স্তম্ভিত পাকিস্তানের পেছনের কারণ

গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল পাকিস্তান। আর সেই দলটাকেই নাকি নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে মূল পর্বে একটি ম্যাচও জিততে না পারা দল। পেছনের রসহ্য কি! এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ত হতে হচ্ছে পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্টকে। কারণটা একটু খতিয়ে দেখা তো প্রয়োজন।

প্রথমত খালি চোখে দলের আস্থাভাজন তিন ব্যাটার নেই দলে। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ফখর জামানকে ছাড়াই আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নেমেছে দলটি। এই তিন ক্রিকেটার পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের দূর্গ। এদেরকে ছাড়া পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ বেশ নড়বড়ে। তাছাড়া এই তিন ব্যাটারের অনুপস্থিতিতে বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় সুযোগ পেয়েছেন দলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের খাপ খাইয়ে নেওয়ার একটা বিষয় তো থাকেই।

তাইতো আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ধুকতে হচ্ছে পাকিস্তানি ব্যাটারদের। যদিও এই কারণ দেখিয়ে আফগান বোলারদের অবদানকে আড়াল করবার উপায় নেই। দু’টো ম্যাচেই দূর্দান্ত বোলিং করেছে আফগান বোলিং ইউনিট। আরব আমিরাতের উইকেটের পূর্ণ ব্যবহারটাই করেছে ফজল হক ফারুকী, রাশিদ খানরা।

তবে এতটাও দৃষ্টিকটু পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে কেন পাকিস্তান দলকে? এই সিরিজের আগেই তো গোটা দলের সবাই ছিল ব্যস্ত পাকিস্তান সুপার লিগ খেলতে। ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক সেই টি-টোয়েন্টি টূর্নামেন্টে দুরন্ত পারফরম করেছে পাকিস্তানি ব্যাটাররা। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই রান বন্যা হয়েছে রাওয়াল পিন্ডি কিংবা করাচির মাঠে। সেখানে তো ব্যাটাররা রান করেছেন। তবে কেন আরব আমিরাতের উইকেটে পারছেন না?

এমন তো নয় যে আর পাকিস্তানের আরব আমিরাতের কন্ডিশন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। একটা সময়ের পাকিস্তান ক্রিকেটের ঘরবাড়ি ছিল আরব আমিরাত। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্য অভিজ্ঞদের না থাকার খোড়াযুক্তি দেওয়াই যায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আসল ক্ষতিটা করেছে পাকিস্তান সুপার লিগ। একেবারে ফ্ল্যাট পিচে হয়েছে খেলা। যেখানে ব্যাটারদের খুব বেশি প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি।

তাঁদের ব্যাটে এসেছে বল, তাঁরা স্রেফ চালিয়েছে। আর তাতেই বল গিয়ে আছড়ে পড়েছে বাউন্ডারির বাইরে। সেখানেই একটা মিথ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় পাকিস্তানি ব্যাটারদের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অবশ্য উইকেটের বৈচিত্রতা থাকে। আর সে বৈচিত্রতাই ভরকে দিয়েছে পাকিস্তানের ব্যাটারদের। অন্যদিকে দলের ওপেনিংয়ে খানিকটা স্লথ গতিতে ব্যাট করলেও রিজওয়ান-বাবর জুটি ছিল ভরসা।

তাঁরা অধিকাংশ সময়ই ম্যাচ শেষ করে এসেছেন। অথবা একটা ভাল অবস্থানে দলকে নিয়ে গিয়েছেন। ধীরগতির রিজওয়ান আর বাবরকে তাই ছেটে ফেলার সুযোগও নেই পাকিস্তানের সামনে। কেননা পিএসলেও এই দুই ব্যাটারই ছিলেন রান সংগ্রহে সবার উপরে। তাঁদের অনুপস্থিতিতে পাকিস্তান ঠিক নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারেনি এখনও।

অন্যদিকে, দলের বোলিং ইউনিটের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হারিস রউফ ও শাহীন শাহ আফ্রিদিকেও রাখা হয়নি আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে। তাইতো আফগান বোলাররা পাকিস্তানকে স্বল্প রানে আটকে দিতে পারলেও পাকিস্তান পারেনি। তাদেরকে রীতিমত স্তম্ভিত করে দিয়ে আফগানিস্তান জিতে নিয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ।

সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে পাকিস্তানের হোয়াইট ওয়াশ হওয়ার। তেমনটা হয়ে গেলে খুব বেশি অবাক হওয়ার কোন কারণ থাকবে না। কেননা দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোতে বরাবরই আফগানিস্তান ভয়ের কারণ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি ক্রমশ সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেদের একটা শক্ত ঘাটি গড়ছে। বিশেষ হয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link