ভাল ফিল্ডিং করলেই মিলবে ‘গোল্ডেন স্ট্যাম্প’ পুরস্কার!

শেন ম্যাকডারমট ফিল্ডিং কোচ হয়ে আসার পর অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় আসন্ন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ফিল্ডারদের উন্নতির ধারাবাহিকতায় চোখ রাখছেন অস্ট্রেলিয়ান এ কোচ। 

শেন ম্যাকডরম্যাটের অধীনে দেশের ক্রিকেটারদের কতটা উন্নতি হয়েছে তার একটা ছাপ দেখা গিয়েছে ২০২৩ সালেই।  এখন পর্যন্ত এ বছরে  ছয়টি ওয়ানডে, ছয়টি টি-টোয়েন্টি এবং একটি টেস্ট মিলিয়ে মোট ১৩ টি ম্যাচপ ৫২টি ক্যাচ লুফে নিয়েছে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। এ সময়কাল ১২টি ক্যাচ মিস করলেও তন্মধ্যে তিনটি ছিল হাফচান্স।

সম্প্রতি গত এক বছরের যাত্রায় ফিল্ডারদের এমন উন্নতির নেপথ্যের গল্প জানিয়েছেন ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডরমেট। জনপ্রিয় ক্রিকেট গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও। 

তিনি বলেন, ‘ফিল্ডিংয়ে দারুণ আয়ত্ব আনতে ছেলেরা বাড়তি পরিশ্রম করছে। আমি ওদের নিয়ে আলাদা সেশন করছি। তবে আলাদা করে কোচিং স্টাফদের ধন্যবাদ জানাতেই হয়। হাতুরুসিংহে নিজেও ক্রিকেটারদের ফিল্ডিংয়ের উপর ভীষণ সিরিয়াস। আর সাকিবও বরাবরই ফিল্ডিংয়ের উন্নতিতে নজর দেন। এমন দারুণ বোঝাপড়ার কারণেই উন্নতি হচ্ছে। আশা করছি, এর ধারাবাহিকতা থাকবে। আর ভারত, ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষে সেরা ফিল্ডারদের জন্য থাকবে ‘গোল্ডেন স্টাম্প’ পুরস্কার।’

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার এই পুরস্কার জিতে নিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দলের হয়ে ফিল্ডিংয়ে দারুণ দক্ষতা দেখানো এ ওপেনার নিজেও ফিল্ডিং কোচের এমন কৌশলে অভিভূত। ক্রিকবাজকে তিনি বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকবার ‘গোল্ডেন স্টাম্প’ পেয়েছি, সবচেয়ে বেশিবার আমিই পেয়েছি। ফিল্ডিংয়ের জন্য আমি বরাবরই আলাদা অনুশীলন করি। এতে করে নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়। ম্যাকডরমটের সেশনের কারণে এখন ম্যাচে যে কোনো ক্যাচকেই লুফে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে।’

শান্ত আরো যোগ করে বলেন, ‘দলে সবাই যার যার ভূমিকা নিয়ে খুব পরিষ্কার। কে, কখন, কোন সময়ে, কোথায় ফিল্ডিং করবে তা সম্পর্কে সবাই অবগত থাকে। আমরা কি রক্ষণাত্মক ফিল্ডিং করব নাকি আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং করব এটা বুঝতে শিখে গেছি। এর ফলে আমাদের গেম সেন্সের উন্নতি হয়েছে। আমরা এখন ব্যাটারের ধরন অনুযায়ী ফিল্ড প্লেসমেন্ট নিজেরাই করে ফেলি।’

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে লরকান টাকারের ক্যাচ ধরতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েছিলেন তামিম ইকবাল। যদিও সে ইনজুরি তেমন গুরুতর ছিল না ৷ পরের ইনিংসে শুরু থেকেই ব্যাট করেছিলেন এ ওপেনার। তবে সিনিয়রদের কাছ থেকে এমন প্রচেষ্টায় অভিভূত হয়েছেন শেন ম্যাকডরমেট। তাঁর মতে, ফিল্ডিংয়ে সামগ্রিক উন্নতি আনতে সবাইকেই সেরাটা দিতে হবে। 

এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ঐদিন তামিমের ঐ প্রচেষ্টাটাই একটা ইঙ্গিত। আমার কাছে মনে হয়, সিনিয়ররা যেভাবে উজাড় করে ফিল্ডিং করে তাতে দলের উপর তারা একটা ইতিবাচক বার্তাই পৌঁছে দেয় ৷ এই যেমন মুশফিকুর রহিম। অনুশীলনে তাঁর পরিশ্রম দেখলে আপনি অবাক হতে বাধ্য হবেন।’

তবে দেশের মাটিতে ফিল্ডিংয়ে সফল হলেও টাইগারদের জন্য এবার চ্যালেঞ্জ হয়ে আসছে চেমসফোর্ডে আইরিশদের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ। চ্যালেঞ্জ থাকছে ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডরমেটের উপরেও। 

কারণ ভিন্ন কন্ডিশনে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ কেমন করবে, তা অতীত অভিজ্ঞতায় এক ধরনের শঙ্কার বার্তাই দেয়। তবে গত এক বছরে যেভাবে এই ইউনিটে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে, তাতে চেমসফোর্ডে আইরিশ পরীক্ষাও ভালভাবেই উতরে যাওয়ার কথা টাইগারদের। আর ফিল্ডারদের এমন ধারাবাহিকতাতেই বদলে যাবে বাংলাদেশ। ঐ যে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতার পর সাকিব যেমনটা বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরাই এশিয়ার সেরা ফিল্ডিং সাইড’— সেই কথাটা আরেকটু পোক্ত হবে। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link