বলা হয়ে থাকে, বড় মঞ্চেই বড় খেলোয়াড়দের জ্বলে উঠতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবালের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। বিশ্বকাপের আসরে কখনোই জ্বলে উঠতে পারেননি এ ব্যাটার। ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৯— টানা ৪ বিশ্বকাপের প্রত্যেকটিতেই বড় কিছু করার ক্ষুধা নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই ক্ষুধা মিটেছে কিঞ্চিৎ ভাগই। চার বিশ্বকাপেই মোটাদাগে ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের এ ওপেনার।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তামিমের ব্যাটিং গড়ের দিকেই তাঁকানো যাক। ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত এ ব্যাটার ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে ব্যাটিং করেছেন মাত্র ২৪.৭৬ গড়ে। ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে ন্যূনতম ১০০ বল খেলেছেন, এমন এশিয়ার ওপেনারদের মধ্যে যা তৃতীয় সর্বনিম্ন। ২০.৬২ গড় নিয়ে এই তালিকায় সবার নিচে রয়েছেন বাংলাদেশের আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার।
বিশ্বকাপে এমন বাজে ব্যাটিং গড়ের সাথে তামিমের যোগসূত্র হলেও তাঁর বিশ্বকাপ অভিষেক কিন্তু হয়েছিল দুর্দান্তভাবেই। ভারতের বিপক্ষে ২০০৭ বিশ্বকাপে এ ওপেনার ৫৩ বলে খেলেছিলেন ৫১ রানের ইনিংস। জহির খানের বল ডাউন দ্য উইকেটে এসে তাঁর সেই ছক্কা মারার দৃশ্য এখনও অনেকের চোখে ভাসে। কিন্তু সেই আগ্রাসী তামিমই পরবর্তীতে রক্ষণাত্বক খোলসে আটকে পড়েন। সেটার মাশুল তিনি দেন তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইক রেটে।
২০০৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের মঞ্চে এশিয়ার ওপেনারদের মধ্যে সবচেয়ে কম স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করার দিক দিয়ে তামিম ইকবাল রয়েছেন তিন নম্বরে। বাংলাদেশি ওপেনারদের মধ্যে ৭৩.১২ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা তামিমের চেয়ে পিছিয়ে আছেন শুধু ইমরুল কায়েস। বিশ্বকাপে তাঁর স্ট্রাইকরেট ৬৩.১৪!
বিশ্বকাপে তামিমের বিব্রতকর পরিসংখ্যানের এখানেই শেষ নয়। এখন পর্যন্ত ৪ বিশ্বকাপ মিলিয়ে ৯৮২ টি বল খেলেছেন এ ওপেনার। কিন্তু বিশ্বকাপের মঞ্চে একটিও শতক আসেনি তাঁর ব্যাট থেকে। আর এখানেই তাঁর সঙ্গী হয়েছেন আরেকটি বিব্রতকর রেকর্ডের। ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে ৯০০ বল খেলা ওপেনারদের মধ্যে তামিমই একমাত্র ব্যাটার, যিনি কোনো সেঞ্চুরি পাননি! একই ভাবে, ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে ৯০০ বল খেলা এশিয়ার ওপেনারদের মধ্যে সবচেয়ে কম অর্ধ-শতক এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে। বিশ্বকাপে খেলা ২৯ ম্যাচে এ ওপেনার সর্বসাকুল্যে ফিফটি পেয়েছেন ৪ টি ফিফটি।
বিশ্বকাপে সেঞ্চুরিহীন তামিমের গ্লানি বাড়াতে পারে আরেকটি পরিসংখ্যানে। সেটি হলো, এশিয়ার ওপেনারদের মধ্যে ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তামিমই সর্বোচ্চ ২৯ বার আউট হয়েছেন। তামিমের পর বিশ্বকাপের মঞ্চে উপুল থারাঙ্গা ১৮ বার, রোহিত শর্মা ১৫ বার, তিলকারত্নে দিলশান ১৪ বার আর মোহাম্মদ শেহজাদ ১২ বার আউট হয়েছেন।
আসন্ন ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবেন তামিম ইকবাল। এই বিশ্বকাপ দিয়েই রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস, অরবিন্দ ডা সিলভা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, ক্রিস গেইলদের পাশে নাম লেখাতে যাচ্ছেন তামিম ইকবাল। কারণ এই তালিকার সবাই ৫ টি করে বিশ্বকাপ আসরে অংশ নিয়েছেন। সর্বোচ্চ ৬ টি বিশ্বকাপ খেলেছেন শচীন টেন্ডুলকার আর জাভেদ মিয়াদাদ।
তামিম ইকবালের এখন যা বয়স তাতে বিশ্বকাপ খেলার দিক দিয়ে শচীন, জাভেদ মিয়াদাদের পাশেও নাম লেখানো তাঁর পক্ষে সম্ভব। তবে বিশ্বকাপ পরিসংখ্যান তো আর তাঁর হয়ে কথা বলে না। এত বাজে পরিসংখ্যান নিয়ে খুব সম্ভবত কোনো ক্রিকেটারই টানা ৫ টি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাননি।
তামিম পেয়েছেন, পাচ্ছেন। নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে এসে পাচ্ছেন নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগও। তবে সব কিছু ছাপিয়ে, এবারের বিশ্বকাপ তামিমের জন্য এক অগ্নি পরীক্ষার মঞ্চই হতে যাচ্ছে। এবার পা হড়কালে, বিশ্বকাপ তো বটেই বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়েও তামিমের দলে থাকাটাই পড়ে যাবে ঘোর অনিশ্চয়তায়। তামিম নিশ্চয়ই সেই অনিশ্চয়তার দোলাচলে ভাসতে চান না। নিশ্চিতভাবেই এবারের বিশ্বকাপটা রাঙানোর দিকে চোখ থাকবে বড় মঞ্চে ব্যর্থতায় ডুব দেওয়া এ ব্যাটারের। ব্যর্থতাকে সফলতায় ঢাকতে কেই-বা চান না!