টেস্ট ক্রিকেটে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা প্রতিটি ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন। ক্রিকেটের কুলীন এই ফরম্যাট ক্রিকেটারদের সামর্থ্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে থাকে। লাল বলের ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করতে তাই প্রয়োজন সাধনা এবং কঠোর পরিশ্রমের। অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটারই ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করেও টেস্টে জাতীয় দলে সুযোগ পাননি।
অন্যদিকে, কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন যারা কিনা ভিন্ন দুই দেশের হয়ে টেস্টে মাঠে নেমেছেন। শুরুতে এক দেশের হয়ে খেলা শুরু করলেও পরবর্তীতে অন্য দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আসুন দেখে নেয়া যাক ২০১০ সালের পর থেকে দুই দেশের হয়ে টেস্টে মাঠে নামা তিন ক্রিকেটারকে।
- পিটার মুর (জিম্বাবুয়ে এবং আয়ারল্যান্ড)
জিম্বাবুয়ের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করা পিটার মুর বর্তমানে প্রতিনিধিত্ব করছেন আয়ারল্যান্ড জাতীয় দলের। ক্রিকেটপ্রেমী এক পরিবারে জন্ম নেয়া মুরের টেস্ট অভিষেক ২০১৬ সালে, বুলাওয়েতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে মাঠে নামেন তিনি। তাঁদের হয়ে আট টেস্টে কোনো সেঞ্চুরি না থাকলেও পাঁচ ফিফটিতে ৫৩৩ রান করেন এই তারকা।
এরপর পাঁচ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকলেও ২০২৩ সালে যেন পুনর্জন্ম হয় এই তারকার। মজার ব্যাপার জিম্বাবুয়ের হয়ে তাঁর শেষ টেস্ট এবং আয়ারল্যান্ডের হয়ে অভিষেকের টেস্টের প্রতিপক্ষ একই , বাংলাদেশ। এমনকি ভেন্যুটাও একই, শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ক্রিকেটের ইতিহাসে বিরল এক রেকর্ডই বটে।
- গ্যারি ব্যালান্স (ইংল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়ে)
জিম্বাবুয়েতে জন্ম নিলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করতে প্রথমে ইংল্যান্ডকেই বেছে নেন গ্যারি ব্যালান্স। কিন্তু খুব বেশিদিন থ্রি লায়ন্সদের হয়ে সুযোগ পাননি এই তারকা। শুরুতে আলো ছড়ালেও দ্রুতই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন ব্যালান্স। ইংল্যান্ডের হয়ে ২৩ টেস্টে চার সেঞ্চুরি এবং সাত হাফ সেঞ্চুরিতে ১৪৯৮ রান করেন এই তারকা।
এরপর দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে নিজের জন্মস্থান জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন ব্যালান্স। ছয় বছর টেস্টে ব্যালান্স ফিরেছেন রাজকীয়ভাবেই, বুলাওয়েতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেন অপরাজিত ১৩৭ রানের চমৎকার এক ইনিংস।
- বয়েড র্যানকিন (আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড)
আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে বয়েড র্যানকিনের নামটা স্মরণীয় হয়েই থাকবে। তাঁদের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম উইকেট শিকার করেছিলেন এই তারকা পেসার। অথচ আইরিশদের হয়ে সেই টেস্টে নামার আগে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলে ফেলেছিলেন র্যানকিন।
তবে র্যানকিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকটা আয়ারল্যান্ডের হয়েই। নিয়মিত ১৪০ কিমি গতিতে বল করতে পারার সুবাদে দ্রুতই সাড়া জাগান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। আইরিশদের হয়ে ৫৭ ওয়ানডেতে ৮০ উইকেট শিকার করেন তিনি। কিন্তু টেস্ট খেলার আশায় আয়ারল্যান্ড ছেড়ে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে নাম লেখান র্যানকিন। যদিও ইংল্যান্ডের হয়ে মাত্র একটি টেস্টেই মাঠে নামতে পেরেছিলেন তিনি।
তবে ২০১৮ সালে আয়ারল্যান্ড টেস্ট স্ট্যাটাস পাবার পর পুনরায় জন্মভূমির হয়ে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেন এই তারকা। আইরিশ ক্রিকেট বোর্ডও ফেরাননি, ৩৩ বছর বয়সী এই পেসারকে সাদরে গ্রহণ করেন জাতীয় দলে। এখনো পর্যন্ত দুই দেশের হয়ে তিন টেস্টে আট উইকেট শিকার করেছেন র্যানকিন।