ফখরের জাদুর কাঠির গল্প

দিক শূন্যহীন পথটা ধরে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে ভীষণ একাগ্রতা আর ধৈর্য্য চাই। একজন নাবিক জানেন ঠিক কতটা একাকীত্ব এসে ভর করে উত্তাল সমুদ্রের নির্ঘুম রাতগুলোতে। তবুও লড়াইটা চালিয়ে যান। একটুখানি মাটি খুঁজে পাওয়ার আশায়। নাবিক জানেন এই অন্ধকার রাতের ঠিক ওপাশটায় রয়েছে উজ্জ্বল আলো।

পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সেই নাবিক হয়েই যেন হাজির হয়েছেন ফখর জামান। অবশ্য তিনি তো খুব ভাল করেই জানেন ধৈর্য্য আর একাগ্রতার ফসল কতটা মধুর হয়। সেটা তার রপ্ত করাই। কেননা একটা সময় তিনিও তো নাবিক ছিলেন। জাহাজ নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সমুদ্রের অবারিত জলরাশিতে।

সেই ফখর জামান বিশালত্বেই বিশ্বাস করেন। তাইতো তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি অল্পতে। যদিও ক্যারিয়ারে নানা সময়ে তাকে নিয়ে হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। নিন্দাও ছুঁয়েছে তাকে বহুবার। তবুও মনোযোগটা রেখেছেন স্থির। অটল মানসিকতার ফলাফলটা তিনি পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজে।

ক্যারিয়ারে খুব বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি ফখরের। কেননা তাকে বিবেচনা করা হয়েছে সাদা বলের ক্রিকেটে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাকে নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বহুবার। তবে ওয়ানডে ফরম্যাটের ফখরকে নিয়ে নিন্দা করা দায়।

ধারাবাহিকতার প্রমাণ তিনি এই ফরম্যাটে রেখেছেন একেবারে শুরু থেকেই। এখন অবধি পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে তার গড় প্রায় ৫০! প্রসংশার দাবিদার তিনি। সেই প্রসংশার জলে ভেসে না গিয়ে নিশ্চয়ই তিনি কিছু করে দেখাতে বদ্ধপরিকর। ২০২৩ সালটা নিশ্চয়ই নিজের করে নিতে মুখিয়ে আছেন ফখর জামান। এই বছরের খেলা শেষ তিন ওয়ানডেতেই তিনি পেয়েছেন শতক!

বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেখানে শেষ করেছিলেন, ঠিক চার মাস বাদে আবার যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন। জানুয়ারিতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০১ রান করেছিলেন ফখর। তবুও সে ম্যাচ হেরেছিল পাকিস্তান।

তার তৃষ্ণা যেন বাড়িয়ে দিয়েছিল সেই ইনিংস। আবারও সেই একই প্রতিপক্ষ পেয়ে রীতিমত আনন্দে আত্মহারা ফখর জামান। রানের তৃষ্ণা তাকে বিশাল সব ইনিংস খেলতে উদ্বুদ্ধ করে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে করেন ১১৭ রান। রাওয়ালপিন্ডির সে ম্যাচ পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই জিতে নেয় পাকিস্তান।

রানক্ষুধা তবুও যেন কমবার নয় ফখরের। তিনি প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়েই নেমে পড়েন দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে। এদিন আরও একবার তিনি ধাবিত হন দুইশ রানের মাইলফলক ছুঁতে। তবে তিনি পারলেন না। এবার তিনি অপরাজিত থাকলেন ১৮০ রানে। ৩৩৭ রানের বিশাল টার্গেটটা দলের জন্যে মামুলি বানিয়ে ফেলেন তিনি।

ক্যারিয়ারে তৃতীয় বারের মত ডাবল সেঞ্চুরি হাত ছাড়া হয়ে গেল তার। আর আগে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিকেই ডাবল সেঞ্চুরিতে রুপান্তরিত করেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১০ রানে অপরাজিত থেকেছিলেন ফখর জামান।

এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলে গিয়েছিলেন খুব কাছে। ১৯৩ রানে সেদিন রান আউটে কাটা পড়েছিলেন। এরপর আবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র বিশ রান দূরে থেকে গেলেন। এই গুটিকতক আফসোস নিশ্চয়ই পীড়া দেয়  ফখর জামানকে। তবে তিনি জানেন সব দীর্ঘশ্বাস একদিন ফিরে আসবে বুকভরা অক্সিজেন নিয়ে।

সেই দিন হতে পারে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর। ফখরের এই ধারাবাহিক রান ফোয়ারা নিশ্চয়ই পাকিস্তানকে একটু একটু করে স্বপ্ন বুনতে উদ্বুদ্ধ করছে। কে জানে ফখর হয়ত পাকিস্তান ক্রিকেটকে রাঙিয়ে দিতে পারেন সোনালী রঙে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link