সুরিয়াকুমার যাদবের ‘সূর্য’ হয়ে ফেরা হয়েছে এই আইপিএল দিয়েই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নাম্বার ওয়ান ব্যাটারের ব্যাটে হঠাতই ছন্দচ্যূতি। তবে আশা ব্যাপার হলো, সেই দুঃসময়টা দীর্ঘ সময়কালে বন্দী হয়নি। সুরিয়াকুমার যাদব ফিরেছেন রাজকীয়ভাবেই। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে শেষ ৪ ম্যাচেই পেয়েছেন ৩ টি ফিফটি।
চেনা ছন্দের এই সুরিয়াকুমার নিজের দিনে যে কতটা জ্বলে উঠতে পারেন তার প্রমাণ মিলেছে শেষ কটা ম্যাচেই। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ২৬ বলে ৫৭ রানের ইনিংস স্বরূপে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এরপরের ম্যাচে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ১২ বলে ২৩ রানে ফিরেছিলেন। তারপরের দুটি ম্যাচে টানা দুটি ফিফটি। একটিতে ২৯ বলে ৫৫, আরেকটিতে ৩১ বলে ৬৬ রানের ইনিংস।
টানা ৪ ইনিংসে এমন দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে পুরনো আত্মবিশ্বাসের রসদ ফিরে পেতে তাই আর বেশি সময় লাগেনি সুরিয়ার। তবে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে এ ব্যাটারের ব্যাটিং দেখে, এক প্রকার অপ্রতিরোধ্যই মনে হয়েছে তাঁকে। পুরো ম্যাচে ফ্লিক শট খেলেছেন সাবলীল ভাবে। কাভার প্রান্ত দিয়েও বাউন্ডারি বের করেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। আবার এক্সট্রা কাভার, মিড উইকেটে সমানে শট খেলেছেন।
আর এতেই এ ম্যাচে পাঞ্জাবের বোলারদের প্লান এ, প্লান বি— কোনো পরিকল্পনায় ধোপে টিকেনি। সুরিয়ার ব্যাটিংয়ের সামনে সিংহভাগ বোলারই অসহআয় হয়ে পড়েছিলেন। আর পাঞ্জাবের ফিল্ডাররা ছিলেন নিরব দর্শকের ভূমিকায়।
নাথান এলিসের ১৪ তম ওভারের কথাই ধরা যাক। আগের ওভারেই কাভার প্রান্তের উপর দিয়ে ঠেলে ছক্কা তুলে নিয়েছেন সুরিয়াকুমার যাদব। তাই নাথান ইলিস এ ওভারে আউটসাইট অফ বরাবর স্লোয়ার দিলেন। এমন স্লোয়ারের যেকোনো ব্যাটারেরই প্রতিহত হওয়ার কথা। কিন্তু সুরিয়াকুমার বলটাকে স্কুপ করে স্কোয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে দুই রান তুলে নিলেন।
এরপরের বলে আবারো স্লোয়ার। এবার করলেন একদম স্ট্যাম্প বরাবর। কিন্তু সেই স্লোয়ার বলটিকেও সুরিয়াকুমার যাদব স্ট্রেইট ড্রাইভের মাধ্যমে চার তুলে নিলেন। নাথান এরিস এরপর আবারো প্লান এ তে ফিরে গেলেন। আউটসাইট অফ স্ট্যাম্প বরাবর স্লোয়ার। কিন্তু সেই আগের মতোই আবারো স্কুপ করে শর্ট ফাইন লেগে বল ঠেলে দিয়ে দুই রান তুলে নেন সুরিয়া।
মূলত সুরিয়া কুমার যাদব এখানেই অন্যান্য ব্যাটারদের চেয়ে এগিয়ে। যে বলগুলোতে রান বা বাউন্ডারি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে, সেখানে সুরিয়াকুমার যাদব বাউন্ডারি তুলে নেন একদম নিজস্ব ধরনে। এর আগে উইকেটের পিছনে বিহাইন্ড দ্য স্কোয়ারের এত সাবলীল ভাবে শট খেলতেন সম্ভবত শুধুই এ বি ডি ভিলিয়ার্স।
ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটিংয়ের ধরনের ছাপ রেখে সুরিয়াকুমার যাদব তাঁর ক্যারিয়ারের ৪৬ শতাংশ রানই করেছেন উইকেটের বিহাইন্ড দ্য স্কোয়ার প্রান্তে শট খেলে। আর এই প্রান্তে তিনি কতটা বিধ্বংসী, তার প্রমাণ মেলে বিহাইন্ড দ্য স্কোয়ারের তাঁর ২৩০ স্ট্রাইকরেটের ব্যাটিং।
এ ছাড়া প্রতি ২.৪ বলে এই প্রান্ত থেকে একটি বাউন্ডারি বের করেছেন সুরিয়াকুমার যাদব। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ম্যাচেও তিনি এই প্রান্তে ১৪ টি বলের প্রায় প্রত্যেকটি বলেই পেয়েছেন বাউন্ডারি। সুরিয়াকুমার যাদব শুধু এই প্রান্তেই শট খেলার ক্ষেত্রে দক্ষ, ব্যাপারটা এমন নয়। তিনি এক্সট্রা কাভার কিংবা মিড উইকেটেও দারুণ সব শট খেলে বাউন্ডারি বের করতে পারেন।
মোদ্দাকথা হলো, বল যে লেন্থেই হোক, সুরিয়ার হ্যান্ড আই কো-অর্ডিনেশন এতই চমৎকার যে, তিনি যে কোনো বল তৎক্ষণাৎ রিড করে শট খেলতে পারেন। এ কারণে ব্যাট হাতে ছন্দে থাকার দিনে সুরিয়াকুমার যাদবকে আটকানো বোলারদের জন্য বেশ দুঃসাধ্যকর কাজই হয়ে ওঠে। যেমনটি হয়েছিল পাঞ্জাবের বোলারদেরও। স্কোরবোর্ডে পাঞ্জাব ২১৪ রানের রানপাহাড়ে চড়লেও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস তা টপকে যায় সুরিয়াকুমার যাদবের ব্যাটিং আগ্রাসনে।
ক্রিকেটের বিবর্তনে কত কিছুই না পাল্টে গিয়েছে। টেকনিক্যাল অ্যানালিস্টের কল্যাণে প্রতিপক্ষের ব্যাটার কিংবা বোলারদের দুর্বলতা সম্পর্কে জানা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সুরিয়াকুমার যাদবেরও নিশ্চয়ই দুর্বল দিক রয়েছে। তবে তিনি যে ব্যাটিংয়ের নতুন এক সংজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত করতে চলেছেন, সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকার কথা নয়।