রহমানুল্লাহ গুরবাজ, ইডেনে আফগান ঝড়ের রূপকার

ইডেন গার্ডেনসে তখন বৈরী আবহাওয়া। তবে কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরে সেই বৈরীতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল, যখন খবর আসলো- চোটের কারণে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা জেসন রয় গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ম্যাচটা খেলতে পারছেন না।

জেসন রয় বাদে, কলকাতার হয়ে এ আসরে বিদেশিদের মধ্যে এর আগে ওপেনিংয়ে ব্যাট করার অভিজ্ঞতা আছে রহমানুল্লাহ গুরবাজ আর লিটন দাসের। পারিবারিক কারণ দেখিয়ে দিন দুয়েক আগেই আইপিএল মঞ্চ ত্যাগ করেছেন লিটন। তাই কলকাতার হাতে অপশন ছিল শুধুই একটি— রহমানুল্লাহ গুরবাজ।

জেসন রয়ের আগে টুর্নামেন্টের শুরুতে কলকাতার প্রথম পছন্দ ছিল এই গুরবাজই। খুব যে খারাপ খেলেছেন, এমন নয়। বরং, দ্বিতীয় ম্যাচেই অর্ধশতক হাঁকিয়ে প্রথম আফগান ব্যাটার হিসেবে আইপিএলের মঞ্চে ফিফটি করার রেকর্ড গড়েছিলেন। কিন্তু ঐ ম্যাচের পরই ছন্দ হারিয়ে ফেলেন গুরবাজ।

গুরবাজের জায়গা কেঁড়ে নেন জেসন রয়। জেসন রয় যেভাবে খেলছিলেন তাতে আসরের বাকি অংশে গুরবাজের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল বেশ ক্ষীণ। কিন্তু জেসন রয়ের চোটে অপ্রত্যাশিত ভাবে সুযোগ পেয়ে যান গুরবাজ। আর সেই সুযোগটা লুফে নিয়েই রহমানুল্লাহ গুরবাজ দেখালেন সত্যিকারের আফগানি ঝড়।

বৃষ্টির কারণে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে কলকাতার এ দিনের ম্যাচটা কিছুটা বিলম্বেই শুরু হয়েছিল। বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় নারায়ণ জগদীশানের সাথে ইনিংস শুরু করেছিলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। আর ইনিংসের শুরু থেকেই গুজরাটের বোলারদের উপর আগ্রাসী ভূমিকায় রীতিমত ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়েছেন আফগান এ ব্যাটার।

শুরুর তিন ওভারে যদিও মাত্র দুটি বল খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। আর সেই দুই বলে তিন রান করা গুরবাজ পরবর্তীতে রীতিমত ছক্কাবৃষ্টিতে ভাসান গুজরাটের বোলারদের। শুরুটা করেন হার্দিক পান্ডিয়াকে দিয়ে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে পান্ডিয়া বল তুলে নিলে ঐ ওভারে দুটি ছক্কা হাঁকান গুরবাজ। এরপর মোহাম্মদ শামিকেও পরের ওভারে মারেন ছক্কা।

টানা দুই ওভারে তিন ছক্কা তুলে নেওয়া গুরবাজ পরের দৃশ্যপটটাও নিজের করে নেন। দারুণ গতিতে চলতে থাকা ইনিংসটাকে নিয়ে যান ব্যক্তিগত অর্ধশতকে। ফিফটি পূরণ করেন ২৭ বলে। ফিফটি পূরণে পর আরো আগ্রাসী গুরবাজ। যেন ইডেনের মাটিতে এ দিন সত্যিকারের এক আফগান শক্তি ভর করেছিল গুরবাজের উপরে। আর সেই আফগান শক্তিতেই রীতিমত পরাভূত হয়ে পড়ে গুজরাট টাইটান্সের বোলাররা।

ফিফটি পূরণের পর রহমানুল্লাহ গুরবাজ হেঁটেছিলেন সেঞ্চুরির পথেও। কিন্তু ব্যক্তিগত ৮১ রানে শেষ পর্যন্ত ধরা দেন এ আফগান ব্যাটার। ৩৯ বলে দুর্দান্ত এ ইনিংস খেলার পথে গুরবাজ ছক্কাই হাঁকিয়েছেন ৭ টা! আর চার মেরেছেন ৫ টা। অর্থাৎ বাউন্ডারিতেই ৬২ রান!

অবশ্য এমন বিধ্বংসী ইনিংস খেলার পরও শেষ ম্যাচ জিততে পারেনি গুরবাজের কলকাতা নাইট রাইডার্স। কলকাতার দেওয়া ১৮০ রানের লক্ষ্য গুজরাট পৌঁছে যায় ১২ বল হাতে রেখেই। তাতে গুরবাজের ৮১ রানের ইনিংসটা দিনশেষে কিছুটা ম্লানই হয়ে গিয়েছে। যদিও এই রহমানুল্লাহ গুরবাজের সৌজন্যেই এ দিন আইপিএলের মঞ্চ সাক্ষী হয় সত্যিকারের আফগানি দাপটের।

আইপিএল সাক্ষী হয়েছে রশিদ খানের স্পিন ভেলকি।  মোহাম্মদ নবীর ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সাথেও আইপিএলের যোগসূত্র রয়েছে। তবে রহমানুল্লাহ গুরবাজ দিয়েই এই প্রথম আইপিএল কোনো আফগান ব্যাটারের কাছ থেকে এমন ইনিংসের সাক্ষী হলো। কারণ এখন পর্যন্ত আফগান ব্যাটারদের কাছ থেকে যে দুটি আইপিএল ফিফটি এসেছে, সেই দুটির সাথেই জড়িয়ে একটি নাম—রহমানুল্লাহ গুরবাজ।

গুরবাজের এমন ইনিংসের পর অবশ্য মধুর সমস্যাতেই পড়তে যাচ্ছে কেকেআরের টিম ম্যানেজমেন্ট। জেসন রয় দলে ফিরলে একজনকে তো একাদশ থেকে বাদ দিতেই হবে। এখন সেই বাদ পড়া ক্রিকেটারটি কে হবেন? এমন একটা ইনিংসের পর সেটা সেই নামটি নিশ্চিতভাবেই রহমানুল্লাহ গুরবাজ হওয়ার কথা নয়।

এভাবেই বুঝি শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের জায়গাটা সংহত করতে হয়। নামে ভারে দামী ক্রিকেটারদের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ কিংবা পর্যাপ্ত সুযোগ, সবাই পায় না।

তবে সেই সীমিত সুযোগেই নিজেকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় থাকতে হয়। তবেই মিলে সাফল্য। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ৮১ রানের এ ইনিংস দিয়ে রহমানুল্লাহ গুরবাজ ঠিক এভাবেই নিজেকে একধাপ উপরে নিয়ে গেলেন।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link