোহলি বলেন, ‘সত্যি করে বলতে এটি আসলেই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল যখন আমি হোটেল রুম থেকে বের হতাম, বাইরে যার সাথেই দেখা হতো,লিফটে যার সাথেই দেখা হতো, এমন কি বাস ড্রাইভার সহ সবাই আমাকে বলতো “আমাদের একটা সেঞ্চুরি চাই”।
শিষ্যের এমন ফিরে আসায় গর্বিত ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও। দ্রাবিড় কোচ হয়ে আসার পর থেকেই সেঞ্চুরি খড়ায় ভুগছিলেন বিরাট। তাই ড্রেসিংরুম থেকে শিষ্যের সেঞ্চুরি উপভোগ করতে পেরে দারুণ খুশি রাহুল।
রাহুল বলেন, ‘বিরাটের অনেক সেঞ্চুরিই আমি টিভিতে দেখেছি। গত ১৫-১৬ মাস আগে যখন আমি কোচ হয়ে এলাম তখন থেকেই আমি উন্মুখ হয়ে ছিলাম তাঁর টেস্ট সেঞ্চুরি দেখব বলে। ড্রেসিংরুম থেকে বিরাটের এমন সেঞ্চুরি করতে দেখাটা দারুণ কিছু।’