বর্তমানে বিশ্বের সেরা বোলারদের তালিকায় সবার উপরেই থাকবে আফগান লেগস্পিনার রশিদ খানের নাম। বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর নিয়মিত মুখ এই তারকা। এবারের আইপিএলেও রশিদ বল হাতে আলো ছড়াচ্ছেন আপন মহিমায়।
আফগানিস্তানকে বলা হয় লেগস্পিনারদের স্বর্গরাজ্য। গত কয়েক বছরে বিশ্ব ক্রিকেটে আলো ছড়িয়েছেন আফগান স্পিনাররা। তবে এই যাত্রাটা শুরুটা হয়েছিল রশিদ খানের হাত ধরেই। ছোটদের বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট, প্রতিটি জায়গাতেই রশিদের স্পিনে নাকাল হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা।
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে রশিদ যেন অপ্রতিরোধ্য। বিশ্বের প্রতিটি ফ্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেই রশিদকে দলে ভেড়াতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় দলগুলোকে। এই তারকাও অবশ্য ফ্যাঞ্চাইজিদের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন বল হাতে পারফর্ম করেই। বিশ্বের যেকোনো উইকেটেই রশিদের একাদশে থাকা যেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের জন্য দু:স্বপ্নের মতো।
অথচ দারুণ পারফর্ম করা সত্ত্বেও ক্যারিয়ারের বড় একটা সময়জুড়ে সমালোচনার শিকার হয়েছেন রশিদ। মাঠের পারফরম্যান্স নয়, বরং তাঁর বয়স নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসাহাসি হয়েছে বিস্তর। এই তারকা অবশ্য সেসবে পাত্তা দেননি, বরং বল হাতেই সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন।
সময় যত গড়িয়েছে, রশিদের বোলিংয়ের ধার তত বেড়েছে। একবার জানিয়েছিলেন একই সাথে সাত ধরনের বল নিয়ে কাজ করছেন। নিজেকে ছাপিয়ে যাবার তীব্র বাসনা আর অদম্য মানসিকতাই বিশ্বসেরা বোলারে পরিণত করেছে এই তারকাকে। এছাড়া ব্যাট হাতেও ইনিংসের শেষদিকে নেমে ম্যাচের চিত্রনাট্য পাল্টে দেবার ক্ষমতা রাখেন এই তারকা। প্রোটিয়া তারকা এবি ডি ভিলিয়ার্স তো রায়ই দিয়ে দিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা তারকা রশিদ খান।
আইপিএলে নিজের প্রথম মৌসুম থেকেই ব্যাটসম্যানদের জন্য ভীতি জাগানিয়া নাম তিনি। প্রতি মৌসুমেই সেরা বোলারদের তালিকায় উপরের দিকেই থাকে তাঁর নাম। নিজের প্রথম মৌসুমেই সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন রশিদ। তবে সেবারে রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাঁকে।
তবে আইপিএলে শিরোপার আক্ষেপ রশিদ মিটিয়েছেন গত মৌসুমেই। ১৬ কোটি রুপির বিশাল অংকের বিনিময়ে গুজরাট টাইটান্সে যোগ দিয়ে প্রথম মৌসুমেই শিরোপা জিতিয়েছেন দলকে। সেবারে ১৬ ম্যাচে সাড়ে ছয় ইকোনমিতে ১৯ উইকেট শিকার করেন এই তারকা।
এবারের মৌসুমেও দারুণ ফর্মে আছেন এই তারকা। এক ম্যাচে খারাপ করায় অবশ্য ফিসফাস শুরু হয়েছিল সংবাদ মাধ্যমে। কিন্তু দারুণভাবে ফিরে এসে রশিদ যেন বুঝিয়ে দিলেন হারিয়ে যাবার পাত্র তিনি নন। এবারের আইপিএলে ইতোমধ্যেই ১৮ উইকেট শিকার করে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় শীর্ষে আছেন এই তারকা।
সর্বশেষ ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটাররা যেন অসহায় আত্নসমর্পন করেছেন রশিদের স্পিনে। তাঁর গুগলি, ফ্লিপার কিংবা লেগস্পিনের কোনো জবাব ছিল না বাটলার-স্যামসনদের কাছে। রাজস্থানের মিডল অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়ে চার ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে তিন উইকেট শিকার করেন এই তারকা। তাঁর ২৪ বলে কোনো বাউন্ডারিই হাঁকাতে পারেনি প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা।
বছর শেষেই ভারতের মাটিতে বসবে বিশ্বকাপের আসর। রশিদ চাইবেন চেনা আঙ্গিনায় আইপিএলের ফর্মটা ধরে রেখে জাতীয় দলের জার্সিতেও আলো ছড়াতে।