রাজ্যের চাপ নিয়ে তিনি শুরু করেছিলেন। তবে বাইশ গজে নামতেই যেন সব হাওয়া। কর্পূরের মত করে উবে গেল সকল স্নায়ুচাপ। নির্ভার হয়ে, দায়িত্ব নিয়ে তিনি খেলে গেলেন। তৌহিদ হৃদয় নিজের নামটি লিখিয়ে গেলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়। তৃতীয় বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে অভিষেকে তিনি করে গেলেন হাফ সেঞ্চুরি। তবে রেখে গেলেন একরাশ হতাশার গল্প।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন তৌহিদ হৃদয়। সেই সুবাদেই তিনি যেন এসে গেলেন জাতীয় দলের নির্বাচকদের সুনজরে। তবে লম্বা সময় ধরেই তিনি নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। ঘরোয়া লিগে প্রায় পঞ্চাশের ঘরে ছিল তাঁর গড়। এমন একজন ব্যাটারকে বাংলাদেশের ওয়ানডে ফরম্যাটের মিডল অর্ডারে ভীষণ প্রয়োজন। তাইতো টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে দলেও তিনি জায়গা পেলেন।
টি-টোয়েন্টি দলে তিনি চাপহীন থাকতে পেরেছিলেন। তবে ওয়ানডে দলে তিনি জায়গা পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জায়গায়। এমন কি একাদশেও। সেই চাপটাকে এক লহমায় তিনি কাটিয়ে নিলেন। তিনি যখন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমেছিলেন তখনও দলের পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর ছিল না।
টপ অর্ডার পুরোটাই তখন প্যাভিলিয়নে। সেই পরিস্থিতিতে সদ্যই অভিষেক হওয়া একজন খেলোয়াড় খানিকটা ভড়কে যাবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। তবে হৃদয় ছিলেন মুদ্রার অপর পিঠ। তিনি এলেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলেন। সাকিব আল হাসানকে সাথে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখলেন। বাইশ গজে তখন তাঁর সতীর্থ অভিজ্ঞতায় টইটুম্বুর সাকিব। সেই সাকিবকে সাথে নিয়েই কর্তৃত্ব নিয়ে খেলেছেন হৃদয়।
দারুণ সাবলীলভাবে তিনি দলের সে বিপর্যয় সামাল দিলেন। খুব বেশি ডট বল খেলেননি হৃদয়। যতটা সম্ভব সিঙ্গেল আর ডাবলস বের করার চেষ্টা করেছেন। বাজে বলগুলো মাঠ ছাড়া করেছেন। একেবারে নিখাদ মিডল অর্ডার ব্যাটারের দায়িত্বটাই পালন করেছেন হৃদয়। দলকে একটি মুহূর্তের জন্যও চাপে পড়তে দেননি। বরং চাপটা ছড়িয়ে দিয়েছেন আইরিশ বোলারদের মধ্যে।
সাকিবের সাথে তিনি ১৩৫ রানের জুটি গড়েন। সাকিব ৯৩ রানে বিদায় নেওয়ার পর মুশফিকুর রহিমকে সাথে নিয়ে আরও একটি কার্যকর জুটি গড়েন তৌহিদ হৃদয়। মুশফিকের সাথে ৮০ রানের জুটিতে অধিকাংশ রানই করেছিলেন মুশফিক। অন্যদিকে, হৃদয় ক্রমশ নিজের প্রথম সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
তবে শেষ দিকে তিনি নিজের ব্যক্তিগত অর্জনের চাইতেও প্রাধান্য দিয়ে বসেন দলীয় সংগ্রহকে। দলের রানটা দ্রুত বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে বোল্ড আউট হয়ে এক জলরাশি সমান হতাশায় ডুবে যান তিনি। অভিষেকে নাসির হোসেন ও ফরহাদ রেজাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন রানের বিচারে। তবে অনন্য এক রেকর্ডের মালিক তিনি হতে পারেননি। বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেকে সেঞ্চুরির করার আট রান দূরে থাকতেই থেমে যায় হৃদয়ের ইনিংস।
৮৫ বলে ৯২ রানের এই ইনিংসটি প্রমাণ করে দেয় যে হৃদয় পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন জাতীয় দলে। তিনি লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হতেই গায়ে চাপিয়েছেন লাল-সবুজ জার্সি। তাছাড়া বহু বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে চলা একটা মিথ ভেঙ্গে দিয়েছেন হৃদয়। টপাটপ উইকেট হারিয়ে ফেললে ইনিংস বিল্ড আপ করতে রাজ্যের বল খরচ করবার প্রয়োজন নেই। অবলীলা ব্যাট ঘুরিয়ে, ফিল্ডারদের মাঝে থাকা ফাঁকা স্থান কাজে লাগিয়ে রান বাড়িয়ে নেওয়া যায়। তাতে যেমন দলের রান বাড়ে, বিপর্যয়ও কাটে।
এখন দেখবার পালা এই লম্বা দৌড়ের ঘোড়াকে ঠিকঠাক পরিচর্যা বা সময় দেওয়া হয় কি না। তবে তৌহিদ হৃদয়ের মত পরিণত এই ক্রিকেটারের পেছনে নিঃসন্দেহে বাজি ধরতে চাইবেন যে কেউ। হৃদয়ের হাস্যজ্জ্বল ব্যাটে ভরে উঠবে বাংলার ক্রিকেট প্রেমীদের হৃদয়, সেটাই এখন প্রত্যাশা।